হাসিমারা: চা বাগানের ঝোপের কোথাও পড়ে ছিল মাথার খুলি। কোথাও আবার পায়ের হাড়, বুকের পাঁজর। হাত ও পায়ের হাড়গোড়ের কিছু অংশ আবার নিকাশিনালার ভেতরে পড়ে ছিল। শনিবার দুপুরে এমন হাড়হিম করা দৃশ্য দেখে চমকে উঠেছিলেন বিচ চা বাগানের আউট ডিভিশনের শ্রমিকরা। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, কঙ্কালটি একটি ৫-৬ বছরের ছেলে মানবশিশুর। হাসিমারা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা হাড়, খুলি উদ্ধার করে।
যেভাবে শিশুর শরীরের হাড়গোড় ছড়িয়ে পড়েছিল তাতে পুলিশের ধারণা, কোনও বন্যপ্রাণীর হামলায় শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। এলাকাটি নির্জন, ফলে শিশুটির দেহাংশ ওই এলাকায় কীভাবে এল, তা নিয়ে ধন্দে পুলিশ। হাসিমারা ফাঁড়ির পুলিশ জানিয়েছে, দেহাংশ ময়নাতদন্তের জন্য রবিবার কোচবিহার জেলা হাসপাতালে পাঠানো হবে।
কী ঘটেছিল এদিন? বিচ চা বাগানের আউট ডিভিশনের ৬ বি সেকশনে এদিন দুপুরে শ্রমিকরা চা পাতা তুলতে আসেন। মাঝে শুখা মরশুম ছিল। তার ওপর কয়েকদিন বাগান বন্ধ ছিল। সেজন্য ওই এলাকায় সম্প্রতি চা পাতা তুলতে আসেননি শ্রমিকরা। তাঁদেরই মধ্যে একজন বলেন, ‘একটা ঝোপে খুলি দেখলাম। কিছুটা দূরে আবার পাঁজর পড়েছিল। মাঝের কয়েকদিন বাগানে আসিনি। মনে হচ্ছে, এই কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ঘটনাটি ঘটেছে।’
এদিকে, হাসিমারা ফাঁড়িতে সম্প্রতি ওই চা বাগান থেকে কোনও শিশু নিখোঁজ হওয়ার ডায়েরি জমা পড়েনি। তাই শিশুটি বিচ চা বাগানের নয় বলে মনে করছেন তদন্তকারী অফিসাররা। শিশুটির হাড়গোড়ের অদূরে এক জোড়া জুতো ও একটি থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট উদ্ধার করেছে পুলিশ। সম্ভবত জুতো ও প্যান্টটি শিশুটির পরনে ছিল। পুলিশ ইতিমধ্যে বিভিন্ন থানায় শিশু নিখোঁজ হয়েছে কি না, তার খোঁজ নিতে শুরু করেছে। কিন্তু কোনও খবর মেলেনি। আবার এমনটাও হতে পারে, অন্য কোনও এলাকায় শিশুটিকে খুন করে নির্জন চা বাগানে তার দেহ ফেলে রাখা হয়েছে। চা বাগানে চিতাবাঘের আনাগোনা রয়েছে। পরে হয়তো চিতাবাঘ শিশুর দেহ খুবলে খেয়েছে। যে এলাকায় শিশুটির দেহাংশ পাওয়া গিয়েছে, তার থেকে অনেকটা দূরে চা বাগানের শ্রমিকদের বস্তি। যদি সেখান থেকে শিশুটিকে চিতাবাঘ বা অন্য কোনও বন্যপ্রাণী টেনে নিয়ে আসত, তাহলে কারও না কারও চোখে অবশ্যই পড়ত। এক্ষেত্রে তেমন কিছু হয়নি। আবার যে অবস্থায় শিশুটির প্যান্ট ও জুতো পড়ে ছিল, তাতে বন্যপ্রাণী শিশুটির মৃত্যুর আগে বা পরে তার ওপর হামলা চালিয়েছিল কি না, সেই বিষয়ে পুলিশ অনেকটাই নিশ্চিত। যদিও শিশুটির মৃত্যুর প্রকৃত কারণ ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে জানা যাবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর এলাকা থেকে শ্রমিকদের সরিয়ে দেয়।