বালুরঘাট: গত ১৫ বছরে পরিবর্তন হয়নি ফিল্টারের। এদিকে বাড়ি বাড়ি জলের লাইন দিয়েছে পুরসভা। বর্তমানে ঘোলা জলই ভরসা বাসিন্দাদের। বাড়িতে জলের সংযোগ নিয়ে এমন নিম্নমানের জল পাওয়ার ফলে বিরক্ত হয়ে উঠছেন বাসিন্দারা। সাহেব কাছারি হাটখোলা এলাকায় রয়েছে বালুরঘাট পুরসভার তরফে বসানো বিশাল জলের ট্যাংক। নিয়ম মেনে নীল-সাদা রং করা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু নিয়মিত এই ট্যাংক পরিষ্কার করা হয় না বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। যদিও পুরসভার তরফে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে বালুরঘাট পুরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে জলের লাইন পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছে পুরসভা। ইতিমধ্যেই অধিকাংশ ওয়ার্ডে এই কাজ শেষ করা হয়েছে। যদিও ১৩, ১৪ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ড আত্রেয়ী নদীর ওপারে থাকায় এখনও এই তিনটি ওয়ার্ডে জলের সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। তবে ২৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে বাকি ওয়ার্ডগুলোতে জলের লাইন দেওয়া হয়েছে। সাহেব কাছারি পাড়াতেও সিংহভাগ বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছে পুরসভার জলের লাইন। কিন্তু বেঁধে দেওয়া সময়ে মধ্যে যখন জল আসছে, বেশিরভাগ সময় ঘোলা জল বেরচ্ছে। এমনকি সেই জলে দুর্গন্ধ রয়েছে বলে অভিযোগ। সেই এলাকাতেই কয়েক বছর আগে এই জলের ট্যাংক তৈরি করা হয়েছিল। যেখানে বাড়ি বাড়ি জল সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণের জল সংরক্ষণ করে রাখা হয়। কিন্তু সেই ট্যাংক নিয়মিত পরিষ্কার না করার ফলে অপরিষ্কার জল বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাচ্ছে। এর ফলে ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছেন বাসিন্দারা। এই ট্যাংকের পাশেই রয়েছে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরের তরফে বসানো জলের ট্যাংক। যা দিয়ে রাস্তার পাশের ট্যাপকলের জল সরবরাহ করা হয়। এই ট্যাংক পরিষ্কার করতে দেখা গেলেও পুরসভার জলের ট্যাংক পরিষ্কার করতে দেখা যায় না বলে বাসিন্দারা জানিয়েছেন। অন্যদিকে, গত ১৫ বছরের ব্যবধানে জলের ফিল্টারগুলোর পরিবর্তনের কোনও কাজ হয়নি। ফিল্টারগুলো প্রায় অকেজো হয়ে রয়েছে। তাই ঘোলা জল বের হচ্ছে। পুজোর পরেই এই বিষয়ে উদ্যোগ নেবে বলে পুরসভা জানিয়েছে।
অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী কাঞ্চন সাহার অভিযোগ, ‘জলের সংযোগ নেওয়ার প্রথম পর্যায়ে পরিষ্কার জল পাচ্ছিলাম। কিন্তু এখন ঘোলা জল বের হচ্ছে। সেই জল কোনও কাজেই ব্যবহারের উপযোগী নয়। ওই ঘোলা জল খেলে অসুস্থ হওয়া থেকে কেউ আটকাতে পারবে না। পুরসভার জলের ট্যাংক বসানোর পর থেকে তা পরিষ্কার করতে দেখা যায়নি। সাধারণ মানুষের করের টাকায় জনসেবার জন্য প্রচুর অর্থ বরাদ্দ করা হয়। এত টাকা যখন খরচ করা হয়েছে। তার নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা উচিত।’
সাহেব কাছারির বাসিন্দা পুষ্পেন্দু রায়ের কথায়, ‘দিনের শুরুতে কখনও ভালো জল বের হয়। তারপরে একদম ঘোলা জল বের হচ্ছে। যার ফলে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছি। চারিদিকে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে। সেখানে যে জিনিসের কোনও বিকল্প নেই। সেই জলের প্রতি আরও সজাগ দৃষ্টি দেওয়া উচিত। কারণ এখন বেশিরভাগ মানুষই বাড়িতে পুরসভার জল নিয়েছেন। এখন যদি এই জল ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে ওঠে। তাহলে এর চেয়ে হতাশার কিছু নেই।’
যদিও জলের ট্যাংক নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না, এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বালুরঘাট পুরসভার এমসিআইসি বিপুল কান্তি ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘আগে জলের ট্যাংক ছয় মাস অন্তর পরিষ্কার করলে হয়ে যেত। কিন্তু ফিল্টার খারাপ হয়ে যাওয়ায় প্রায় তিন মাসের মধ্যেই জল আবার ঘোলা হয়ে যাচ্ছে। গত ১৫ বছরে ফিল্টারগুলো বদলানো হয়নি। এগুলির দাম প্রায় ১১-১২ লক্ষ টাকা। শহরের শিবতলী, উত্তমাশা, সাহেব কাছারি এলাকায় জলের ট্যাংকগুলো রয়েছে। পুজোর পরেই ওয়াটার ট্রিটমেন্টের অর্থ বরাদ্দ পেলেই কাজে হাত লাগানো হবে।’