নাগরাকাটাঃ পাহাড় মানে সুগন্ধী চায়ের মৌতাত। আবার শীতের রসালো কমলা লেবুও। একটা সময় ভালোই হতো। নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ধীরে ধীরে তা হারিয়ে যেতে থাকে। এবারে কমলা চাষে কালিম্পং এর হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। হর্টিকালচার দপ্তর ও জিটিএ যৌথভাবে একাজে এগিয়ে এসেছে। এই জেলার ৪ টি ব্লক মিলিয়ে ২০ হাজার কমলা চারা বিতরণের কর্মসূচী হাতে নেওয়া হয়েছে।
গত শুক্রবার কালিম্পং এর সবচেয়ে উঁচু স্থান হিসেবে পরিচিত গরুবাথান ব্লকের তোদে-তাংদা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার শতাধিক চাষীর হাতে কমলা চারা তুলে দেওয়ার মাধ্যমে প্রকল্পটি শুরু হল। আগামী ১ ও ৩ অগাস্ট অন্যান্য ব্লকের চাষীদের হাতেও চারা তুলে দেওয়া হবে। এদিনের কর্মসূচীতে ছিলেন তোদে-তাংদা এলাকা থেকে নির্বাচিত জিটিএ সদস্য ( ৪৫ নম্বর সমষ্টি) লাকপা নামগেল ভুটিয়া, জেলা হর্টিকালচার আধিকারিক (ডিএইচও) সঞ্জয় দত্ত সহ আরও অনেকে। ডিএইচও সঞ্জয় দত্ত বলেন, দার্জিলিং এর পাহাড়ের মতো কালিম্পং জেলাতেও কমলা চাষে সাফল্যের সম্ভাবনা অপার। একটা সময় এখানকার বিভিন্ন স্থানে প্রচুর কমলা ফলতো। রোগের আক্রমণের কারনে তা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। এবারে নতুন উদ্যমে ফের কমলাকে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এজন্য দার্জিলিং এর ম্যান্ডারিন প্রজাতির উন্নতমানের কমলা চারা বিতরন করা হচ্ছে।
এদিকে হর্টিকালচার দপ্তরের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব ডঃ সুব্রত গুপ্ত গত বৃহস্পতিবার কালিম্পং এক নম্বর ব্লকের পুডুং এ এসেছিলেন। সেখানে ডু ইট ইয়োরসেল্ফ প্রকল্পের মাধ্যমে স্থানীয়দের দেওযা পলিহাউসের চাষাবাদ তিনি সরেজমিনে দেখে যান। পুদুং এর চাষীরা পলি হাউসে ক্যাকটাস, অর্কিড, মানি প্ল্যান্ট সহ নানা ধরনের অর্নামেন্টাল গাছের চাষে নেমেছেন। বেড়াতে আসা পর্যটকরা সরাসরি পলি হাউসের নার্সারি থেকে তা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এর বাইরে হোটেল, শপিং মল, রেস্তোরা, ফ্ল্যাটেও কালিম্পং এর অর্নামেন্টাল গাছের চাহিদা এখন ব্যাপক। অতিরিক্ত মুখ্য সচিবের কাছে স্থানীয় চাষীরা আরো পলি হাউস দেওয়ার অনুরোধ জানান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রেই জানা গেছে কমলার পাশাপাশি আরো ৫ ধরনের ফলকে হাতিয়ার করে কালিম্পং এর চাষবাসে নতুন দিগন্তের উন্মেষ ঘটাতে চাইছে হর্টিকালচার দপ্তর ও জিটিএ। এজন্য বেঁছে নেওয়া হয়েছে লেবু, পেয়ারা, টিস্যু কালচারজাত কলা, পেঁপে ও অ্যাভাগাডোকে। সব মিলিয়ে মোট ২ লক্ষ ২৪ হাজার ফলের চারা বিতরণ করা হবে। কলা, পেঁপে ও অ্যাভাগাডোর চারা অগাস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে দেওয়া হবে।
তোদে-তাংদা এলাকার চাষীদের এদিন কমলার পাশাপাশি পলি হাউসও দেওয়া হয়েছে। মোট ৮৩ জন এবারে সেখানে অসময়ের নানা ধরনের শাক সবজি সহ লিলিয়াম, জারবেরার মতো দামী ফুল চাষে নামছেন। চলতি আর্থিক বর্ষে জেলার কালিম্পং এক, লাভা-আলগাড়া, পেদং ও গোরুবাথান এই ৪ ব্লক মিলিয়ে ১০২৪ জনকে পলি হাউসে চাষের আওতায় আনা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ৯২৪ জনকে দেওয়া হয়ে গেছে। গত অর্থ বর্ষে দেওয়া হয়েছিল ৭৩৬ জনকে।
কমলা চাষের মানচিত্রে কালিম্পং কে নতুন করে তুলে ধরার প্রয়াসের পেছনে রয়েছে সেখানকার অনুকূল জলবায়ু। জেলার কমলা গোলা হিসেবে পরিচিত গরুবাথান ব্লকের তোদে-তাংদা, ছোটা সুন্তালে, সুন্তালেবাড়ি, কালীখোলা, পেদং, অম্বিয়কের মতো বিস্তীর্ণ এলাকায় একটা সময় শীতের ওই ফলের চাষ হত। তোদে-তাংদা এলাকার কমলা লেবুর সঙ্গে মিরিক কিংবা কার্সিয়াং এর সিটং এর কমলার খুব একটা পার্থক্য নেই বলেও অনেকে জানাচ্ছেন। সাইট্রাস ড্রাইব্যাক নামে ভাইরাস ঘটিত একপ্রকার রোগের আক্রমণে বর্তমানে সেখানে ওই চাষ কার্যত বিলুপ্তির পথে। এবারে হর্টিকালচার দপ্তরের উদ্যোগে ও পরামর্শে নতুন করে কমলা বিপ্লবের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন পাহাড়ি জেলাটির কয়েক হাজার বাসিন্দা।