প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লিঃ ৩ অক্টোবর একপ্রস্ত সমন জারি করেছিল ইডি। নয়াদিল্লিতে পূর্বনির্ধারিত দলীয় কর্মসূচির জন্য তা এড়িয়ে গেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের ‘সেনাপতি’। মঙ্গলবার রাতে কৃষি ভবন পর্ব মিটতেই তড়িঘড়ি আগামী ৯ অক্টোবর তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নতুন করে তলব পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। পাশাপাশি তাঁর স্ত্রী এবং মা-বাবাকেও ইডির জেরার জন্য পাঠানো হয়েছে সমন। যে মুহূর্তে অভিষেককে পুনরায় তলব এবং দীর্ঘ জেরা প্রক্রিয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা, সেই মুহূর্তেই অভিষেকের সমর্থনে সরব হয়েছে বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ শিবির।
প্রসঙ্গত, মনরেগা এবং প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বকেয়া টাকা প্রদানের দাবি তুলে যেভাবে রাজধানী দিল্লির রাস্তায় কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে পরপর দুদিন দাপিয়ে আন্দোলন করেছে তৃণমূল কংগ্রেস, তা দেখার পরে ঘাসফুল শিবির তো বটেই, প্রবল উজ্জীবিত ইন্ডিয়া জোটের অন্যান্য শরিকরাও৷ আগামী দিনে মোদি সরকারকে কেন্দ্র থেকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্যে একত্রিত হওয়া ২৮টি বিরোধী দলের জোট ‘ইন্ডিয়া’ নিজেদের মধ্যে লোকসভার আসন ভাগাভাগির আলোচনা শুরু করে দিয়েছে৷ সার্বিক ভাবে কেন্দ্রীয় সরকার বিরোধী লড়াইয়ের চূড়ান্ত পর্যায়ে পা রাখার গুরুত্বপূর্ণ সময়েই রাজধানী দিল্লির বুকে তৃণমূল কংগ্রেসের আয়োজিত ধরনা কর্মসূচির সাফল্য আখেরে গোটা ইন্ডিয়া জোটের পালেই বাড়তি হাওয়া দেবে, এমনই দাবি জোট শিবির সূত্রে৷
উল্লেখ্য, দিল্লিতে বিক্ষোভ কর্মসূচির জন্য পা রাখার পরেই অভিষেককে অগুণতিবার যে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে, তা হল তৃণমূল কংগ্রেসের এই বিক্ষোভ সমাবেশে কি ইন্ডিয়া জোটের শরিকরাও আমন্ত্রিত? প্রশ্নের জবাবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, সংশ্লিষ্ট বিষয়টি একান্তভাবে রাজ্যের এক্তিয়ারাধীন। বিষয়টি তৃণমূল সরকারের নিজস্ব৷ সে প্রেক্ষিতে আলাদা করে ইন্ডিয়া জোটের কোনও শরিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তবে অভিষেক এও বলেন, ভবিষ্যতে বৃহত্তর আন্দোলনের স্বার্থে অবশ্যই ইন্ডিয়া জোটের সদস্যরা একজোটে কাজ করবে।
এই বক্তব্যের সূত্র ধরেই মঙ্গলবার রাতে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতি মন্ত্রী স্বাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতির সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য কৃষি ভবনে ধরনারত তৃণমূল সাংসদ, নেতা, রাজ্যের মন্ত্রীদের যখন জোর করে বাসে উঠিয়ে কিংসওয়ে ক্যাম্পে নিয়ে যাচ্ছিল দিল্লি পুলিশ সেই সময়েই টিভির পর্দায় সাংসদদের টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখে সংবাদ মাধ্যমে প্রথম প্রতিক্রিয়া জানান বিহারের উপ মুখ্যমন্ত্রী, আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব৷
অভিষেক সহ গোটা তৃণমূল শিবিরকে সমর্থন করে তেজস্বী বলেন, ‘সত্যি কথা বললেই মোদি সরকারের নিশানায় পড়তে হবে, এটা বারবার হচ্ছে৷ জনতার কথা বললেই কেন্দ্রীয় সরকার নিশানা করছে৷ এর পরেও আমাদের থামানো যাবে না৷’ শরদ পাওয়ার কন্যা, এনসিপি সাংসদ সুপ্রিয়া সুলের মতে, ‘অত্যন্ত অপমানজনক ঘটনা৷ পশ্চিমবঙ্গের সাংসদ, জনপ্রতিনিধিদের যেভাবে কৃষি ভবন থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে আটক করা হয়েছে তাতে একটি বিষয় স্পষ্ট গোটা ঘটনার পিছনে কোনও একজনের অদৃশ্য হাত আছে৷ এই সরকার যেভাবে সাংসদদের কথা বলার সুযোগ দেয়নি, তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে তা খুবই দু:খজনক৷ এটা আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় একটা কলঙ্কজনক অধ্যায়৷’ ডিএমকে সাংসদ টি আর বালু জানান, ‘চরম অগণতান্ত্রিক আচরণ কেন্দ্রীয় সরকারের। ইচ্ছা করে প্রতিহিংসামূলক রাজনীতি করছে মোদি সরকার। এই ঔদ্ধত্যের জবাব তারা পাবেই।’