কামাখ্যাগুড়িঃ বাবা ফেরিওয়ালা। সংসারে অভাব নিত্য সঙ্গী। নিজে এবং দাদা সংসারের অভাব মেটাতেই দুজনেই পরিযায়ী শ্রমিক। কিন্তু সমাজের জন্য মানুষের জন্য কাজ করা তাঁর নেশা। কামাখ্যাগুড়ি ভলান্টিয়ার অর্গানাইজেশন নামে একটি সংস্থায় যুক্ত হয়ে প্রতিনিয়ত সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে শামিল রাখেন কামাখ্যাগুড়ি চড়কতলা এলাকার যুবক উত্তম বর্মন। রক্তদানে মানুষ কে উদ্বুদ্ধ করারও কাজ করেন তিনি। কিন্তু রক্তদান করতে অনেকেরই অনীহা রয়েছে, অনেকের মনে ভয়ও কাজ করে। এছাড়া পরিবেশ দূষণ সমাজের একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেটা অনুধাবন করেই উত্তম ঠিক করেন সাইকেলে করে সারা ভারতবর্ষ ভ্রমণ করে মানুষকে রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করবেন। সেকারণে ভুটানে শ্রমিকের কাজ করে টাকা জমিয়ে গত ডিসেম্বর মাসেই বাড়ি চলে আসেন তিনি।
গত ২৫ ডিসেম্বর বাড়ি থেকে বের হয় উত্তম। টানা ১৭৫ দিনে ১৭ হাজার কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে সারা ভারত ভ্রমণ করে রক্তদানের প্রয়োজনীয়তা এবং দূষণমুক্ত পৃথিবী গড়ার বার্তা ছড়িয়ে দেন তিনি। শুক্রবার বাড়িতে ফেরেন তিনি। সেদিন তাকে স্বাগত জানান কামাখ্যাগুড়ির মানুষ। কামাখ্যাগুড়ি ভলান্টিয়ার অর্গানাইজেশনের পক্ষ থেকে কামাখ্যাগুড়ি চৌপথিতে তাকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। উত্তমের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন কামাখ্যাগুড়ি মানুষ।
কামাখ্যাগুড়ি ভলান্টিয়ার অর্গানাইজেশনের সম্পাদক উদয় শঙ্কর দেবনাথ জানান, “আমাদের সংগঠনের একজন সক্রিয় সদস্য উত্তম বর্মন। তিনি আমাদের প্রতিটি কর্মকাণ্ডে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন। আমরা সারা বছর মানুষের জন্য কাজ করি। এছাড়া রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করার কাজও আমরা নিয়মিত ভাবে করি। উত্তম আমাদেরকে প্রস্তাব দেয় সে সাইকেলে করে ভারত ভ্রমন করে রক্তদানের উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি দূষণমুক্ত পৃথিবী গড়ার বার্তা ছড়িয়ে দেবেন। আমরা তাঁকে উৎসাহ দেই। এরপরেই উত্তম গত বছর ডিসেম্বর মাসে এই পরিক্রমা শুরু করেন। তাঁর এই কর্মকাণ্ডকে আমরা কুর্নিশ জানাচ্ছি।”
উত্তম জানান, “সমাজের জন্য মানুষের জন্য কাজ করতে গেলে কোনও বাধাই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। সমাজের সর্বস্তরের মানুষ, পুলিশ প্রশাসন আমার এই কর্মকাণ্ডকে সফল করার জন্য ভীষণভাবে সহযোগিতা করেছে। তাঁদের সহযোগিতা ছাড়া এই ভারত ভ্রমণ আমার পক্ষে সম্ভব হত না। সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সারা ভারতবর্ষ ঘুরে মানুষকে রক্তদান এবং পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন করেছি। কিছু মানুষও যদি রক্তদানে এগিয়ে আসে তবে আমার এই উদ্যোগ সফল।”