অরুণ ঝা, ইসলামপুর: ইসলামপুর মহকুমা হাসপাতালে (Islampur Sub- Division Hospital) আয়াদের দাপট ক্রমশ বেড়েই চলেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে রোগী ও তাঁদের পরিজনরা যেমন ক্ষুব্ধ, তেমন নিজেদের বিরক্তির কথা শোনা গেল হাসপাতালের কর্তাদের গলাতেও। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার উদ্দেশ্যে সাতদিনের মধ্যে সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড ঝোলানো হবে বলে জানিয়েছেন সহকারী সুপার ডাঃ সন্দীপন মুখোপাধ্যায়।
হাসপাতালের বাইরে দাঁড়িয়ে ইসলামপুর (Islampur) ব্লকের ভুজাগাঁর বাসিন্দা শাহ জামালুদ্দিন বলছিলেন, ‘আমার শাশুড়ি আয়েশা খাতুন হাসপাতালে ভর্তি। ভালোমতো দেখভালের জন্য আয়া নিয়োগ করেছি। চিকিৎসক সিটি স্ক্যান করাতে বলেছেন। সেটা হাসপাতালেই হবে। সিটি স্ক্যানের জন্য নির্দিষ্ট ঘর পর্যন্ত নিয়ে যেতে আয়া আমার কাছে অতিরিক্ত ২০০ টাকা চেয়েছেন। দিনের পর দিন এভাবেই গরিব মানুষকে লুট করা হচ্ছে।’
আয়াদের আড়ালে হাসপাতালে দালালচক্রের দৌরাত্ম্যের বিষয়টি কর্তৃপক্ষের একাংশ স্বীকার করে নিয়েছে। হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা ইসলামপুরের পুর চেয়ারম্যান কানাইয়ালাল আগরওয়াল বলেছেন, ‘আয়ামাসিদের হাসপাতালে থাকা আইনত বৈধ নয়। এধরনের কার্যকলাপ রুখতে রোগীকল্যাণ সমিতির বৈঠকে কড়া সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, ইতিমধ্যে এই ইস্যুতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
অভিযোগ, একজন আয়া একসঙ্গে একাধিক রোগীর দেখভালের দায়িত্ব নিয়ে ফেলছেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শুশ্রূষায় ত্রুটি থেকে যাচ্ছে বলে দাবি সাধারণ মানুষের। চুক্তি মোতাবেক টাকা নেওয়ার পাশাপাশি ছুটির সময় রোগীর পরিবারের কাছ থেকে বকশিশ দাবি করে বসছেন তাঁরা। জোরাজুরি, দরদাম চলছে সেই নিয়ে। জরুরি বিভাগে ওঁত পেতে থাকছেন অধিকাংশ আয়া। সেখান থেকেই রোগীর ‘দখল’ নিতে শুরু হয় রীতিমতো টানাটানি।
এই সুযোগে নার্সদের একটা বড় অংশ অক্সিজেন, স্যালাইনের চ্যানেল করার জন্য আয়াদের ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ উঠছে। এছাড়া বিভিন্ন প্যাথলজিকাল ল্যাব, নার্সিংহোম, আল্ট্রাসনোগ্রাফি সেন্টারের সঙ্গে এঁদের যোগাযোগ রয়েছে। রোগীপ্রতি কমিশন পাচ্ছেন আয়াদের অধিকাংশ। কোন দোকান থেকে ওষুধ কেনা হবে, সেটাও নাকি ঠিক করে দিচ্ছেন তাঁরা। বিনিময়ে মিলছে নগদ কমিশন।
গাইনিকলজি বিভাগ সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালে অনেকদিন আগেই স্থানান্তরিত হয়েছিল। সেখানে অবশ্য আয়াদের দৌরাত্ম্য নেই বললেই চলে। যদিও রোগীর পরিজনদের ফুসলিয়ে কয়েকজন সেখানেও পসার জমানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন মাঝেমধ্যে। কর্তৃপক্ষের নজরে এলে অবশ্য তড়িঘড়ি বের করে দেওয়া হয়। কিন্তু মহকুমা হাসপাতালে তাঁদের রমরমা কারবার।
খবরগাঁ রহটপুরের বাসিন্দা জিতু প্রামাণিকের অভিজ্ঞতা, ‘আমার স্ত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মহিলা বিভাগে আমি থাকতে পারব না বলে একজন আয়া রেখেছি। ২৪ ঘণ্টার চার্জ ৬০০ টাকা। রোগীকে দেখাশোনা করার জন্য যদি সরকারি হাসপাতালেও মোটা টাকা গুনতে হয়, তাহলে আমরা যাব কোথায়?’
জনসাধারণের প্রশ্ন, ‘কর্তৃপক্ষ আইনবিরুদ্ধ কাজকর্ম দেখেও নীরব কেন? শেষপর্যন্ত আদৌ কি কোনও পদক্ষেপ করা হবে?’ এপ্রসঙ্গে সহকারী সুপার বলেন, ‘রোগীকল্যাণ সমিতি সহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আয়াদের হাসপাতালে ঢোকা বন্ধ করতে আমরা লিখিতভাবে আবেদন জানিয়েছি। তারা নিশ্চয়ই পদক্ষেপ করবে। হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে আয়াদের সঙ্গে হাসপাতাল প্রশাসনের কোনও সম্পর্ক নেই এবং যাঁরা তাঁদের নিয়োগ করবেন, নিজ দায়িত্বে করবেন, এই মর্মে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হবে। আমরা পুরো বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন।’