বিশ্বজিৎ সরকার, রায়গঞ্জ: গায়ে হলুদ মেখে বসে পাত্র। পাশে বসে ভাই। বিয়ে করতে যাওয়ার প্রস্তুতিও প্রায় সারা। ঠিক তখনই বিনা মেঘে বজ্রপাত। আসরে প্রবেশ পুলিশের। বিয়েবাড়ি থেকে পাত্রের ভাইকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেল ইটাহার থানার (Itahar Police) পুলিশ। মুহূর্তে বিবর্ণ বিয়ের আনন্দ আয়োজন। থমকে গেল সানাইয়ের সুর। মাথায় হাত বর, এমনকি কনের বাড়ির লোকদেরও। সোমবার এই ঘটনায় শোরগোল পড়ে যায় গোটা ইটাহারে (Itahar)। মঙ্গলবার ধৃতকে আদালতে পেশ করা হয়েছে।
পাত্রের ভাইয়ের নাম নাজিব শেখ (২৫)। বাড়ি ইটাহার থানার কাপাসিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বাঙ্গার চেকপোস্ট এলাকায়। পুলিশ সূত্রে খবর, কয়েক বছর আগে মারপিটের ঘটনায় পরিবারের আরও অনেকের সঙ্গে নাজিবের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির নির্দিষ্ট ধারায় ইটাহার থামায় মামলা রুজু হয়েছিল। সেই পুরোনো মামলায় পরিবারের সবাই আদালত থেকে জামিন নিলেও নাজিব ভিনরাজ্যে শ্রমিকের কাজে কর্মরত থাকায় তার জামিন নেওয়া হয়নি। গতকাল গভীর রাতে বিয়েবাড়ি থেকে তাকে গায়ে হলুদ, হাতে মেহেন্দি অবস্থায় গ্রেপ্তার করে ইটাহার থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গতকাল নাজিবের দাদা নইমুদ্দিনের সঙ্গে পাশের গ্রামের পাত্রী মাসুদা খাতুনের হওয়ার কথা ছিল। দুপুরে ছিল বিয়ের লগ্ন। সেইমতো গতকাল সকাল থেকে গায়ে হলুদ নিয়ে হুল্লোড়ে মেতে উঠেছিল দুই পরিবার। প্রথা মেনে বরের গায়ে হলুদ সম্পূর্ণ হলে বিয়ের তত্ত্ব যাবে কনের বাড়িতে। থাকবে হলুদ, তেল, সর্ষে, শাড়ি এবং প্রসাধনী। তত্ত্ব সাজিয়ে কনের বাড়িতে যাওয়ার কথা পাত্রের ভাই সহ দু’জনের। সানাইয়ের সুর, আতরের গন্ধে ম ম করছিল দুই বাড়িই। এমন সময় হঠাৎ পাত্রের বাড়িতে হাজির ইটাহার থানার পুলিশ। বিয়ে বন্ধ করে পরিবারের লোকেরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন ছেলেকে পুলিশের হাত থেকে ছাড়াতে।
ধৃতের বাবা সোলেমান শেখ বলেন, ‘পুলিশকর্মীদের বারবার অনুরোধ করা হলেও কথা শোনেননি। ছেলের বিয়ে হয়ে গেলে বুধবার ইটাহার থানায় ছেলের আত্মসমর্পণের কথাও বলা হয়। কিন্তু তাও কাজ হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে বিয়ে বন্ধ করে আদালতে ছেলেকে ছাড়তে এসেছি।’ এদিকে, পাত্র নইমুদ্দিন শেখ বলেন, ‘ভাই ছাড়া না পেলে বিয়ে করার কথা ভাবতে পারি না। তাই আপাতত বিয়ে বন্ধ রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে তারিখ ঠিক করে বিয়ে হবে।’
রায়গঞ্জ সিজেএম কোর্টের সরকারি আইনজীবী পিন্টু ঘোষ বলেন, ‘ধৃতের বিরুদ্ধে পুরোনো মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল আদালত। সেই মোতাবেক ইটাহার থানার পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে।’