আলিপুরদুয়ার: সব বাড়িতে নল দিয়ে জল পৌঁছে দেওয়া হবে। ২০২৪ সালের আগেই এই কাজ নাকি সম্পূর্ণ হবে রাজ্যজুড়ে। আলিপুরদুয়ার জেলাতেও বেশ কয়েকটি প্রোজেক্ট শুরু হয়েছে জেলার সব বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছে দেওয়ার জন্য। জনস্বাস্থ্য দপ্তরের মন্ত্রী থেকে বিভিন্ন আধিকারিকরা আগেই জেলায় এসে জলস্বপ্ন প্রকল্পের কাজের খোঁজ এমনকি রিভিউ মিটিং করে গিয়েছেন। সেই প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নে এবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরের পাশাপাশি পুলিশের মাধ্যমেও খোঁজখবর নিচ্ছে নবান্ন।
সম্প্রতি এই বিষয়টি নজরে এসেছে আলিপুরদুয়ার জেলায়। জেলা পুলিশের বিভিন্ন পুলিশকর্মীদের কাছে জলস্বপ্ন প্রকল্পের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে চা বাগানে। জেলার কোন চা বাগানে জলস্বপ্নের কাজের অগ্রগতি কি সেই নিয়ে সরজমিনে গিয়ে পুলিশকর্মীদের তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। এবিষয়ে জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘এটা আমাদের রুটিন কাজের মধ্যে একটা কাজ। বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে পাঠাতে হবে।’ আরেক পুলিশ কর্তা জানান, জলস্বপ্ন প্রকল্প নিয়ে আগে এই রকম রিপোর্ট চাওয়া হয়নি। নির্দিষ্ট প্রশ্ন দিয়ে দেওয়া হয়েছে সেগুলির উত্তর চাওয়া হয়েছে।
কী কী প্রশ্নের উত্তর চাওয়া হয়েছে? আদৌ কী জলস্বপ্ন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে? হলে কতটা হয়েছে? কত জায়গায় বাড়ি বাড়ি সংযোগ দেওয়া হয়েছে? কোন জায়গায় দ্রুত জল পৌঁছানো প্রয়োজন? এরকম প্রশ্ন তৈরি করা হয়েছে।
পুলিশের একটি মহল বলছে, এমন গুরুত্বের সঙ্গে রাজ্য থেকে যখন এই বিষয়গুলো জানতে চাওয়া হচ্ছে তখন নিশ্চয় সেটার গুরত্ব আছে। আর রাজনৈতিকভাবে এটার স্পষ্ট মানে আদিবাসী ভোট ব্যাংক। আলিপুরদুয়ার লোকসভা আসনের নির্ণায়ক ভূমিকা নেয় আদিবাসী ভোট। তাই জেলার ৬৪টি চা বাগানে বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছে দিয়ে ভোটের আগে চমক দিতে চাইছে রাজ্য সরকার। আর ভোটে এটার ফায়দা পাবে তৃণমূল। সেকারণেই পুলিশের মাধ্যমে এই গ্রাউন্ড রিপোর্ট নেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে জলের কাজ করা জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দপ্তরের থেকেও তো নবান্নে রিপোর্ট যায়, তাহলে আবার আলাদা রিপোর্ট কেন? এবিষয়ে জানা যাচ্ছে জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দপ্তর যে রিপোর্ট পাঠাচ্ছে সেটা কতটা ঠিক সেটার সঙ্গে পুলিশের রিপোর্ট মিলিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত হতে চাইছ রাজ্য সরকার।
যদিও এই বিষয়ে নিয়ে পরিষ্কার কিছু বলতে নারাজ কোনও দপ্তরই। জেলা জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দপ্তর জানাচ্ছে, তারা বিভিন্ন প্রোজেক্টে কাজ করছে। দপ্তরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার ধীরাজ মণ্ডলের কথায়, ‘আমাদের বিভিন্ন প্রোজেক্ট জোরকদমে চলছে। এখনও পর্যন্ত একটি চা বাগানেই পুরোপুরি জলের লাইন দেওয়ার কাজ শেষ হয়েছে। এইবছর আরও কয়েকটি চা বাগানে কাজ শেষ হবে। কিছু জায়গায় জট রয়েছে সেটা নিয়ে জেলা শাসকের সঙ্গে কথা বলব।’ জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দপ্তর সূত্রে জানা যাচ্ছে, জেলায় জলস্বপ্ন প্রকল্লের কাজ প্রায় ৪৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। নতুন করে ৮৮টি প্রোজেক্ট নেওয়া হয়েছে। যেগুলোর মধ্যে কয়েকটি রিজার্ভার তৈরির কাজ এখনও শুরুই হয়নি। লোকসভা ভোটের আগে কি বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছোবে জেলায়, এবার সেটাই দেখার।