শুভজিৎ দত্ত, নাগরাকাটা: এ গ্রাম শুধু হাতির ডেরাই নয়। এখান থেকে অগ্নিবীররাও জন্ম নেন। পরিস্থিতি পুরোপুরি প্রতিকূল হলেও নিষ্ঠা ও একাগ্রতা থাকলে যে জীবনযুদ্ধে জয় সম্ভব তা জলপাইগুড়ির (Jalpaiguri) নাগরাকাটার (Nagrakata) আপার কলাবাড়ি বস্তির ১১ তরুণ প্রমাণ করলেন। একসঙ্গে সেনাবাহিনীর অগ্নিবীরের মেধাতালিকায় সুযোগ করে নিয়ে তাঁরা ডুয়ার্সকে (Dooars) পথ দেখাচ্ছেন। দেশের সেবায় গোর্খা জনজাতিরা যে বরাবরই এগিয়ে সেকথাও তাঁরা প্রমাণ করছেন।
ডায়নার জঙ্গল ঘেরা আংরাভাসা ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত আপার কলাবাড়ি রাজ্যের মধ্যে অন্যতম হাতি উপদ্রুত এলাকা। বাসিন্দাদের এক সময়ের মূল জীবিকা চাষাবাদ থাকলেও হাতির পেটেই সমস্ত ফসল চলে যাওয়ায় বেশিরভাগই এখন পরিযায়ী শ্রমিক। এমন পরিস্থিতিতে অগ্নিবীরের লিখিত, শারীরিক সক্ষমতা ও মেডিকেল ফিটনেসে উত্তীর্ণ হওয়ার পর সেখানকার ১১ তরুণ চূড়ান্ত মেধাতালিকায় ঠাঁই করে নিয়েছেন। সম্প্রতি ফলাফল প্রকাশিত হয়। এরপর তাঁদের নথিপত্র যাচাই হবে।
এই গ্রাম থেকে যাঁরা সুযোগ পেয়েছেন তাঁরা হলেন বিশাল সোনার, রোহন ছেত্রী, রোশন ছেত্রী, রোহিত ছেত্রী, রাহুল ছেত্রী, আমন ছেত্রী, সন্তোষ ছেত্রী, সারন ছেত্রী, পবন থাপা, রোমিও রাই ও নবীন প্রধান। প্রত্যেকেই দুঃস্থ পরিবারের। রোহিতের বাবা বছর দেড়েক আগে কেরলে কাজ করতে গিয়ে দেওয়াল চাপা পড়ে মারা যান। ওই তরুণ বলেন, ‘দেশসেবার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। পাশাপাশি এবার পরিবারটিও একটু স্বাচ্ছন্দ্যের মুখ দেখবে।’ আমন, সারন, রোশনদের বাবাও এখন কর্মসূত্রে ভিনরাজ্যে। বিশাল বললেন, ‘প্রথমবারে সুযোগ পাইনি। এটা দ্বিতীয়বারের অগ্নিবীরের পরীক্ষা ছিল। তাই এবারে বেশি করে জেদ চেপে বসেছিল। সফল হওয়ায় ভালো লাগছে।’ ওই তরুণরা জানিয়েছেন, লিখিত পরীক্ষায় পাশ করার পর তাঁরা একসঙ্গে ১৩ জন ডায়না নদীর চরে দৌড় সহ শারীরিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য প্র্যাকটিস করতেন।
স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ রবিবার গ্রামের ওই ১১ জনকে বিপুল সংবর্ধনায় ভরিয়ে দেয়। এলাকার দুই পঞ্চায়েত সদস্য প্রকাশ ছেত্রী ও সুধন রাই খুব খুশি। শিক্ষক ভক্তে বাহাদুর ছেত্রী বললেন, ‘এই তরুণদের আটজনই গ্রামের একমাত্র আপার প্রাইমারি স্কুল কণ্ঠ বর্মন এমএসকে-র পড়ুয়া ছিল।’