অনসূয়া চৌধুরী, জলপাইগুড়ি: বর্তমানে পুজোর সঙ্গে ‘প্রতিযোগিতা’ শব্দটি অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত হয়ে গিয়েছে। পুজোর আগে থেকেই ক্লাবগুলিতে প্রতিমার দৈর্ঘ্য নিয়ে, প্যান্ডেলের থিম (Theme) নিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু হয়। বাগদেবীর আরাধনাতেও তা বাদ যায় না। জলপাইগুড়ি শহরে এবারের পুজোর মূল আকর্ষণ (Attraction) ছিল ৫১ ফুটের সরস্বতী প্রতিমা। কিন্তু পুজোর পর এক সপ্তাহ কেটে যাচ্ছে অথচ সেই প্রতিমার নিরঞ্জন এখনও সম্পন্ন হয়নি। শহরের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের গোমস্তপাড়ায় এখনও অনাদরে-অবহেলায় পড়ে রয়েছে ৫১ ফুটের সরস্বতী।
যদিও পুজো কমিটির সদস্য প্রীতম ঘোষের সাফাই, ‘কিছু কাগজপত্রের কাজ বাকি আছে। তারপরেই দমকল (Fire Brigade) বিভাগের হোসপাইপের মাধ্যমে নিরঞ্জন সম্পন্ন হবে। পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গেও কথা হয়েছে।’
ইতিমধ্যেই এক সপ্তাহ পেড়িয়ে গিয়েছে আরও কতদিন অপেক্ষা করতে হবে তা জানেন না কেউই। সরস্বতীমূর্তিকে এভাবে অভিভাবকহীন অবস্থায় পড়ে থাকতে শহরবাসী আর দেখতে চাইছেন না। এলাকার পুরোহিত সঞ্জয় চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘প্রাণপ্রতিষ্ঠার পর নিরঞ্জন দিতে হয়। কিন্তু যেভাবে মা সরস্বতীকে ফেলে রাখা হয়েছে তা ছেলেখেলা ছাড়া কিছুই নয়। উচ্চতার লড়াইয়ে নেমে নাম কামিয়ে এভাবে প্রতিমা ফেলে রাখাকে কোনওভাবেই একজন পূজারি হয়ে মেনে নিতে পারি না।’
শুধু ২০ নম্বর ওয়ার্ডেই নয়, শহরের আরও বিভিন্ন জায়গায় পুজোর পর প্রতিমা নিরঞ্জন না করে সেগুলিকে নানা অছিলায় ফেলে রাখা হচ্ছে। বিষয়টিকে এলাকার শুভবোধ সম্পন্ন মানুষ ভালো চোখে দেখছেন না।
জলপাইগুড়ি শহর সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে কাতারে কাতারে মানুষ ১৪ ফেব্রুয়ারি ৫১ ফুটের সরস্বতী দেখতে ভিড় জমিয়েছিলেন। স্টুডেন্টস অফ জলপাইগুড়ির ব্যানারে চারজন ছাত্রছাত্রীর প্রচেষ্টায় ৫১ ফুট উচ্চতার ওই প্রতিমাটি নির্মিত হয়। অবাক দৃষ্টিতে সেদিন মৃন্ময়ীর দিকে তাঁকিয়ে ছিল সবাই। কিন্তু পুজোর পর সব কেমন যেন ম্লান হয়ে গিয়েছে। ছবি তোলা শেষ, সোশ্যাল মিডিয়ায় (Social Media) তা পোস্ট করাও শেষ। প্রতিমা নিরঞ্জন নিয়ে আগ্রহ নেই কারও। ওই রাস্তা দিয়ে চলতে গেলেই দেখা যায় খোলা আকাশের নীচে এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে বিদ্যার দেবীর মূর্তি। যা শহরে দৃশ্য দূষণের কারণ হয়ে উঠেছে। পুজো কমিটির সদস্যরা এতদিন পরেও প্রতিমা নিরঞ্জনের ব্যবস্থা কেন করে উঠতে পারলেন না? কেন আগে থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ না করে এত উচ্চতার প্রতিমা বানানো হল তা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠছে।
ওই পথ দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করেন রমেশ দেব রায়। তাঁর কথায়, ‘ঈশ্বরে বিশ্বাস করি, তাই এমন দৃশ্য দেখলে কষ্ট হয়।’ কলেজ পড়ুয়া অমল প্রামাণিকের দাবি, ‘আমরা পড়াশোনা করি তো, বাগদেবীর প্রতি এমন অবহেলা মেনে নিতে পারছি না। উদ্যোক্তারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিরঞ্জনের ব্যবস্থা গ্রহণ করুন, এটাই চাই।’