সপ্তর্ষি সরকার, ধূপগুড়ি: ধূপগুড়ি (Dhupguri) শহরবাসী ও স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠনের দাবি মেনে জলপাইগুড়ির (Jalpaiguri) ধূপগুড়ি পুরসভার উদ্যোগে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে স্থাপন করা হয় একাধিক মনীষীর পূর্ণাবয়ব ও আবক্ষ মূর্তি। ২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর রাজ্যের তৎকালীন পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রীর হাত দিয়ে মূর্তিগুলির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। ফি বছর মনীষীদের জন্মদিন ও প্রয়াণ দিবসে মূর্তিগুলিকে ধুয়েমুছে ফুল দিয়ে সাজিয়ে তোলা হলেও বছরের বাকি দিনগুলিতে সেগুলির খোঁজখবর কেউ রাখেন না। বছরভর বেহাল দশায় থাকা বিভিন্ন মনীষীর মূর্তিগুলির বেহাল দশা দেখে এমনটাই অভিযোগ শহরবাসীর।
ধূপগুড়ি শহরে চোখে পড়ছে বিদ্যাসাগরের পূর্ণাবয়ব মূর্তিটি বর্তমানে বেদি সহ হেলে রয়েছে। স্বামী বিবেকানন্দের মূর্তি খোলা আকাশের নীচে ঝড়-জলে শ্রী হারিয়ে ফেলেছে। বেদির গ্র্যানাইট খসে পড়তে শুরু করেছে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে। পুরু ধুলোর আস্তরণ জমেছে খোলা আকাশের নীচে অবস্থিত ক্ষুদিরামের মূর্তিতে। কিশোর কবি সুকান্তের কপালে লেগে রয়েছে কালির ছোপ, মূর্তির নীচে বেদিতে সাঁটা হয়েছে বিজ্ঞাপনী স্টিকার। দুই দোকানের মাঝে ঘুপচি এলাকায় যেন দমবন্ধ অবস্থায় রয়েছে বিশ্বকবির মূর্তিটি। যেন নতুন মহকুমা শহরের অস্তিত্বের জন্য লড়াই করতে হচ্ছে বিশ্ববরেণ্য মহাপুরুষদের।
এ প্রসঙ্গে ধূপগুড়ি পুরসভার (Dhupguri Municipality) প্রথম চেয়ারম্যান সত্যরঞ্জন ঘোষ বলেন, ‘শহরে মনীষীদের মূর্তি বসাতেই হবে, এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। তবে বসানো হলে তার মর্যাদা রক্ষা জরুরি। শুধুমাত্র ফলকে নাম লিখে উদ্বোধন করে বছরে এক-দু’বার ফুল দিয়ে ছবি তুললেই হবে না। মনীষীদের মূর্তির অমর্যাদা হলে আগামী প্রজন্ম সেই অপসংস্কৃতি নিয়েই বেড়ে উঠবে।’ মূর্তিগুলির রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে পুরসভার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই প্রকাশ্যে এবিষয়ে মন্তব্য করতে সাহস পাচ্ছেন না, পাছে সমালোচনা করে শাসকের বিষনজরে পড়তে হয়। ধূপগুড়ি টাউন মণ্ডল বিজেপির সভাপতি তথা পুরসভার প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা কৃষ্ণদেব রায় বলেন, ‘আমাদের শাখা সংগঠনের কর্মীরা বছরে একাধিকবার মনীষীদের মূর্তি ও সংলগ্ন এলাকা সাফাই করেন। তবে এর স্থায়ী ও নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পুরসভার।’ পুর প্রশাসক বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান রাজেশকুমার সিংয়ের কথায়, ‘মূর্তিগুলির বাৎসরিক মূল্যায়ন ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় নিয়মিত। প্রতিটি মূর্তির মাথার ওপর শেড তৈরির চিন্তাভাবনা রয়েছে আমাদের। বছরের এই সময়ে ধুলোর জন্য কিছুটা সমস্যা হয় বটে। তবে নজরদারি ও রক্ষণাবেক্ষণে আরও গুরুত্ব দেওয়া হবে, এটুকু বলতে পারি।’