আসানসোল: আসানসোল পুরনিগমের প্রাক্তন মেয়র তথা বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারির আসানসোলে আসার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা গত ১২ সেপ্টেম্বর তুলে নিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। তার ঠিক আটদিন পর বৃহস্পতিবার আসানসোলে পা রাখলেন জিতেন্দ্র তিওয়ারি। পাঁচ মাসেরও বেশি সময় পর নিজের শহরে পা রেখে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন বিজেপি নেতা। এদিন আসানসোলে এসেই তিনি স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে আক্রমণ করেন। তাঁর এই আক্রমণের লক্ষ্য ছিল, তাঁকে আসানসোলে ঢুকতে না দেওয়া, আসানসোল পুরনিগমের তরফে আসানসোল বাজারের ফুটপাত দখলমুক্ত করার পদক্ষেপ ও জিটি রোডের রাহালেন মোড় সংলগ্ন তৃণমূল জেলা কার্যালয় তৈরি করা। জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে তার পালটা জবাব দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন ওরফে দাসু।
প্রসঙ্গত, গত ১২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট আগের শর্ত শিথিল করে জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে আসানসোলে ঢোকার অনুমতি দেয়। তবে হাইকোর্টের তরফে এই ছাড় দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু শর্ত আরোপ করা হয়, যা তাঁকে মেনে চলতে হবে। পূর্ব ঘোষণা মতো এদিন সকাল সাড়ে দশটার পর ট্রেনে কলকাতা থেকে আসানসোল স্টেশনে আসেন জিতেন্দ্র তিওয়ারি। তাঁকে সেখানে স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন পুরনিগমের কাউন্সিলার গৌরব গুপ্ত সহ বহু বিজেপির নেতা-কর্মীরা। সস্ত্রীক জিতেন্দ্র তিওয়ারি ট্রেন থেকে নামতেই তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়।
স্টেশনের বাইরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, ‘নিজের জন্মস্থান, কর্মস্থল ও বেড়ে ওঠার জায়গায় আসতে কার না ভালো লাগে। একটা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক কারণে আসানসোলে ঢুকতে বাধা তৈরি করা হয়েছিল। হাইকোর্ট কিছু শর্ত দিয়ে সেই বাধা তুলে নিয়েছে। শর্তমতো যেখানে আমি থাকব অর্থাৎ আসানসোল দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসারের সঙ্গে ১৫ দিন অন্তর দেখা করতে হবে। আমি তা অবশ্যই করব। এদিন বিকেলেই আমি থানায় যাব।’ এদিনই সকাল থেকে আসানসোল পুরনিগমের তরফে জিটি রোডের বাজারের ফুটপাত দখলমুক্ত করতে অভিযান শুরু করা হয়েছে। যা নিয়ে কটাক্ষ করেছেন আসানসোল পুরনিগমের প্রাক্তন মেয়র। তিনি বলেন, ‘এর আগেও এমন অভিযান চালানো হয়েছিল। কি হয়েছে তার ফল, সবার জানা। এবারেও তা হবে। আসল কথা হল, যাঁরা তৃণমূলের মিটিংয়ে যান না, মিছিলে হাঁটেন না, তাঁদের ওপরেই এই অভিযান হয়।’ তাঁর আরও বক্তব্য, তৃণমূলতো রাজ্যের শাসক দল হিসাবে জিটি রোডের রাহালেন মোড়ে সরকারি জমিতে জেলা পার্টি অফিস তৈরি করেছে। সবাই জানে ওই জমি পিডব্লিউডির। ক্ষমতা থাকলে শাসক দলের জেলা নেতারা জমির কাগজ দেখান।
এবিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন বলেন, ‘জিতেন্দ্র তিওয়ারির আসানসোলে না আসার বিষয়টি পুলিশ প্রশাসন ও আদালতের। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। আর ফুটপাত দখলমুক্ত করার বিষয়টি আসানসোল পুরনিগমের নীতির ব্যাপার। সময় ও পরিস্থিতি বুঝে তা করতে হয়। জিতেন্দ্র তিওয়ারি যখন মেয়র ও পুরপ্রশাসক ছিলেন, তখন তিনি কি করেছিলেন, তা তিনি কি ভুলে গিয়েছেন। এই বিষয়ে যা বলার মেয়র বিধান উপাধ্যায় আগেই বলেছেন। আর জেলা পার্টি অফিস নিয়ে তার কথার জবাব ঠিক সময়ে দল দিয়ে দেবে। জিতেন্দ্র তিওয়ারি যা বলেছেন, তা সবই রাজনৈতিক। তার মোকাবিলা ওই পথেই করা হবে।’ এদিন আসানসোল স্টেশন থেকে জিতেন্দ্র তিওয়ারি যান ১৯ নম্বর জাতীয় সড়ক লাগোয়া ঘাঘরবুড়ি মন্দিরে পুজো দিতে। পুজো শেষে তিনি আসানসোল শহরের জিটি রোডের গোধূলি মোড় সংলগ্ন নিজের আবাসনে আসেন।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ১৪ ডিসেম্বর আসানসোলের রেলপারের রামকৃষ্ণ ডাঙালে শিবচর্চার সঙ্গে কম্বল বিতরণের আয়োজন করা হয়েছিল। এই অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন জিতেন্দ্র তিওয়ারি। এই অনুষ্ঠানে এসেছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি চলে যাওয়ার পরেই কম্বল নেওয়া নিয়ে হুড়োহুড়ি শুরু হয়। তাতে পদপিষ্ট হয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়। মৃত এক মহিলার ছেলের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে আসানসোল পুরনিগমের বিজেপি কাউন্সিলারদের দলনেত্রী চৈতালি তিওয়ারি, জিতেন্দ্র তিওয়ারি সহ একাধিক ব্যক্তির নামে মামলা হয়। গত ১৮ মার্চ দিল্লির অদূরে যমুনা এক্সপ্রেস ওয়ের নয়ডা থেকে আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে গ্রেপ্তার করে। বেশকিছু দিন জেলে থাকার পরে ১০ এপ্রিল কলকাতা হাইকোর্ট থেকে তিনি শর্ত সাপেক্ষে জামিন পেয়েছিলেন।