শুভ দত্ত, বানারহাট: স্ত্রী অসুস্থ বলে জানিয়ে আলিপুরদুয়ারের (Alipurduar) সাংসদ জন বারলা (John Barla) বিজেপির (BJP) হয়ে প্রচারে যাচ্ছেন না। ধূপগুড়িতে (Dhupguri) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (PM Narendra Modi) সভাতেও তিনি যাবেন না বলে বারলা আগেভাগেই জানিয়ে দিয়েছেন। আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্র থেকে দাঁড়ানো নির্দল প্রার্থীরা বারলার বাড়িতে এসে তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন। তবে মনোনয়নপত্র দাখিলের পর বিজেপির কোনও প্রার্থীই তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসেননি বলে বারলা জানিয়েছেন।
অনুগামীরাও যাতে বিজেপির হয়ে প্রচারে না যান সেজন্য বারলা ইতিমধ্যেই তাঁদের নির্দেশ দিয়েছেন। বারলা প্রভাবিত বিজেপির চা বাগান শ্রমিক সংগঠনের নেতারা ইতিমধ্যেই আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী মনোজ টিগ্গার বিরুদ্ধে প্রচারে নেমেছেন। গোটা বিষয়টি বিজেপিকে আলিপুরদুয়ারে এবারের লোকসভা ভোটে অনেকটাই ব্যাকফুটে ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি, যেভাবে পরিস্থিতি এগোচ্ছে তাতে বারলার সঙ্গে পদ্ম শিবিরের বিচ্ছেদ হতে পারে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে।
মঙ্গলবার বারলা বলেন, ‘আমার স্ত্রী অসুস্থ। তাই বিজেপির হয়ে প্রচারে যাচ্ছি না। স্ত্রীর শারীরিক পরিস্থিতি ঠিক না হলে ৭ এপ্রিল ধূপগুড়িতে প্রধানমন্ত্রীর সভায় যাব না।’ আশ্চর্যের বিষয় বলতে, জনের মুখে এদিন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী প্রকাশ চিকবড়াইকের প্রশংসা শোনা যায়। তবে কি তিনি তৃণমূল প্রার্থীকেই সমর্থন করছেন? বারলা বললেন, ‘প্রকাশ চা বাগানের ছেলে, চা শ্রমিকদের সমস্যা নিয়ে কাজের প্রবণতা ওর মধ্যে রয়েছে।’ তবে এর বেশি জন কিছু বলতে চাননি। এই পরিস্থিতিতে কি তিনি বিজেপির হয়ে রাজ্যসভায় যেতে চাইছেন? প্রশ্ন করা হলে বারলা বলেন, ‘কলকাতার নেতারা আমাদের উত্তরের নেতাদের কতটা গুরুত্ব দেন তা উত্তরবঙ্গবাসী সকলেই জানে।’
‘মনোজকে ভোট নয়’, ‘আদিবাসী সমাজের সঙ্গে মনোজ গদ্দারি করেছে’, ‘নো ভোট টু মনোজ টিগ্গা’, ইত্যাদি বলে বানারহাটের দলীয় কার্যালয়ে শ্রমিক সংগঠন নিয়ে বারলা বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রচার শুরু করেছিলেন। গত ৬ মার্চ মনোজ টিগ্গা ফালাকাটার বিধায়ককে সঙ্গে নিয়ে বারলার সঙ্গে দেখা করতে আসেন। তবে বারলা তাঁদের সঙ্গে দেখা করেননি। পরে মাদারিহাটে কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেসের স্টপ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মনোজের সামনেই বারলা তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন। এরপর থেকে মনোজ আর বারলার সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। এদিন বারলা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী, জেপি নাড্ডাকে আমার বিষয়ে ভুল বুঝিয়ে, কলকাতার নেতাদের সঙ্গে আঁতাত করে, সবাইকে অন্ধকারে রেখে মনোজ আলিপুরদুয়ার থেকে টিকিট পেয়েছে। তবে আমার দলের ওপর কোনও রাগ, অভিমান নেই। আমার দলের অনুগামীরা তাঁদের নিজেদের ইচ্ছাতেই প্রচারে যাচ্ছেন না। আমি ছাড়া, আলিপুরদুয়ার থেকে দলের হয়ে অন্য কেউ প্রার্থী হচ্ছেন, তা দলের সকলেই মানতে নারাজ।’
পরিস্থিতি যেদিকে গড়াচ্ছে তাতে আলিপুরদুয়ারে পদ্ম শিবির এবারের ভোটে অনেকটা ব্যকফুটে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। পরিস্থিতি ঠিক করতে বারলাকে যাতে হাতে রাখা যায় সেজন্য দলের নেতা–কর্মীদের একটি অংশ সরব হয়েছেন। বিজেপির জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী ডাঃ জয়ন্তকুমার রায় এদিন রাতে বারলার সঙ্গে দেখা করেন। তাঁদের মধ্যে বেশ কিছু কথাবার্তা হয়। তবে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাঁদের কেউই কোনও মন্তব্য করতে চাননি।