কাটরা (জম্মু ও কাশ্মীর): বাঙালির পায়ের তলায় সরষে। তবে শুধু বাঙালিরাই যে ঘুরতে ভালোবাসে তা কিন্তু নয়। ঘুরতে কমবেশি সকলেই ভালোবাসে। তবে ওই বাঙালির সঙ্গে ভ্রমণ শব্দটা যেন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অফিস থেকে সাময়িক ছুটি হোক বা বাচ্চাদের স্কুলের গ্রীষ্মের ছুটি, বা বাড়ির হেঁশেল থেকে কিছুদিনের জন্য নিস্তার। সবকিছুতেই ফাঁক পেলেই মনটা কেমন পাহাড়, সমুদ্র করে। যেন প্রাণ ভরে পাহাড়ের বিশুদ্ধ বাতাস নিতে ইচ্ছে করে। আবার মন দিয়ে জঙ্গলের সবুজ দেখতে ইচ্ছে করে। বা সারাটা রাত যদি সমুদ্রের পাশেই কাটিয়ে দেওয়া যায়! তবে কেমন হয়? শুনলেই মনে হয় না! এক ছুটে একটু বেরিয়ে আসি। তবে যদি পাহাড়কে ভালোবেসে থাকেন তবে জীবনে একবার অন্তত কাশ্মীর যাওয়াই উচিত। প্রকৃতি যেন ঢেলে সাজিয়েছে ওই জায়গাটিকে। কোথাও কোনও খুঁত নেই। দেখলে একটু হিংসেই হয়। আমরা কী দোষ করলাম? যে ওরম স্বর্গীয় সৌন্দর্য সব জায়গায় পেলাম না। কাশ্মীরের ওলিতে গলিতে ঘুরতে বেরলে কিন্তু এরমটাই মনে হবে।
চলুন তবে, ব্যস্ত জীবন থেকে সাময়িক বিরতি নিয়ে জম্মু ও কাশ্মীর ঘুরে আসা যাক। কাশ্মীরের যাত্রাটা প্রথমে বৈষ্ণদেবী দর্শন দিয়েই শুরু করি। আপনি যদি উত্তরবঙ্গের মানুষ হন তবে সহজেই ট্রেনে সরাসরি কাটরা যেতে পারবেন। তবে এই ট্রেনের সফর কিন্তু দীর্ঘ। প্রায় আড়াই দিন। শ্রী মাতা বৈষ্ণদেবী কাটরা ট্রেনটি কামাখ্যা জংশন থেকে ছাড়ে তারপর আলিপুরদুয়ার, নিউ জলপাইগুড়ি জংশন হয়ে বিহার, উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব হয়ে পৌঁছোবে কাটরায়। বা আপনি যদি যাত্রাপথ ছোট করতে চান তবে অনায়াসেই বাগডোগরা থেকে দিল্লির ফ্লাইট এরপর বন্দে ভারতে কাটরায়। এছাড়াও অনেক উপায় আছে।
যদি সরাসরি কাটরার ট্রেনে যাওয়া যায় তবে আড়াই দিন পর অবশেষে গন্তব্য। সেখানে গিয়ে একটি ভালো হোটেলে চেক ইন করতে হবে। হয়তো আপনি রাতেই পৌঁছোবেন। সেক্ষেত্রে সেদিন বিশ্রাম নিয়ে পরদিন ভোর ভোর বেরিয়ে যেতে পারেন বৈষ্ণদেবীর উদ্দেশ্যে। এখানে একটা কথা মনে রাখতে হবে যে, পুরো কাটরা নিরামিষ। আপনি সেখানে পেঁয়াজ, রসুনও পাবেন না৷ মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ বেশি থাকলেও, সকলেই বৈষ্ণদেবীকে ভীষণ মানেন। দেবীকে কেন্দ্র করেই সেখানকার পর্যটন সহ যাবতীয় ব্যবসা বৃদ্ধি পেয়েছে। যাই হোক, এবার বৈষ্ণদেবীর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করা যাক।
প্রথমেই একটি কাউন্টার থেকে যাত্রা শুরু করার জন্য আইডেন্টি কার্ড নিয়ে নিতে হবে। তারপর মূল প্রবেশদ্বারে ঢুকেই মন্দিরে যাওয়ার একাধিক মাধ্যম পাওয়া যাবে। যেমন- ঘোড়া, ডুলি, হেলিকপ্টার। যদিও হেলিকপ্টারে যেতে হলে, অনলাইনে টিকিট বুক করতে হয়। এছাড়া বহু মানুষ হেঁটে মন্দিরে যান। তাতে অবশ্য সময় লাগে প্রায় ৭-৮ ঘণ্টা। বয়স্কদের জন্য ডুলিটাই শ্রেয়। চারজন মানুষ একই ছন্দে, একই গতিতে ঘাড়ে একটি ভারী বসার জায়গায় বয়স্কদের বসিয়ে নিয়ে যায়। এছাড়া রয়েছে ঘোড়া। ঘোড়াতেও বেশ অনেকটাই সময় লাগে। তাছাড়া বাচ্চাদের জন্য বেবি সিটার ভাড়া করার ব্যবস্থা রয়েছে। অর্থাৎ দেবীর কাছে পৌঁছোনো সময়সাপেক্ষ হলেও, মাধ্যম অনেক আছে। পাহাড়ি রাস্তায় ওঠার পথে প্রচুর খাবারের দোকান, পানীয়র দোকান, শরীর ব্যাথা হয়ে গেলে মাসাজ পার্লার সহ অনেক কিছু পাবেন। তবে যত ওপরে উঠবেন তত দোকানের সংখ্যা কমতে থাকে। শুধু ঠান্ডা পানীয়র দোকান আর জল ছাড়া কিছু পাওয়া যাবে না। তবে রাস্তায় পুণ্যার্থীদের যাতে সমস্যা না হয় সেই কারণে অনেক শৌচালয়ও রয়েছে। মন্দিরে যাওয়া কিছু রাস্তা পর্যন্ত মানুষ, ঘোড়া, ডুলি সব একসঙ্গে যাওয়ার ব্যবস্থা। তারপর থেকে ঘোড়ার রাস্তা আলাদা, হেঁটে যাওয়া ও ডুলির রাস্তা আলাদা।
কাটরা থেকে বৈষ্ণদেবী যাওয়ার রাস্তা প্রায় ২০ কিলোমিটার। পুরোটাই পাহাড়ি রাস্তা। তবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, কোথাও ভাঙা নেই। ভীষণ মসৃণ। সব পেরিয়ে অবশেষে যখন মন্দিরে পৌঁছোবেন তখন নিজেদের ব্যাগ, জুতো, মোবাইল লকারে জমা রাখতে হবে। তারপর পুজো দেওয়ার জন্য ভোগ কিনে গর্ভগৃহের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হবে। সেও প্রায় অনেকটা পথ খালি পায়ে কাদা, জল পেরিয়ে অবশেষে দেবী দর্শন। তবে গর্ভগৃহের ভেতরে থাকার অনুমতি বেশি নেই। কয়েক সেকেন্ড…বড়জোর। তারপরেই আবার ফেরত আসার পালা। আসার সময় পুজোর জন্য দেওয়া ভোগ ফেরত দেবে সেখানকার পুরোহিতরাই। মন্দিরেই আইডেন্টি কার্ড ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এবার কাটরায় ফিরে আসার পালা। আবারও আপনি ঘোড়া, ডুলি, হেলিকপ্টার বা হেঁটে ফেরত আসতে পারেন। প্রত্যেকটিরই কিন্তু ভাড়া আলাদা আলাদা, তাঁদের সঙ্গে এ বিষয় ভালো করে কথা বলে নিতে হবে। নইলে ঠকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে আরেকটা কথা জানিয়ে রাখি, বৈষ্ণদেবী মন্দিরের ওপরে ভৈরব মন্দির রয়েছে। সেখানে রোপওয়ে বা হাঁটা পথে যেতে হয়। এই রইল বৈষ্ণদেবী দর্শনের যাত্রাপথ। তাহলে যাবেন নাকি বৈষ্ণদেবী দর্শনে?