কুমারগঞ্জঃ আগুনে পুড়ে মা মারা গেছে ছয় মাস হল। প্রায় দুই মাস হল বাবা চলে গেছে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করতে উত্তরপ্রদেশে। গত কয়েকদিনের ঝড় বৃষ্টিতে ত্রিপল ঘেরা ঘর সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্রতিবেশীর বারান্দায় দিন কাটছে ছোট্ট ছোট্ট তিন ভাইয়ের। রেশন কার্ড সহ সমস্ত জরুরি কাগজ আগুনে পুড়ে যাওয়াতে পায় না রেশনের চাল। মা বাবা ছাড়া তিনটি ছোটো শিশুর অসহায় অবস্থায় দিন কাটছে কুমারগঞ্জের ভুঁইয়া পাড়ায়।
সবচেয়ে বড় শিশু সুনীল ভুঁইয়ার বয়স আট বছর। মাঝের জন রবির বয়স ছয়। সবচেয়ে ছোটো জনের বয়স মাত্র দুই। সবেমাত্র হাঁটতে শিখেছে ছোট্ট দুধের শিশু বিশাল ভুঁইয়া। ছয় মাস আগে বাড়িতে আগুন লেগে পুড়ে ছাই হয়ে যায় সর্বস্ব। পুড়ে মৃত্যু হয় তাদের মায়ের। বাবা বাবলু ভুঁইয়া বেশীরভাগ সময় নেশা করে থাকতেন। দুই মাস আগেই উত্তরপ্রদেশে কাজ করতে চলে গেছেন। কোনওরকমে ত্রিপল দিয়ে ঘেরা ছোট্ট ঘরটি গত কয়েকদিনের ঝড়বৃষ্টিতে ভেঙে চুরমার। খাওয়ার ব্যবস্থা তো নেই, সঙ্গে এখন নেই মাথার উপর ছাদও। বাড়ির সামনের এক প্রতিবেশীর বাড়ির বারান্দায় প্রবল অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে তিন ক্ষুদে শিশুর। আরও মর্মান্তিক ছবি ফুটে উঠছে যখন আট বছরের সুনীল তার ভাইদের জন্য উনুনে ভাত রান্না করছে।
সুনীল ও রবি গ্রামের রাধানগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। স্কুলে যাওয়ার সময় দুই বছরের ভাইকেও সঙ্গে নিয়ে যেতে বাধ্য হয়। দুধের শিশু স্কুলের মিড ডে মিল খেয়ে স্কুলের ঘরের একপাশে ঘুমিয়ে পড়ে। শিক্ষক শিক্ষিকা স্কুলের সময়ে দেখাশোনা করছেন। সম্ভবমতো পাশে দাঁড়াচ্ছেন। কিন্তু তাদের জন্য এই সাহায্য একেবারেই যথেষ্ট নয়। আগুনে বাড়ি পুড়ে যাওয়ার পরে ত্রিপল ঘেরা ঘর ঝড় বৃষ্টিতে ভেঙে গেছে। তিন ভাইয়ের পড়ার মতো সেভাবে জামাকাপড়ও নেই।
ভুঁইয়াপাড়া মূলত গরীব দিনমজুরদের গ্রাম। গ্রামের বেশীরভাগ পুরুষ পরিযায়ী শ্রমিকের কাজে বাইরে থাকে। গ্রামের বিদ্যালয়ের শিক্ষক রাকেশ কুণ্ডু বলেন, ‘তিন ভাইয়ের কষ্ট চোখে দেখা যাচ্ছে না। আগুনে পোড়ার পরে বাড়ি বলতে কিছু নেই। ঝড়বৃষ্টিতে ছোট্ট ত্রিপল ঘেরা ঘরে যা ছিল সব নষ্ট হয়ে গেছে। পাশের বাড়ির বারান্দায় থাকে। আট বছরের সুনীল নিজে ভাত রান্না করে। স্কুলের সময়ে আমরাই দেখি। কিন্তু ওদের প্রশাসনিক সাহায্যের প্রয়োজন। নয়তো বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। দুধের শিশু মিড ডে মিলের ভাত খাচ্ছে চোখে দেখা যায় না।’
কুমারগঞ্জ ব্লকের বিডিও খবর পাওয়া মাত্রই ভুঁইয়া পাড়ায় আসেন। সঙ্গে ছিলেন কুমারগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি উমা রায় এবং মোহনা পঞ্চায়েতের কয়েকজন প্রতিনিধি। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে উপস্থিত হয় চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারপার্সন মন্দিরা রায় চক্রবর্তী। উপস্থিত হয়েছিলেন কুমারগঞ্জ ও পতিরামের দুটো স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও। পতিরাম নাগরিক ও যুব সমাজের পক্ষ থেকে তিনটি শিশুর জন্যই নতুন জামাকাপড় এবং কিছু খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। বিডিও শ্রীবাস বিশ্বাস জানান, ‘উত্তরবঙ্গ সংবাদের সাংবাদিকের কাছে বিষয়টি জানতে পেরেই ঘটনাস্থলে আসি। নির্মম দৃশ্য। আমরা ব্লক এবং পঞ্চায়েত প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রিপল জামাকাপড় খাবার জিনিস সহ বেশ কিছু সামগ্রী দিলাম। বাচ্চাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওর বাবা ফিরে এলে ঘর এবং কোনও কাজের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি। আগুনে সমস্ত প্রয়োজনীয় নথিপত্র পুড়ে গেছে, সেগুলো নতুন করে করানোর চেষ্টা করছি।’