কলকাতা: নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’র গ্রেপ্তারির পরই রাজনৈতিক মহলে চাপানউতোর শুরু হয়েছে। টুইটে তৃণমূল কংগ্রেস ও মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। এদিকে পালটা ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব দিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ।
Sujay Krishna Bhadra aka “Kalighat-er Kaku” Arrested.
The long arm of the Law is finally reaching towards the masterminds & the biggest beneficiaries.
NO ONE WILL BE SPARED. THE HIGH & MIGHTY WILL GO TO JAIL.
TIME IS TICKING…Know the Associates of “Kalighat-er Kaku”:- pic.twitter.com/MDUtpKe1CU
— Suvendu Adhikari • শুভেন্দু অধিকারী (@SuvenduWB) May 30, 2023
শুভেন্দুর কথায়, ‘হৃদয়ে পৌঁছে গিয়েছে ইডি। তদন্তকারী সংস্থার উচিত না থেমে মাথায় পৌঁছোনো।’ এদিন সকালে প্রাতর্ভ্রমণে গিয়ে দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘কাকু হল। জেঠু হল। এবার হয়তো পিসির সময় আসছে। ভাইপোও আছে।’ এদিকে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের গ্রেপ্তারির পিছনে ষড়যন্ত্রের দাবি করেছেন কুণাল ঘোষ। তিনি টুইটে লেখেন, ‘বায়রন তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় কংগ্রেস, সিপিএম, বিজেপি জোট ধাক্কা খেয়েছিল। সেই রাগে এবং নিজেদের ব্যর্থতা থেকে নজর ঘোরাতে দিনভর নাটকের পর রাতের উপসংহার নয় তো? তিন দলের উল্লাস দেখে সেটাই তো মনে হচ্ছে।’ একই দাবি করেছেন জয়প্রকাশ মজুমদারও।
বায়রন @AITCofficial এ যোগ দেওয়াতে কংগ্রেস, সিপিএম, বিজেপি জোট ধাক্কা খেয়েছিল। সেই রাগে এবং নিজেদের ব্যর্থতা থেকে নজর ঘোরাতে দিনভর নাটকের পর রাতের উপসংহার নয় তো? তিন দলের উল্লাস দেখে সেটাই তো মনে হচ্ছে।
— Kunal Ghosh (@KunalGhoshAgain) May 30, 2023
প্রসঙ্গত, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় দীর্ঘ প্রায় ১২ ঘণ্টা জেরার পর মঙ্গলবার রাতে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’কে গ্রেপ্তার করে ইডি। তাঁর গ্রেপ্তারির খবর জানান বিধাননগরের সিজিও কমপ্লেক্সের ইডির আধিকারিকরা। ভুয়ো সংস্থা খুলে নিয়োগ দুর্নীতির কালো টাকা সাদা করার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এছাড়া তিনি তদন্তে সহযোগিতা করছেন না বলে জানান তদন্তকারীরা।
নিয়োগ দুর্নীতির মামলার তদন্তে কুন্তল ঘোষ, গোপাল দলপতি, তাপস মণ্ডলকে জিজ্ঞাসাবাদের পর উঠে আসে কালীঘাটের কাকুর নাম। কুন্তলের মুখে তাঁরা এই নাম শুনেছিলেন বলে জানিয়েছেন তাপসবাবু। কালীঘাটের কাকু কে? তাঁর পরিচয় কী? তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয় রাজ্য রাজনীতিতে। পরবর্তীতে কালীঘাটের এই কাকুর নাম ও পরিচয় জানা যায়। তিনি হলেন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। সুজয়বাবু অভিষেকের দপ্তরের পুরোনো কর্মী। নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেপ্তার বহিষ্কৃত তৃণমূল যুব নেতা কুন্তল ঘোষ বিভিন্ন সময়ে কালীঘাটের এই কাকুর কাছে মোটা অংকের টাকা পাঠাতেন বলে তদন্তকারী সংস্থাকে জানিয়েছিলেন গোপাল দলপতি ও তাপস মণ্ডল। পরবর্তীতে কালীঘাটের কাকুর বাড়িতে একাধিকবার তল্লাশি চালিয়েছে সিবিআই ও ইডি। এর আগে সিবিআই দপ্তরে হাজিরা দেন তিনি। এবারই প্রথমবার ইডি দপ্তরে হাজিরা দিলেন কালিঘাটের কাকু। গত ২০ মে তাঁর বাড়িতে ম্যারাথন তল্লাশি চালায় ইডি। বেশকিছু নথি উদ্ধার হয় তাঁর বাড়ি থেকে। ইডি জানতে পারে তিনটি কোম্পানির মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করেছেন সুজয়কৃষ্ণবাবু। এই সব সংস্থায় তাঁর অংশীদারিত্ব থাকলেও তিনি অস্বীকার করেছেন বারবার।
তল্লাশিতে উদ্ধার হওয়া নথির ভিত্তিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল সুজয়কৃষ্ণবাবুকে প্রথমবার তলব করে ইডি। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ বিধাননগরের সিজিও কমপ্লেক্সে পৌঁছান তিনি। ইডি সূত্রে খবর, গতকালের জেরায় একাধিক প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বীকার করেন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। বকলমে তিনি যে ভুয়ো সংস্থা চালাতেন সেই সংস্থা সুজয়কৃষ্ণবাবুর সামনে পেশ করা হলে অস্বীকার করেন তিনি। এমনকি শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যবসায় সুজয়কৃষ্ণের বিনিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়েছেন তিনি। এদিন নানাভাবে তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন তিনি। এরপরই তাঁকে গ্রেপ্তার করার সিদ্ধান্ত নেন ইডি কর্তারা।