রায়গঞ্জঃ আধার কার্ডে কারও বয়স ১৫, কারও ১৬ বা ১৭। রাতারাতি এডিট করে সেই বয়স হয়ে যাচ্ছে ২৫ বছর। এরপরেই মিলছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার। এর জন্য দালালরা পাচ্ছে দুই থেকে তিন হাজার টাকা। এভাবেই রায়গঞ্জ ব্লকের জগদীশপুর অঞ্চলে কয়েক হাজার অল্পবয়সী মহিলা ভুয়ো আধার কার্ড বানিয়ে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের সুবিধে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন জগদীশপুর অঞ্চলের গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য আনারুল রমজান।
আনারুল জানাচ্ছেন, ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডারকে কেন্দ্র করে গ্রামে গ্রামে জালিয়াতি চক্র গড়ে উঠেছে। মাইনুল হক সহ আরও অনেকে এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকা অবৈধভাবে তুলে নিচ্ছে। এমনকি যাদের বয়স ২৫ বছর হয়ে গিয়েছে, স্বাভাবিক নিয়মেই যাঁরা লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের সুবিধে পাবেন, ভুল বুঝিয়ে তাঁদের কাছ থেকেও তিন মাসের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে দালাল চক্রের লোকজন। বিষয়টি পঞ্চায়েত প্রধান সহ অনেককেই জানানো হয়েছে। কিন্তু কিছুতেই বন্ধ করা যাচ্ছে না।’
আনারুলের দাবি, ‘জগদীশপুর অঞ্চলেই চার থেকে পাঁচ হাজার ভুয়ো আধার কার্ড রয়েছে। চক্রের মূল মাথাগুলিকে গ্রেপ্তার করলে সব বের করা যাবে। আমরা চাই, যারা প্রকৃত তারাই সরকারি সুবিধে গ্রহণ করুক।’
গ্রামবাসীরা বলছেন, ভুয়ো র্যাশন কার্ডের মতো লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মতো জনকল্যাণ প্রকল্পেও হাজার হাজার ভুয়ো সুবিধেভোগী লুকিয়ে রয়েছে। এই প্রকল্পকে ঘিরে দুর্নীতির ছায়া ক্রমশ চওড়া হচ্ছে। অবিলম্বে ভুয়ো সুবিধেভোগী চিহ্নিত করে তাঁদের নাম বাতিল করার দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবক বলেন, ‘মহিলাদের স্বনির্ভর করার এই সামান্য টাকার প্রকল্পেও দুর্নীতির লম্বা ছায়া পড়েছে। এই দুর্নীতি রুখতে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। মাইনুল হক সহ ব্লকের এক কর্মী এই কাজে যুক্ত।’
এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত মাইনুল হককে ফোন করা হলে তিনি জানান, ‘এসব কাজ হয় না। আমি করি না। অন্য কোনও মাইনুল হবে।’ এরপরেই তিনি ফোন কেটে দেন। আর ফোন ধরেননি।
জানা যাচ্ছে, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে দুর্নীতির উৎস হল জাল শংসাপত্র। সাধারণ শ্রেণিভুক্ত অনেক মহিলা তপশিলি জাতি ও উপজাতির জাল শংসাপত্র দেখিয়ে দ্বিগুণ টাকা আদায় করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। একশ্রেণির অসাধু ব্যক্তি অর্থের বিনিময়ে অযোগ্যদের সুবিধে পেতে সাহায্য করেছে। এনিয়ে প্রশ্ন করা হলে রায়গঞ্জের মহকুমা শাসক কিংশুক মাইতি বলেন, ‘যাঁরা এই কাজ করছেন তাঁদের নাম সহ লিখিত অভিযোগ জানাতে হবে। আমরা অবশ্যই আইনানুগ পদক্ষেপ করব।’