সমীর দাস, কালচিনি: এতদিন চিতাবাঘ জঙ্গল ছেড়ে মূলত শীতের মরশুমে আশ্রয় নিত জঙ্গল সংলগ্ন চা বাগানে(Tea Garden)। তবে এখন দেখা যাচ্ছে গরমের মরশুমেও চা বাগানে চিতাবাঘের(Leopard) আনাগোনা শুরু হয়েছে। চলতি সপ্তাহে কালচিনির দুটি চা বাগানে দুজন জখম হয়েছেন চিতাবাঘের হামলায়। আর এতেই চা বাগানের শ্রমিক সহ বাগান কর্তৃপক্ষের মধ্যে চিতাবাঘের আতঙ্ক ছড়িয়েছে। তবে কি স্বভাব বদলে শীতের মরশুমের পাশাপাশি গরমেও নিশ্চিন্ত আশ্রয়স্থল হিসেবে চা বাগানের ঝোপ, শুষ্ক নিকাশিনালাকেই পছন্দের জায়গা হিসেবে বেছে নিয়েছে চিতাবাঘ? এই প্রশ্ন এখন কালচিনির(Kalchini) বিভিন্ন চা শ্রমিকের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে।
গত সোমবার ও মঙ্গলবার পরপর দু’দিন চিতাবাঘ হামলা চালায় দুজনের ওপর। প্রথম দিন সাইকেল নিয়ে যাওয়ার সময় আটিয়াবাড়ি চা বাগানে জখম হন স্থানীয় এক তরুণ। তার পরদিনই চিনচুলা চা বাগানে কর্মরত অবস্থায় এক মহিলা শ্রমিকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে একটি চিতাবাঘ।
চা বাগানের কাজের সঙ্গে দীর্ঘ বছর ধরে যুক্ত রয়েছেন চিনচুলা চা বাগানের ম্যানেজার সন্তোষ সাবর। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘এতদিন দেখে এসেছি জঙ্গল ঘেরা বেশিরভাগ চা বাগানে চিতাবাঘের উপদ্রব থাকতে। তবে শীতের মরশুমেই এতদিন চিতাবাঘ দেখা যেত চা বাগানে। শীতের মরশুমে যেহেতু চা গাছ পরিচর্যার কাজ চলে তাই খুব বেশি সমস্যা হয় না। তবে ইদানীং দেখা যাচ্ছে গরমকালে ভরা চায়ের মরশুমেও চিতাবাঘের আনাগোনা বেড়েছে। এতে শ্রমিকদের পাশাপাশি আমরাও উদ্যেগের মধ্যে আছি। তবে বন দপ্তর যথেষ্ট সহযোগিতা করছে। বাগানে খাঁচাও বসানো হয়েছে।’
বন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, শীতের মরশুমে চিতাবাঘ চা বাগানে আশ্রয় নেয় মূলত বাচ্চা প্রসব করার জন্য। শাবক প্রসবের পর তাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য মা চিতাবাঘ বেশ কিছুদিন চা বাগানের ঠান্ডা পরিবেশে শাবকদের রেখে দেয়। কিছুটা বড় হলে শাবকদের নিয়ে মা চিতাবাঘ জঙ্গলে ফিরে যায়। বন দপ্তরের তরফেও বলা হয়েছে আগে গরমের মরশুমে চিতাবাঘ খুব একটা চা বাগানে থাকত না। এখন গরমের মরশুমে চিতাবাঘ তাদের আস্তানা ছেড়ে চা বাগানে আসছে কেন?
এই বিষয়ে বক্সা ব্যাঘ্র-প্রকল্পের পানা রেঞ্জের রেঞ্জ অফিসার অর্ণব চৌধুরী জানিয়েছেন, এর পেছনে কিছুটা দায়ী মানুষ। এখন বাগানে যেখানে সেখানে মুরগি, ছাগলের দেহাংশ ও উচ্ছিষ্ট ফেলে রাখা হচ্ছে। চা বাগান সংলগ্ন জঙ্গলে সেই দেহাংশ ও উচ্ছিষ্টের গন্ধ পৌঁছে যাচ্ছে। সেই গন্ধের আকর্ষণে চিতাবাঘ চা বাগান এলাকায় চলে আসছে। এছাড়াও পাহাড়ি নদী শুকিয়ে যাওয়ায় অনেক সময় জলের সন্ধানে চিতাবাঘ লোকালয়ে আসছে বলে বন দপ্তর মনে করছে।
রেঞ্জ অফিসার বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন বাগান কর্তৃপক্ষকে এই বিষয়ে সচেতন করছি। বলছি শ্রমিকরা যেন মুরগি, ছাগলের দেহাংশ উন্মুক্তভাবে ফেলে না রাখেন। এতে চিতাবাঘের বাগানে প্রবেশের আশঙ্কা থেকে যায়।’
বনকর্মীরা মনে করছেন, গ্রীষ্মকালে চা বাগানে কৃত্রিম উপায়ে জলসেচ করা হয়। সেজন্য জঙ্গলের তুলনায় চা গাছের ঝোপ তুলনামূলকভাবে ঠান্ডা থাকে। এছাড়াও সেচের জল নিকাশিনালায় পড়ে বলে নিকাশিনালাও ঠান্ডা থাকে কিছুটা। চিতাবাঘ লোকালয়ে চলে আসার এটাও একটি কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।