পুণ্ডিবাড়িঃ পুলিশ প্রশাসনের সামনেই দিনভর চলল মদ, মাংস ও জুয়ার (Liquor-gambling party) উৎসব। এ যেন প্রচলিত সংস্কৃতির অন্দরে এক ভিন্ন উৎসব। তবে তা জনবসতিপূর্ণ এলাকায় নয়। একেবারে বনাঞ্চলের ভেতর। কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ার জেলার সীমান্তবর্তী পুণ্ডিবাড়ি থানার (Pundibari thana) অন্তর্গত পাতলাখাওয়া (Patlakhawa jungle) বনাঞ্চলের ছাঁট সিঙ্গিমারী এলাকায় প্রতি বছর পৌষ সংক্রান্তির পরদিন মহাকাল ধামের পুজোকে কেন্দ্র করে মেলা বসে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। মঙ্গলবার এই মেলা বসেছে। সেখানে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়। মেলায় অনেক দোকানপাটও বসে। তবে এই মেলা অন্য আর পাঁচটি মেলার চেয়ে একেবারেই আলাদা। এখানে দিনভর জুয়ার পাশাপাশি মদ, হাড়িয়া ও রকমারি পদের মাংস প্রকাশ্যে বিক্রি করতে দেখা গেল।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে এসবই হচ্ছে এই মেলার বিশেষ আকর্ষণ। এসবের টানেই দূর দূরান্ত থেকে বহু মানুষ এই মহাকাল মেলায় ছুটে আসেন। এদিন পুলিশ প্রশাসনের সামনে প্রকাশ্যে বসে রীতিমতো মদ ও জুয়ার আসর চলল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই জনসমাগম বাড়তে শুরু করে মেলা চত্বরে। প্রশাসনের নাকের ডগায় এভাবে মেলা বসায় প্রশাসনের সক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
যদিও জেলা পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য্য জানিয়েছেন, বিষয়টি তার জানা নেই। তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন। আর যেহেতু ওটা ফরেস্টের জায়গায় হয় তাই বিষয়টি বনদপ্তরেরও দেখা উচিত বলে তিনি জানান। অন্যদিকে কোচবিহার-২ ব্লকের বিডিও বিশ্বজিৎ মণ্ডল বলেন, আমার কাছে এই মেলার অনুমতির জন্য কেউ আসেনি। তাই আমার তরফে এধরনের মেলার কোনওরকম অনুমতি দেওয়া হয়নি। পূর্বে কেউ ওই মেলা বসার অনুমতি দিয়েছিল কি না তা আমার জানা নেই।
মেলা কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, পাতলাখাওয়া বনাঞ্চলের ছাঁট সিঙ্গিমারি গ্রামে তোর্সা নদীর ধারে প্রাচীন মহাকাল মন্দির রয়েছে। প্রতি বছর পৌষ সংক্রান্তির দিন সারারাত মন্দিরে বাৎসরিক পুজো অনুষ্ঠিত হয়। তাকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর পৌষ সংক্রান্তির পরদিন মেলা বসে। পুজোর জন্য সেখানে প্রচুর ভক্ত সমাগম হয়। বাংলা ১৩৭৭ সাল থেকে এই মহাকাল ধামের পুজো ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এই পুজোতে কোচবিহারের বিভিন্ন জায়গা ছাড়াও বহু দূরদূরান্তের মানুষেরা অংশ নিতে আসেন। মন্দির চত্বরে এ ধরনের কোনওরকম অসামাজিক কার্যকলাপ হয় না। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পুজো সম্পন্ন করে মন্দির চত্বর খালি করে দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন প্রতি বছর মকর সংক্রান্তিতে পাতলাখাওয়ার জঙ্গলের ভেতর মহাকাল বাবার পুজো অনুষ্ঠিত হয়। পরদিন এই পুজো উপলক্ষ্যে মেলা বসে। সেখানকার বিশেষত্ব হল দূর-দূরান্তের মানুষ সেখানে এসে পিকনিকের আয়োজন করা। কেউ যদি সঙ্গে করে কিছু না নিয়েও এই মেলায় আসে তাহলেও কোনও অসুবিধা নেই। সবকিছুই পাওয়া যায় হাতের নাগালে। এছাড়াও এই মেলায় প্রকাশ্যেই সুরা পানের ব্যবস্থা থাকে। তবে বিগত কয়েক বছর ধরে তা বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রামীণ এলাকায় তা কু প্রভাব ফেলছে। প্রশাসনের উচিত এসব বন্ধ করা।