মালবাজারঃ বুধবার দুপুরে মাল শহরের কলোনি ময়দানে গোর্খা জন মুক্তি মোর্চার সুপ্রিমো বিমল গুরুং হাত ধরে মঞ্চে আসলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা রাজ্য বিজেপির অন্যতম প্রধান মুখ শুভেন্দু অধিকারী। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে শুভেন্দু এদিন তৃণমূল কংগ্রেসের পুরসভা থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্তরের নেতৃত্বদের বিঁধেছেন। পাশাপাশি চা বলয়ের ভোট ব্যাংক এর বিষয়ে লক্ষ্য রেখে চা শ্রমিকদের একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।
শুক্রবার দুপুরে মাল শহরের কলোনি ময়দানে বিজেপির বিজয় সংকল্প সভা হয়। দুপুর আড়াইটা নাগাদ সময় বিমল গুরুংকে সঙ্গে নিয়ে মঞ্চে আসেন। শুভেন্দু, বিমল সকলে মিলে হাত উঠিয়ে অভিবাদন গ্রহণ করেন। যদিও মঞ্চে এদিন বিমল কোনও বক্তব্য রাখেন নি। শুভেন্দুর বক্তব্য শুরুর পূর্বেই তিনি চলেও যান। অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণভাবে বিমল থাকাকালীন সভাতে বিজেপির পাশাপাশি গোর্খা জন মুক্তি মোর্চার পতাকাতেও ছয় লাপ ছিল। শুভেন্দু বলেছেন মোর্চা এনডিএর শরিক। আমরা সমস্ত জনজাতির মানুষকেই গুরুত্ব দিচ্ছি। মোর্চার প্রচুর সমর্থক আজ সভায় এসেছিলেন। দেড় দশক পূর্বে এক সময় এই বিমল গুরুংকে কেন্দ্র করে মাল শহরে উত্তাপ ছড়িয়েছিল। পরে বিমলকে অবশ্য নানা সময়ে তৃণমূল বিজেপি নানা সঙ্গতে দেখা গেছে। তবে পূর্বে মাল শহরের কোনও জনসভাতে বিমলকে দেখা যায়নি। এদিনই প্রথম মাল শহরের কোনও জনসভা তে তিনি হাজির থাকলেন।
জনসভা থেকে ফিরে যাওয়ার পথে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিমল বলেছেন, বিভিন্ন সময় নানা রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি হয়। আমরা এবার বিজেপি প্রার্থীদের হয়ে পাহাড় ডুয়ার্সে প্রচার চালাচ্ছি।
এদিকে, চা বলয় ভোট ব্যাঙ্কে লক্ষ্য রেখে শুভেন্দু ভাষণে বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী গত ১২ বছর ঘুমিয়ে ছিলেন। ভোটের পূর্বে চা শ্রমিকদের পাট্টা প্রদান করছেন। আমরা বলছি বিজেপি প্রার্থীদের জেতান। রাজ্যেও ডাবল ইঞ্জিন সরকার আসবে। আমরা রাজ্যে সরকার গঠনের এক মাসের মধ্যে চা বাগানের শুধুমাত্র পাট্টা নয়, জমির মালিকানাই দিয়ে দেব। চা শ্রমিকদের মজুরি ৩৫০ টাকা করা হবে। বকেয়া প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থ উদ্ধার করা হবে। লক্ষ্মীর ভান্ডারের বদলে অন্নপূর্ণা ভান্ডার তৈরি করে তিন হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। শুভেন্দুর দাবি, বর্তমানে জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ার জেলাতে রাজ্য সরকার চা শ্রমিকদের আবাসে তৈরির জন্য যে এক লক্ষ কুড়ি হাজার টাকা প্রদানের কথা বলছে। তা রাজ্য সরকারের নয়। লেবার ওয়েলফেয়ার বোর্ডের। রাজ্য সরকার সেই টাকা নিয়ে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে দিচ্ছে। তৃণমূল কংগ্রেস তো রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জনজাতির প্রতিনিধি দ্রৌপদী মুর্মুর পক্ষে ভোটই দেননি।
শুভেন্দু বলেন মুখ্যমন্ত্রী এবং তার ভাইপো উত্তরবঙ্গকে গুরুত্ব দেন না। বাগডোগরা বিমানবন্দর সম্প্রসারণের জন্যও জমি প্রদান করা হয়নি। দুর্নীতির ইস্যু টেনে শুভেন্দুর অভিযোগ তৃণমূল উত্তরবঙ্গের জঙ্গল লুট করছে। জেলার এক গোপ নেত্রীর ভাইও বালি, পাথর পাচারের সঙ্গে যুক্ত। যদিও তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব বিজেপি এবং শুভেন্দুর অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলেই উড়িয়ে দিয়েছেন। জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল কংগ্রেস কমিটির সভানেত্রী মহুয়া গোপ, মাল পুরসভার পুরপ্রধান স্বপন সাহা বলেন, সবই ভিত্তিহীন অভিযোগ। মানুষই ভোটে জবাব দেবে।
এদিকে, গত বৃহস্পতিবার মালবাজারে জনসভা করে গেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে মাঠও ভরেনি। তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জোড় চর্চাও হয়েছিল। এদিন শুভেন্দুর জনসভার মাঠও যে পুরোপুরি ভরেছিল এমনটা নয়। যদিও সাংগঠনিক কারণ না শাসকদলের রক্তচক্ষুর জন্য বিজেপির জনসভায় আসতে না পারা তা নিয়েও চর্চা রয়েছে। তথ্যভিজ্ঞ মহলের মতে, এসব হিসেব-নিকেশেরই ফল জানা যাবে ভোট ফলাফলেই।