মিঠুন হালদার ও অর্ণব চক্রবর্তী, মুর্শিদাবাদ ও ফরাক্কা: রাজ্যের নজরকাড়া অন্যতম কেন্দ্র মুর্শিদাবাদ (Murshidabad)। মঙ্গলবার ভোট (Lok Sabha Election 2024) শুরু হতেই উত্তপ্ত হতে শুরু করে মুর্শিদাবাদের প্রত্যন্ত এলাকাগুলি। কোথাও বোমাবাজি, কোথাও দুই দলের সংঘর্ষ তো কোথাও ভোটারদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠতে থাকে। ইতিমধ্যে দুই দলের তরফে নির্বাচন কমিশনের কাছে দেড়শো’রও বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে। অভিযোগ করার তালিকায় অনেকটাই এগিয়ে সিপিএম। এই কেন্দ্রে সিপিএম প্রার্থী রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম (Md Salim)।
এদিন সকালে প্রথম অভিযোগ আসে মুর্শিদাবাদের গুধিয়া কাঁকসা হাই মাদ্রাসার ২৫৪ নম্বর বুথ থেকে। সিপিএম অভিযোগ করে, তাঁদের এজেন্টকে মারধর করেছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। মহম্মদ সেলিম দাবি করেন, তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে এলাকায় দাপাদাপি করেছে। ভেঙে দেওয়া হয়েছে তাঁদের দলীয় এজেন্টের বাইক। যদিও তৃণমূল নেতৃত্ব পালটা জোট সমর্থদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তোলেন।
এরপরই খবর আসে হরিহরপাড়া থেকে। কংগ্রেসের অভিযোগ, পাথরঘাটা গ্রামে দলের অঞ্চল সভাপতির বাড়ি লক্ষ্য করে বোমাবাজি করে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা। যদিও পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিত নিয়ন্ত্রণে আনে। এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ডোমকল থেকে বোমাবাজির অভিযোগ ওঠে। জোট সমর্থকরা দাবি করেন, তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা ভোটারদের ভয় দেখাতে বোমাবাজি করেছে। এরপরেই হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন খোদ জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী ধনঞ্জয় ঘোষ। অজগরপাড়ার ৮৮ নম্বর বুথে বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোটারদের প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ তোলেন তৃণমূল ব্লক সভাপতি। তাঁকে ধাক্কা দেওয়ারও অভিযোগ ওঠে। মুর্শিদাবাদের রানিনগরে এক ভুয়ো এজেন্টকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন সিপিএম প্রার্থী মহম্মদ সেলিম। এরপরই পুলিশ ওই ভুয়ো এজেন্টকে গ্রেপ্তার করে। তিনি নির্দল প্রার্থী রফিকুল ইসলামের বুথ এজেন্টের পরিচয় দিয়ে বুথে ঢুকেছিলেন। সেলিম বলেন, ‘আগে আমরা ভুয়ো সিবিআই অফিসার দেখেছি, ভুয়ো পুলিশ অফিসার দেখেছি। ভুয়ো ভোটার দেখেছি। এবার ভুয়ো এজেন্ট দেখলাম।’
এদিকে, মহম্মদ সেলিমকে ঘিরে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘গো ব্যাক স্লোগান’ দেওয়ার অভিযোগ উঠল। পালটা তৃণমূল কর্মীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে সেলিমের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি লোচনপুর পঞ্চায়েতের মোহনপুর ৩৯ নম্বর বুথের। আক্রান্ত তৃণমূল কর্মীর নাম সারিকুল ইসলাম। সারিকুলের অভিযোগ, সকালেই সিপিএম সমর্থকরা তাঁর উপর চড়াও হয়ে মারধর করে। মুর্শিদাবাদের গোপীনাথপুরে ৩৬ নম্বর বুথে ভুয়ো এজেন্ট হাতেনাতে ধরার পর গ্রামের ভিতর পরিদর্শন করেন তিনি। পুরো পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করেন। এলাকার বাসিন্দাদের আশ্বস্ত করেন ভোট দিতে যাওয়ার জন্য। তবে এখানেই তাঁকে ঘিরে গো ব্যাক স্লোগান ওঠে। তৃণমূল কর্মীদের একাংশ এই স্লোগান দেন বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে সিপিএমের তরফে।
এদিকে, স্থানীয় হিটলার সরকার নামে এলাকার এক তৃণমূল কর্মী মহম্মদ সেলিমের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ তুলেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, ‘মহম্মদ সেলিম আমায় মেরেছেন। আমার কলার ধরে টেনেছেন। ওঁকে গ্রেপ্তার করতে হবে।’ মহম্মদ সেলিমকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখানোর ঘটনায় রিপোর্ট চাইল নির্বাচন কমিশন।
যদিও এদিন জেলার দুই কেন্দ্রেই সকাল থেকে একটু ঢিমেতালে ভোট শুরু হয়। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটকেন্দ্রে বুথের সামনে ভোটারদের লম্বা লাইন চোখে পড়েছে।
বিক্ষিপ্ত ঘটনার খবর পাওয়া গেছে সামশেরগঞ্জে। ১২৫ এবং ১২৬ নম্বর বুথে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস চালানোর অভিযোগ তোলে কংগ্রেস। কংগ্রেস কর্মী ও পোলিং পার্টি মইদুল শেখকে মারধর করার অভিযোগ তোলা হয়। তাঁকে ধুলিয়ানের রতনপুর হাসপাতাল নিয়ে গেলে সেখান থেকে জঙ্গিপুর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করেন চিকিৎসকরা। অন্যদিকে, নিমতিতা অঞ্চলে ধানঘরা এলাকায় ১১৯ নম্বর বুথে কংগ্রেসের মণিরুল শেখকে মারধরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।