পূর্ণেন্দু সরকার, জলপাইগুড়ি: লোকসভা নির্বাচনের (Lok Sabha Election 2024) মুখে ভেঙে গেল কামতাপুর স্টেট ডিমান্ড কমিটি। অমিত রায়, নিখিল রায় ও তপতি রায় মল্লিকের মতো কামতাপুরি সংগঠনের তিন শীর্ষ নেতৃত্বের অবস্থানগত মতপার্থক্যের কারণেই এই ভাঙন। পৃথক রাজ্যের দাবিকে দূরে সরিয়ে লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসকে সমর্থন করছে কামতাপুর প্রগ্রেসিভ পার্টি।
তবে প্রগ্রেসিভ পার্টি তৃণমূলের (TMC) পাশে থাকলেও কামতাপুর পিপলস পার্টি (ইউনাইটেড) ও কারও পক্ষ না নিয়ে নিজেরাই প্রার্থী দিচ্ছেন। এমনকি কামতাপুর ডেমোক্র্যাটিক পার্টিও প্রার্থী দেওয়ার দিকে ঝুঁকে আছে। এই অবস্থায় লোকসভা নির্বাচনে কামতাপুরিদের ভোট তিনভাগে বিভক্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে।
কামতাপুর প্রগ্রেসিভ পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অমিত রায়, কামতাপুর পিপলস পার্টি ( ইউনাইটেড)-র কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নিখিল রায় এবং কামতাপুর ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেত্রী তপতি রায় মল্লিক গ্রেটার কোচবিহার সহ আরও কয়েকটি দল মিলে দু’বছর আগে কামতাপুর স্টেট ডিমান্ড কমিটি গঠন করেছিল। এই মঞ্চ থেকে পৃথক কামতাপুর রাজ্য গঠন ও ভাষার সংবিধানের অষ্টম তফশিলের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে ডেপুটেশন, রেল রোকোর মতো আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন।
কিন্তু লোকসভা ভোটের আগে অমিতের স্পষ্ট বার্তা, কামতাপুরিদের শিক্ষা, সংস্কৃতির উন্নয়নের জন্য ভাষা আকাদেমিকে আরও কার্যকরী করার জন্য তৃণমূলের পক্ষে রয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কামতাপুরি ভাষা আকাদেমির মাধ্যমে ভোটের পর আরও কাজ করার আশ্বাস দিয়েছেন। তাই তাঁরা কেন্দ্রের কাছে পৃথক কামতাপুর রাজ্য গঠন ও ভাষাকে সংবিধানের অষ্টম তফশিলের অন্তর্ভুক্তির দাবি জিইয়ে রেখেই বিজেপিকে ভোট দেবেন না। অমিত বলেন, ‘বিজেপি আমাদের ব্যবহার করেছে। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেই লোকসভা নির্বাচনে আছি।’
এপ্রসঙ্গে তৃণমূলের জেলা সভাপতি মহুয়া গোপের মন্তব্য, ‘রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তরবঙ্গ সফরে এসে পৃথক রাজ্যের বিপক্ষেই মতামত দিয়েছেন।’
এদিকে নিখিলের বক্তব্য, ‘সরকার পক্ষে থেকে জনজাতির দাবি আদায় করা সম্ভব নয়। আমরা নিজেরাই ভোটে প্রার্থী দেব বলে আপাতত সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
অন্যদিকে, ডিমান্ড কমিটির চিফ কনভেনার তপতির কথায়, সরকার পক্ষে যোগ দেওয়াতে প্রগ্রেসিভ পার্টি আমাদের কমিটিতে থাকছে না। আর নিখিল রায় সম্প্রতি ডিমান্ড কমিটির অনুমতি ছাড়াই সংবাদমাধ্যমে মন্তব্য করাতে তাঁর সঙ্গেও কমিটি থাকবে না।
এই পরিস্থিতিতে অমিত নিখিলকে প্রস্তাব দিয়ে বলেন, ‘এখনও নিখিলের জন্য একমঞ্চে থেকে কামতাপুরিদের জন্য উন্নতি করার দরজা খোলা আছে। তবে রাজ্য সরকারের কাছে পৃথক রাজ্যের দাবি নিয়ে এই মুহূর্তে কোনও আন্দোলন করার পরিকল্পনা নেই।
এদিকে, নিখিল ও তপতি উভয়েই জানান, রাজ্য ও কেন্দ্র উভয়ের কাছেই আলাদা রাজ্যের দাবিতে পৃথকভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। ভোটে আপাতত কোনও রাজনৈতিক দলের পক্ষ তাঁরা নিচ্ছেন না বলেই জানিয়ে দেন।
যদিও কামতাপুরিদের ভোট নিজেদের ঝুলিতে টানতে বিজেপির জেলা সভাপতি বাপি গোস্বামীর বক্তব্য, ‘প্রধানমন্ত্রী কাওয়াখালিতে এসে রাজবংশী ও কামতাপুরিদের প্রতি সহানুভুতি দেখিয়েছেন। বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্পে জনজাতিদের অনেক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।’
লোকসভা নির্বাচনের মুখে কামতাপুরি ও রাজবংশীদের কাছে পেতে রাজনৈতিক দলগুলি বিভিন্নভাবে তাঁদের বোঝাচ্ছে। কিন্তু স্টেট ডিমান্ড কমিটির শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে ভাঙন তৈরি হওয়াতে কামতাপুরি ভোট ভাগাভাগি যে এই নির্বাচনে হতে চলেছে তা একপ্রকার পরিষ্কার।