মহম্মদ হাসিম, নকশালবাড়ি: শিয়রে লোকসভা নির্বাচন (Lok sabha election 2024)। কিন্তু ক্ষুব্ধ নকশালবাড়ির (Naxalbari) সংখ্যালঘুরা। বেহাল রাস্তা ও নিকাশি, পানীয় জলসমস্যাও তীব্র। ফলত, জেরবার নকশালবাড়ির বহু সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মহল্লা। নদী বস্তি, কালুয়াজোত, ছোটপুল, কেরকেরু বস্তি, সাউরিয়া বস্তি, পাগলা বস্তি, কেটুগাবুরজোতের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মহল্লাগুলিতে অমিল সরকারি পরিষেবার তালিকা দীর্ঘ।
এলাকাগুলিতে ঢুকতেই নানা সমস্যার ছবি প্রকট হয়। স্থানীয়রা জানান, এলাকাগুলিতে বহুদিন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। অতীতে সিপিএম এখন তৃণমূল কেউ-ই তাঁদের খোঁজ রাখে না। শহর লাগোয়া কিছু সংখ্যালঘু নেতার বাড়ির সামনের রাস্তা পাকা হলেও প্রান্তিক এলাকায় উন্নয়ন স্তব্ধ। নেপাল সীমান্ত লাগোয়া এলাকাগুলির প্রাথমিক পরিকাঠামো নিয়ে বিস্তর অভিযোগ। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা কেরকেরু বস্তির বাতারিয়া নদী থেকে পাগলা বস্তি পর্যন্ত প্রায় দু’কিমি রাস্তার। এটি একদা নেপালের বামুনডাঙ্গি রাস্তা নামে পরিচিত ছিল। ব্রিটিশ আমল থেকেই সাপ্তাহিক হাটে নেপালি ব্যবসায়ীরা এ পথে ঘোড়া, মোষের গাড়িতে পণ্য আনা-নেওয়া করতেন। নকশালবাড়ি ও মণিরাম গ্রাম পঞ্চায়েত লাগোয়া দশটি সংসদের প্রায় হাজার দশেক মানুষ দৈনিক এই রাস্তা ব্যবহার করেন। শতাব্দীপ্রাচীন রাস্তাটিতে এখন প্রাণ হাতে চলতে ভরসা পান না তাঁরা।
২০২২-এর পঞ্চায়েত ভোটে (Panchayat Vote) টোটো থেকে পড়ে একজনের মৃত্যুতে উত্তপ্ত হয়েছিল এলাকা। কিলারামের মহম্মদ মনসুর বলেন, ‘বেহাল রাস্তার জন্য গ্রামবাসীরা পঞ্চায়েত ভোট বয়কটের ডাক দেন। কিন্তু পরে প্রতিশ্রুতি পেয়ে তাঁরা বুথে যান। তারপরও রাস্তাটি পাকা হয়নি। গত তিন বছরে এলাকায় রাস্তা, পানীয় জল, বাঁধ মেরামতি কিছুই হয়নি। উধাও জনপ্রতিনিধিরাও।’ একই অবস্থার শিকার সাউরিয়া বস্তি, কেরকেরু, পাগলা বস্তির। কেরকেরুর মহম্মদ আকবরের কথায়, ‘দু’বছর আগে কিছু জায়গায় জলের পাইপ বসেছিল। গ্রামে কিছু নলকূপ বসানো হলেও তাতে জল নেই। চাতকের মতো গ্রামবাসীরা জলের অপেক্ষায় থাকেন। রাস্তা সংস্কারের জন্য বহুবার শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের সভাধিপতিকে চিঠি দিয়েও কাজ হয়নি।’
আবাস যোজনায় অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় গুলেসা বেগমের প্রশ্ন, ‘দু’বছর আগে পানীয় জলের পাইপ বসেছে, কিন্তু জল কোথায়?’ নিকাশির নামগন্ধ নেই। রাস্তাঘাটও তথৈবচ। রোগী নিয়ে এ পথে চলা কঠিন। ওই গ্রামেরই হাবিবা খাতুনের মন্তব্য, ‘সরকারি প্রকল্পের কিছু সুবিধে পেলেও আমরা উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত। স্বামী ট্র্যাক্টর থেকে পড়ে অসুস্থ। তিন বছর আগে আবাস যোজনার ঘরের আবেদন করেও মেলেনি। গরমে এখানে তীব্র জলসমস্যা হয়।’ দক্ষিণ তোতারামজোতের পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী মহম্মদ কালু এ সম্পর্কে বলেন, ‘এখানে উন্নয়ন নেই। নিকাশিনালাগুলি নিজেরাই সাফাই করি। পঞ্চায়েত প্রধান গুরুত্ব দেন না।’ কালুয়াজোতের মহম্মদ গোলামের দাবি, ব্রিটিশ আমল থেকেই এখানে সংখ্যালঘুদের বাস। কিন্তু উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রশাসন, জনপ্রতিনিধির চোখে ঠুলি। কিন্তু মণিপুর, বাংলাদেশ, নেপাল থেকে মানুষজনের বসতিতে সব সরকারি পরিষেবা মেলে। এই বৈষম্য নিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন। এ নিয়ে বিডিও বা প্রশাসনের কেউই মুখ খোলেননি।