ভাস্কর বাগচী, শিলিগুড়ি: পাহাড় আছে পাহাড়েই। গত লোকসভা ভোটের মতো এবারও ভোটের (Lok sabha election 2024) ময়দানে রয়েছেন পুরোনো ঘুঁটিরা। কেউ একেবারে সামনের সারিতে, কেউ আবার একটু আড়ালে। বদলে যাওয়া রাজনৈতিক ছকে ছক মিলিয়ে উঠছে সেই গোর্খাল্যান্ডের আওয়াজও। বিমল গুরুং, অনীত থাপা, বিনয় তামাং, বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা, অজয় এডওয়ার্ড, সবাই নিজ নিজ নীতি-আদর্শ ও সমর্থন নিয়ে নেমেছেন ভোটের ময়দানে। কিন্তু যা নেই, সেটা হল পাহাড়ের মানুষের ভোট নিয়ে আগের মতো সেই আবেগ।
গত লোকসভা ভোটেও যে পাহাড়ে পৃথক রাজ্যের সমর্থনে এককাট্টা হয়েছিল, এবার তা অনেকটাই ফিকে। রাজনৈতিক দলগুলি প্রতিবারের মতো এবারও গোর্খাল্যান্ডের স্লোগান তুললেও সেই আশ্বাসে এখন আর মন ভেজে না পাহাড়ের মানুষের। তাই পাহাড়ের কোন নেতা, কোন দলের সঙ্গে জোট করলেন তা নিয়ে বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই অধিকাংশের।
দার্জিলিংয়ের (Darjeeling) ওল্ড ক্লাব সাইডে কথা হচ্ছিল গাড়িচালকদের। বিনয় লামা নামে এক গাড়িচালক বলছিলেন, ‘আচ্ছা বিমল দাজু (বিমল গুরুং) এবার ভোটে দাঁড়াবেন না?’ পাশে দাঁড়ানো অন্য এক গাড়ির চালক উত্তর দিলেন, ‘না, বিমল দাজু এবার রাজু বিস্টকে (Raju Bidta) সমর্থন করছেন।’ শুনে বিনয় বিরক্তির সুরে বলেই ফেললেন, ‘আবারও তাহলে আমাদের গোর্খাল্যান্ডের আশ্বাস মুখ বুজে শুনতে হবে!’ বিনয়ের কথা শুনে হেসে কুটিপাটি অন্য চালকরা।
২০১৭ সালের হিংসাত্মক আন্দোলনের পর পাহাড়ের রাশ অনেকটাই নিজের হাতে নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্ষমতা দখল করতে না পারলেও, তিনি অন্তত এটা বোঝাতে চেয়েছন, উন্নয়ন ছাড়া গতি নেই। রাজ্যভাগের পক্ষে তিনি কোনওমতেই সায় দেবেন না। তাই বিজেপি যতই জিগির তুলুক, তা সম্ভব নয়। আবার রাজ্যকে এড়িয়ে যে গোর্খাল্যান্ড সম্ভব নয়, তা-ও বুঝে গিয়েছেন পাহাড়ের শিক্ষিত মানুষ। তাই আবেগ দূরে সরিয়েই এখন ভোট দিতে চান মানুষ।
চকবাজারে দাঁড়িয়ে বেসরকারি কোম্পানির প্রতিনিধি সুরজ ছেত্রী বললেন, ‘ভোট দেব ঠিকই। এটা আমাদের অধিকার। কিন্তু আমাদের উন্নয়নের কথা যারা বেশি করে ভাববেন, তাঁদেরই আমরা ভোট দেব।’
ম্যালের রেস্তোরাঁর ব্যবসায়ী সুরেশ প্রসাদের কথায়, ‘আমরা খুব ভালো আছি। কোনও ঝামেলা নেই। চারদিকে শান্তি। ভোটের সময় নেতারা যাই বলুক না কেন, এখানকার মানুষ আর এখন প্রতিশ্রুতির জোয়ারে গা ভাসাতে চান না।’
পাহাড়ে ভোট নিয়ে যে তেমন উৎসাহ নেই, তা বোঝা গেল, শিলিগুড়ি (Siliguri) থেকে দার্জিলিং যাওয়ার পথে ৫৫ নম্বর জাতীয় সড়কে। শালবাড়ি থেকে কার্সিয়াং পর্যন্ত রাস্তায়, এতটা দূরে চোখে পড়ল মাত্র ৪টি হোর্ডিং। যেখানে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী গোপাল লামা ও অনীত থাপার ছবি রয়েছে। হাতেগোনা দু’একটি জায়গায় দেখা গেল অজয় এডওয়ার্ডের হামরো পার্টির পতাকা। বাকি জায়গা পুরো ফাঁকা। কার্সিয়াং, সোনাদা, ঘুম কিংবা দার্জিলিংয়ের মানুষ যে যার নিজের কাজকর্ম নিয়ে ব্যস্ত। চায়ের দোকান, পানের দোকানেও ভোট নিয়ে তেমন চর্চা নেই এবার। যা দেখে অনেকেই বলছেন, পাহাড় কিন্তু বদলে গিয়েছে।