বাগ্রাকোট ও মালবাজারঃ প্রচারে বেরিয়ে তৃণমূলের ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে পড়লেন জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রের বিদায়ী সাংসদ ডা জয়ন্ত রায়। বুধবার বিকেলে বিজেপি প্রার্থী জয়ন্ত রায়ের প্রচারে গেলে প্রার্থীর কনভয় আটকে বাগ্রাকোটে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূল কংগ্রেস। কনভয়ে বিদায়ী সাংসদের গাড়ি ঘিরে “গো ব্যাক” স্লোগান দেওয়ার পাশপাশি জয়ন্ত রায়কে কালো পতাকা দেখায় তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা। যদিও বিক্ষোভ চলাকালীন তৃণমূলের পতাকা বিক্ষোভকারীদের হাতে দেখা যায় নি।
এদিকে আগাম কোনও আভাস ছাড়া হঠাৎ করেই বিজেপি প্রার্থী জয়ন্ত রায়কে কালো পতাকা দেখিয়ে ‘গো ব্যাক’ স্লোগানের পর প্রাথমিক জড়তা কাটিয়ে পালটা স্লোগান দিতে শুরু করেন কনভয়ে থাকা বিজেপির মাল উত্তর মন্ডল কমিটির সভাপতি প্রদীপ তির্কী, মাল বিধানসভার কনভেনার রাকেশ নন্দী সহ অন্য কর্মীরাও। এরপরই সেখানকার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। শুরু হয় দু দলের সমর্থকদের মধ্যে ধস্তাধস্তি, হাতাহাতি। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় মালবাজার থানার পুলিশকে।
এদিন বিকেলে বাগ্রাকোট হাইস্কুলের সামনে প্রচার সেরে গজলডোবার উদ্দেশ্যে রওনা হয় জয়ন্ত রায়ের কনভয়। বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ রেললাইন পেরিয়ে ১৭ নম্বর জাতীয় সড়কের মিনা মোড়ে বিরসা মূর্তির সামনে বিজেপি প্রার্থীর কনভয় এসে পৌঁছাতেই ফের বিক্ষোভের মুখে পড়েন বিজেপি প্রার্থী। সেখানে আগে থেকেই অপেক্ষায় ছিল তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা। বিক্ষোভ চলাকালীন গাড়ির কাঁচ উঠিয়ে রেখেছিলেন জয়ন্ত বাবু। তুমুল ধস্তাধস্তি, গাড়িতে এলোপাথাড়ি চড় চাপড়ের পর কোনওমতে পুলিশি হস্তক্ষেপে বিক্ষোভস্থল থেকে বেরিয়ে গজলডোবার উদ্দেশ্যে ফের যাত্রা শুরু করেন প্রার্থী।
যাওয়ার পথে টেলিফোনে জয়ন্ত রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সরাসরি তৃণমূলের বাগ্রাকোট অঞ্চল কমিটির সভাপতি রাজেশ ছেত্রীর নেতৃত্বে তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনী তার গাড়ির ওপর হামলা করেছে বলে অভিযোগ করেন। এ বিষয়ে পাল্টা প্রশ্ন তুলে জয়ন্ত রায় বলেন,”আমি প্রচারে গেলে তৃণমূলের এত আপত্তি কেন? আসলে তৃণমূলের পায়ের নীচের মাটি সরে গিয়েছে। সে জন্যই এমন আক্রমণের রাস্তা বেছে নিয়েছে।”পুরো বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দায়ের করা হবে বলে জানিয়েছেন বিজেপি প্রার্থী জয়ন্ত রায়।
অন্যদিকে, তার বিরুদ্ধে বিজেপি প্রার্থীর তোলা অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের বাগ্রাকোট অঞ্চল কমিটির সভাপতি রাজেশ ছেত্রী বলেন, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বাগ্রাকোটের মানুষ একতরফা ভাবে জয়ন্ত রায়কে ঢেলে ভোট দিয়েছিলেন। প্রতিদানে গত ৫ বছরে বাগ্রাকোটের জন্য পাঁচ টাকাও বরাদ্দ করেন নি বিদায়ী সাংসদ। এমনকি এলাকায় দেখাও যায় নি তাকে। সে কারণেই সাধারণ মানুষের জয়ন্ত রায়ের ওপর চাপা ক্ষোভের এদিন বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বাগ্রাকোটে। তার বিরুদ্ধে গো ব্যাক স্লোগান উঠেছে। সাধারণ মানুষের ক্ষোভ যাতে অনিয়ন্ত্রিত না হয়ে ওঠে সেজন্যই খবর পাওয়া মাত্রই আমি এসে বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করেছি।
যদিও ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ ও বাগ্রাকোটের তৃণমূল নেত্রী সেলিনা ছেত্রী অতটা রাখঢাক না করে স্পষ্ট ভাষায় বলেন,”এটা তো জাস্ট ট্রেলার ছিল, জয়ন্ত রায় বাগ্রাকোটে আবার প্রচারে এলেও একইভাবে বিক্ষোভের মুখে পড়বেন তিনি। বাগ্রাকোটের সাধারণ মানুষ তার ওপর এতটাই ক্ষেপে রয়েছেন যে এবারের নির্বাচনে তিনি উপযুক্ত জবাব পাবেন।”