উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে বিকেল। সময় যত এগিয়েছে কালীঘাটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির সামনে ভিড়টা ততই জমাট বেঁধেছে। সবুজ আবিরে মাখা মুখগুলো ক্রমশ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। তুলনায় ম্লান দেখিয়েছে মুররীধর সেন লেনে রাজ্য বিজেপির সদর দপ্তর। কারণ বাংলা আবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশেই দাঁড়িয়েছে। অথচ এমনটা যে হতে পারে তা কিন্তু আন্দাজ করেননি তাবড় তাবড় ভোটপণ্ডিতরা। বরং তৃণমূলের বিরুদ্ধে যে ইস্যুগুলো বড় হয়ে উঠেছিল তারমধ্যে রয়েছে শিক্ষা দুর্নীতি, সন্দেশখালির মতো ইস্যু ছিল বিরোধীদের হাতে। ফলে অতিবড় তৃণমূল সমর্থকও এতটা ভাল ফল আশা করেননি। কিন্তু কোন অঙ্কে বাংলার মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়ালেন। সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, ভোটের ফলাফলে (Lok sabha election result 2024) পশ্চিমবঙ্গে ২৯ আসনে এগিয়ে তৃণমূল। বিজেপির দখলে যেতে পারে ১২টি আসন। কংগ্রেস ১ টি আসনে জিততে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মূলত ২টো ফ্যাক্টর সরাসরি তৃণমূলের পক্ষে গিয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম লক্ষ্মীর ভাণ্ডার (Lakshmir bhandar) সহ বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক প্রকল্প। ভোটের ঠিক আগেই লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে টাকার পরিমাণ দ্বিগুন করে বাড়িয়ে ১০০০ টাকা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তপশিলি জাতি উপজাতির মহিলাদের ক্ষেত্রে এই পরিমাণ ১২০০। স্বাভাভিকভাবেই এই সিদ্ধান্তের সুফল পেয়েছে তৃণমূল। মহিলারা ঢেলে ভোট দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসকে। অন্যদিকে আরও একটি বিষয় জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলে ধরতে পেরেছে তা হল কেন্দ্রের বঞ্চনা। ১০০ দিনের কাজে দীর্ঘদিন ধরে টাকা বন্ধ রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তৃণমূল এনিয়ে কেন্দ্রের বঞ্চনার তত্ত্বকেই প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। যা মেনে নিয়েছেন ভোটাররা। এর পাশাপাশি বিরোধীদের হাতে শিক্ষা দুর্নীতি, র্যাশন দুর্নীতির মতো ইস্যু থাকলেও তা ভোট বাক্সে কোনও প্রভাব ফেলেনি। যে দুর্নীতিতে তৃণমূল সরকারের একাধিক নেতামন্ত্রী জেলে, আদালতের রায়ে চাকরি হারাতে হচ্ছে শিক্ষকদের, সেই দুর্নীতির ইস্যু ভোট আবহে পেছনের সারিতে চলে গিয়েছে। একই ভাবে লোকসভা ভোটের আগে সন্দেশখালি ইস্যু বাংলাকে তোলপাড় করলেও তা কার্যত বুমেরাং হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারনা নির্বাচনের ফলাফলে এটা পরিষ্কার আরও একবার দুর্নীতি-সন্ত্রাসের মতো ইস্যু কেন্দ্রীক প্রচারকে জনকল্যাণমূলক প্রকল্প দিয়ে ভোঁতা করে দিতে পেরেছে তৃণমূল।