সুভাষ বর্মন, শালকুমারহাট: জেলার মোট ভোটব্যাংকের (Loksabha election 2024) ১২ থেকে ১৫ শতাংশ মতুয়া (Matua)। বলছেন তৃণমূল (TMC) ও বিজেপির (BJP) নেতারা। এতদিন নাকি সেই ভোটব্যাংকে আধিপত্য ছিল ঘাসফুল শিবিরের। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) কার্যকর হওয়ায় উদ্বাস্তু বাসিন্দারা খুশি। আর আলিপুরদুয়ার জেলায় উদ্বাস্তুদের একটা বড় অংশ মতুয়া সম্প্রদায়ের। তাহলে এবার সেই মতুয়া ভোট কার ঝুলিতে যাবে? এটাই আপাতত স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে সব থেকে আলোচিত প্রশ্ন।
দুই দলেরই নীচুতলার কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সিএএ ঘোষণার পর মতুয়া ভোটে আধিপত্য নিয়ে খানিকটা হলেও চাপে তৃণমূল। যদিও তৃণমূলের উদ্বাস্তু ও নমশূদ্র সেল তা মানতে নারাজ।
সংগঠনের জেলা সভাপতি বিপ্লব সরকার জানালেন, ‘উদ্বাস্তু হলেও অনেক আগেই সবার আধার কার্ড, ভোটার কার্ড হয়েছে। ভোটও সবাই দেন। তাই ফের আরেকবার নাগরিকত্ব নেওয়ার কোনও মানে নেই।’ তাঁর কথায়, ‘সিএএ হল বিজেপির ভোটের গিমিক। এই জেলায় মতুয়া সহ অধিকাংশ উদ্বাস্তু তৃণমূল সমর্থক। এতে বিজেপি কোনও ফায়দা নিতে পারবে না।’
আলিপুরদুয়ার-১ (Alipurduar) ব্লকের শালকুমারহাট, পূর্ব কাঁঠালবাড়ি, ফালাকাটা ব্লকের ভুটনিরঘাট, পশ্চিম ফালাকাটা, আড়াই মাইল, আসাম মোড় ও আলিপুরদুয়ার-২ ব্লকের টটপাড়া, ডাঙ্গি, যশোডাঙ্গা, জোড়াই এলাকায় মতুয়াদের বাস। শালকুমারহাটে তাঁদের সংখ্যা কিছুটা বেশি। এখানেই ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মতুয়া মহাসংঘের হরিচাঁদ ঠাকুরের অশ্বিনী গোঁসাইয়ের মন্দির। এখন এই ভোটব্যাংককেই পাখির চোখ করতে চাইছে বিজেপি।
দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা ফালাকাটার বিধায়ক দীপক বর্মনের কথায়, ‘মতুয়া সহ অন্য হিন্দু উদ্বাস্তুদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। কারণ, এতদিন উদ্বাস্তুদের বাইরে থেকে আসার একটা তকমা শুনতে হয়েছিল। এই আইনের মাধ্যমে সেসব আর রইল না। তাই মতুয়া সহ অন্য উদ্বাস্তুদের রায় নিশ্চিতভাবেই আমরা পাব।’
কিন্তু এখানকার মতুয়াদের একাংশ যে তৃণমূল ঘনিষ্ঠ, তা পদ্ম শিবিরেরও ভালোভাবেই জানা। তাই বিজেপি উদ্বাস্তু সেলের জেলা আহ্বায়ক জীবনকৃষ্ণ মজুমদার বলছেন, ‘মতুয়া সম্প্রদায়ের সবাই খুশি। কেউ কেউ প্রকাশ্যে আমাদের সংগঠনে না এলেও সেই খুশির প্রভাব ইভিএমে অবশ্যই পড়বে।’
তবে সাধারণ মতুয়ারা অবশ্য রাজনীতির বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ। ফালাকাটার নিমাই মজুমদারের কথায়, ‘অসম থেকে ফালাকাটায় এসেছিলাম ৪০ বছর আগে। এখন পাকাপাকিভাবে নাগরিকত্ব পাব বলে ভালো লাগছে। তবে ভোট কাকে দেব তা ব্যক্তিগত ব্যাপার।’ আর অরাজনৈতিক মতুয়া মহাসংঘের জেলা সাধারণ সম্পাদক নির্মলকৃষ্ণ বালার বক্তব্য, ‘নাগরিকত্ব পাব বলে এখন সবাই আশাবাদী। কিন্তু এজন্য আবেদন করতে হলে কী কী নথির প্রয়োজন তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে। আবার কেউ কেউ সিএএ চালু হতেই আবেগে আত্মহারা।’ তবে রাজনীতির বিষয়ে তিনিও কিছু বলতে চাননি।