দেওয়ানহাট: তৃণমূল কংগ্রেসকে ঠেকাতে উনিশের লোকসভা ভোটে রাজ্যজুড়ে হাওয়া উঠেছিল ‘আগে রাম, পরে বাম’। আর সেই হাওয়াতেই বামেদের বহু ভোট চলে গিয়েছিল বিজেপিতে। বাম নেতারা সেকথা প্রকাশ্যেই স্বীকার করেন। তবে তারপরও সেবার কোচবিহার আসনে বামেদের ঝুলিতে গিয়েছিল প্রায় ৪৭ হাজার ভোট। কংগ্রেস পেয়েছিল ২৮ হাজারের কিছু বেশি। আর তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির ভোটের ব্যবধান ছিল প্রায় ৫৪ হাজার। এবারে পরিস্থিতি বদলেছে। নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নিজেদের হারানো জমি পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট সিপিএম, ফরওয়ার্ড ব্লক সহ বাম দলগুলি। এমতাবস্থায় বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস যদি নিজেদের ভোট ধরে রাখে তবে আসন্ন লোকসভা ভোটে কোচবিহারে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে বিজেপি।
মাথাভাঙ্গা, কোচবিহার উত্তর, কোচবিহার দক্ষিণ, শীতলকুচি, সিতাই, দিনহাটা ও নাটাবাড়ি- এই সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রের বিন্যাস। জেলার মেখলিগঞ্জ ও তুফানগঞ্জ বিধানসভা ক্ষেত্র যথাক্রমে জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। কোচবিহার দীর্ঘদিন বামেদের শক্ত গড় হিসাবে পরিচিত ছিল। কিন্তু ২০১৬ সালে তৃণমূল কংগ্রেস দ্বিতীয়বারের জন্য রাজ্যে ক্ষমতায় আসতেই তা কার্যত ধূলিসাৎ হয়ে যায়। উনিশের লোকসভা ভোটে বিজেপির হয়ে সিংহভাগ বাম ভোট নিজের পালে টেনে জয়ের মালা গলায় তোলেন একদা তৃণমূলি নিশীথ প্রামাণিক। কিন্তু তারপর তোর্ষা, মানসাই দিয়ে বহু জল গড়িয়েছে। একদিকে পদ্ম শিবিরের কড়া চ্যালেঞ্জ সামলে তৃতীয়বারের জন্য রাজ্যের ক্ষমতায় এসেছে ঘাসফুল শিবির। অপরদিকে, সিপিএম একঝাঁক তরুণ মুখকে সামনে এনে একযোগে তৃণমূল, বিজেপি বিরোধিতায় সুর চড়িয়েছে। এর ফল কি মিলবে? সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদক অনন্ত রায়ের কথায়, ‘জেলার সাধারণ মানুষ ওই দুই দলের কর্মকাণ্ডে তিতিবিরক্ত। তাই এবারে তাঁরা নিজেদের ভুল শুধরে আমাদের প্রার্থীকেই ভোট দেবেন।’
ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক অক্ষয় ঠাকুরও বাম ভোট বৃদ্ধির বিষয়ে যথেষ্ট আশাবাদী। এদিকে কংগ্রেসের জেলা কার্যনির্বাহী সভাপতি রবীন রায়ের বক্তব্য, ‘জোট হবে নাকি আমরা পৃথকভাবে লড়ব তার ওপর ভোট বৃদ্ধির বিষয়টি নির্ভর করছে।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলে থাকেন, উনিশের লোকসভা ভোট থেকে শিক্ষা নিয়ে তৃণমূল রাজ্যজুড়ে বামফ্রন্টকে অনেকটা জায়গা ছেড়েছে। তাই তো তারা একের পর এক কর্মসূচি করতে পারছে। আর বাম, কংগ্রেস বাড়লে তাদের যে সমস্যা নেই তা তৃণমূলের রাজ্য মুখপাত্র পার্থপ্রতিম রায়ের বক্তব্যে স্পষ্ট। তাঁর কথায়, ‘আমরা চাই বাম, কংগ্রেস যদি সত্যিই বিজেপি বিরোধী হয় তাহলে সর্বশক্তি দিয়ে নামবে। আর তাদের ভোট যদি বাড়ে তাহলে ফলাফলে নিশ্চিত কিছু অদলবদল হতেই পারে।’ একইসঙ্গে আসন্ন লোকসভা ভোটে তৃণমূল অত্যন্ত ভালো জায়গায় রয়েছে বলেও জানান তিনি। এদিকে বিজেপি নেতৃত্ব বাম, কংগ্রেসের ভোটকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। দলের জেলা সভাপতি সুকুমার রায়ের বক্তব্য, ‘২০১৯ সালে সাধারণ মানুষ আবেগে বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলেন। তারপর জেলার সর্বত্র আমাদের সংগঠন শক্তিশালী হয়েছে। স্বভাবতই এখন সাংগঠনিক ভোটের ভিত্তিতে আমরা তৃণমূলের চেয়ে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করব।’