সায়নদীপ ভট্টাচার্য,বক্সিরহাট: মেয়ের প্রেমিককে মেনে নিতে তরুণীর পরিবারের সদস্যরা রাজি হননি। তাই নিজের পছন্দের মানুষের সঙ্গে ঘর বাঁধবেন বলে ওই তরুণী ঘর ছেড়েছিলেন। আর সেই রাগে ওই তরুণীর পরিবারের সদস্যরা তাঁর প্রেমিক তরুণের বাড়িতে ভাঙচুর চালালেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই–ই নয়, মেয়েটির পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ওই তরুণের বাড়িতে গিয়ে ছয় মাসের এক শিশুকন্যাকে মাটিতে ছুড়ে ফেলার অভিযোগও রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে ওই তরুণীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়ান। গোটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে তুফানগঞ্জ-২ ব্লকের বারকোদালি -১ গ্রাম পঞ্চায়েতের ভান্ডিজেলাস এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। উত্তেজনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সবকিছু জানিয়ে ওই তরুণের পরিবার শুক্রবার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, ভান্ডিজেলাস এলাকার বাসিন্দা একজনের ছোট ছেলের সঙ্গে পাশের বাঁশরাজা গ্রামের বাসিন্দা একজনের মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দুজনেই প্রাপ্তবয়স্ক হলেও তরুণীর পরিবার সেই সম্পর্ক মেনে নিতে কোনওমতেই রাজি ছিল না। তাই পালিয়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়ে দুজনে গত সোমবার ঘর ছাড়েন। তারপর অনেক বুঝিয়ে-সুঝিয়ে বৃহস্পতিবার ওই তরুণের পরিবার তাঁদের বাড়ি ফিরিয়ে আনে। সেদিন বিকেলেই দুই পরিবারকে নিয়ে গ্রাম্য সালিশি সভা বসে। রেজিস্ট্রি করে বিয়ে হবে বলে শুক্রবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দুই পরিবারই এতে রাজি হয়েছিল। তখনকার মতো সকলেই বাড়ি ফিরে যান। কিন্তু অভিযোগ, ওই তরুণীর পরিবার কয়েক ঘণ্টা বাদে আচমকাই ওই তরুণের বাড়িতে চড়াও হয়। টিনের ঘরে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। বহু আসবাবপত্র ভেঙে ফেলা হয়। ওই তরুণের ছয় মাসের ভাইঝিকে মাটিতে ছুড়ে ফেলা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। তাতে শিশুটি বেশ জখম হয়েছে। বাসিন্দারা এই ঘটনাটি মেনে নিতে পারেননি। তাঁরা প্রতিবাদ করেন। তবে তরুণীর পরিবারের সদস্যরাও কিছু মানতে রাজি ছিল না। তাঁরা স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। খবর পেয়ে পুলিশ রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।
ওই তরুণীর পরিবারের সদস্যদের শাস্তির দাবি জানিয়ে তরুণের বাবা শুক্রবার থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি বলেন, ‘দুই পরিবারের উপস্থিতিতেই সালিশি সভা হয়েছিল। মেয়ের পরিবার এই বিয়েতে রাজি হয়েছিল। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তের কয়েক ঘণ্টা বাদেই মেয়ের বাড়ির লোকজন এসে আমাদের বাড়িতে রীতিমতো তাণ্ডব শুরু করে। আমার ছয় মাসের নাতনিকে মাটিতে ছুড়ে ফেলা হয়। তড়িঘড়ি তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। নাতনির জ্বর এসেছে।’ এলাকার এক বাসিন্দা বললেন, ‘গ্রাম্যসভায় প্রধান ও পঞ্চায়েতের উপস্থিতিতে দুজনের চারহাত এক করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তাতে দুই পরিবারই রাজি হয়েছিল। যে যার মতো বাড়িও ফিরে গিয়েছিল। আচমকাই তরুণীর পরিবারের সদস্যরা তরুণের বাড়িঘরে ভাঙচুর শুরু করে। নৃশংসভাবে ছয় মাসের এক শিশুকে ছুড়ে মাটিতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। ঘটনায় প্রতিবাদ জানাতে গেলে উলটে আমাদের ওপর আক্রমণ করা হয়। অভিযুক্তদের কড়া শাস্তি চাই।’
অন্যদিকে, ওই তরুণীর পরিবার অভিযোগ মানতে চায়নি। ওই তরুণীর জামাইবাবুর কথায়, ‘আমাদের চক্রান্ত করে ফাঁসানো হচ্ছে। আমরা কোনও ভাঙচুর করিনি। উলটে আমাদের মারধর করা হয়েছে। ছুরি দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করা হয়েছে। আমাদের মেয়ের কথা ভেবে আমরা পুলিশে অভিযোগ করিনি।’ তবে পরিস্থিতি যেদিকে গড়াচ্ছে তাতে তাঁরাও আইনের দ্বারস্থ হবেন বলে ওই ব্যক্তি জানিয়েছেন।