সমীর দাস, হাসিমারা: ধনী ওরাওঁয়ের মৃত্যুকে ঘিরে এখন সংবাদের শিরোনামে মধু চা বাগান। অপুষ্টিতে ভুগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দা সহ একাধিক সংগঠনের। তা আবার মানতে নারাজ প্রশাসন। যদিও মৃতের স্ত্রী আশারানি ওরাওঁয়ের মাত্র ২৬ কেজি ওজন থেকেই অপুষ্টির বিষয়টি আঁচ করা সম্ভব। তবে ধনীর ঘটনা কি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা? বৃহস্পতিবার মধু চা বাগান (Tea Garden) ঘুরে দেখা গেল, ঘরে ঘরে অপুষ্টির (Malnutrition) ছাপ স্পষ্ট।
ধনীর বাড়ি থেকে বড়জোর ১০০ মিটার দূরে, বাগানের লোদো লাইনে বাড়ি শ্রমিক সীতামুনি লোহারের। এদিন দুপুরে জরাজীর্ণ শ্রমিক আবাসনের (Labor Housing) উঠোনে বসে বলছিলেন আশাভঙ্গের কথা। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর বছর দুয়েক আগে বাগান খোলার সময় ভেবেছিলেন, সমস্যার সমাধান হয়ে গেল। সীতামুনির কথায়, ‘কিন্তু কোথায় কী! বাগানে কাজ করে দিনের পর দিন মজুরি পাই না। এই পরিস্থিতিতে কি সংসার চলে? বাধ্য হয়ে জয়গাঁতে গিয়ে দিনমজুরির কাজ করতে হচ্ছে।’ কিছুদিন ধরে অসুস্থ থাকায় কাজে যেতে পারেননি ওই শ্রমিক। তাঁর চেহারাই বলে দিচ্ছে তিনি যে অপুষ্টিতে ভুগছেন।
পাশেই জুড়া লাইনের শ্রমিক শেফালি মাহালির মন্তব্য, ‘অন্তত তিনটি পাক্ষিক মজুরি বকেয়া রয়েছে। বাগানের কাজ করে দু’বেলা খাবার জোটে না। আমরা স্বামী-স্ত্রী কখনও জয়গাঁ, কখনও হাসিমারা বায়ুসেনা ছাউনিতে গিয়ে দিনমজুরির কাজ করে সংসার চালাচ্ছি। তা না হলে না খেয়ে মরতে হত।’
সেখান থেকে আরও কিছুটা দূরে বাগানের বিরসু লাইন। রাস্তার পাশে বসে ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক প্রয়াগ মাহালি। ঠিকমতো কথাও বলতে পারছিলেন না। অসহায়ভাবে বললেন, ‘বাগান ঘুরে দেখুন। দেখবেন বেশিরভাগ শ্রমিক (Labour) অপুষ্টিতে ভুগছেন। আমার মতো অনেক শ্রমিক অবসরের পর পিএফ (PF), গ্র্যাচুইটির (Gratuity) টাকা পাচ্ছেন না বছরের পর বছর ধরে।’ ওই লাইনেরই বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক পুনাই ওরাওঁ টিনের বেড়া দেওয়া ছোট্ট একটা ঘরে থাকেন। অ্যাসবেস্টস দিয়ে বানানো বাগানের আবাসনটি কয়েক মাস আগে ভেঙে পড়েছে। মেরামত হয়নি।
ফেকু লাইনের শ্রমিক সোমরা ওরাওঁ পক্ষাঘাতগ্রস্ত। তাঁর স্ত্রী কাজ পেয়েছেন ঠিকই, কিন্তু মজুরি না দিলে পুষ্টিকর খাবার তো দূরের কথা, দু’বেলা ভাত জোটে না তাঁদের। জুড়া লাইনের ছোট কালভার্টে বসেছিলেন কয়েকজন শ্রমিক। তাঁদের অনেকেই ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারেন না।
আর প্রশাসন কী বলছে? কালচিনির বিডিও জয়দীপ চক্রবর্তীর কথায়, ‘প্রতিটি চা বাগানে প্রশাসনের তরফে নানা কর্মসূচি চলছে। সেখানে শ্রমিকরা তাঁদের শারীরিক সমস্যা, র্যাশন সমস্যার অভিযোগ জানালে আমরা খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ গ্রহণ করব।’