বর্ধমান: দুর্গোৎসব উপলক্ষ্যে মাতোয়ারা গোটা বাংলা। সেই উৎসব মুখর দিন গুলিতে যাতে কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেটা নিশ্চিত করতেই এখন চুড়ান্ত ব্যস্ত পুলিশ কর্মীরা। অন্যদিকে উৎসব উপলক্ষে সব অফিস কাছারিতে ছুটি চলছে। আর ঠিক এই সূযোগটাকে কাজে লাগিয়ে জলদস্যুদের কায়দায় হুগলীর জেলার বালি মাফিয়ারা অসংখ্য নৌকা নিয়ে ঢুকে পড়ছে পূর্ব বর্ধমান জেলায়। দিনে দুপুরেই তারা দামোদর নদ থেকে বালি লুট করে নিয়ে বুক ফুলিয়েই বালি ভর্তি নৌকা নিয়ে হুগলী জেলায় ফিরে যাচ্ছে। এই বালি মাফিয়াদের দাপট ও চোখ রাঙানিতে এখন তটস্থ জেলার জামালপুর থানার জ্যোৎশ্রীরাম গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত কোরা ও শিয়ালী গ্রামের বাসিন্দারা। তাঁরা চাইছেন ভিন জেলার বালি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য দমনে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিক পুলিশ ও প্রাশাসন। নয়তো অবৈধ ভাবে দামোদর নদ থেকে বালি তুলে নেওয়ার কারণে তাদের গ্রাম বিপদে পড়বে।
কোরা গ্রামটি হুগলী জেলার একেবারে লাগোয়া গ্রাম। এক কথায় বলা চলে এই ’কোরা’ গ্রামটি হল হুগলী ও পূর্ব বর্ধমানের ’বর্ডার’ এলাকা। এই গ্রামের পরেই রয়েছে হুগলী জেলার পুরশুড়া থানার অধীন খুশিগঞ্জ গ্রাম। আর কোরা গ্রামের পাশের গ্রাম হল জ্যোৎশ্রীরাম গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত শিয়ালি গ্রাম। এই দুই গ্রামের বাসিন্দারা রবিবার জানান, বেশ কয়েক মাস হল হুগলি জেলার বালি মাফিয়ারা যন্ত্র চালিত নৌকা নিয়ে দামোদর ধরে চলে আসছে কোরা ও শিয়ালী এলাকায়। প্রতিদিন কম বেশী ডজন খানেক নৌকা নিয়ে তারা ঢুকছে। এই নৌকায় করে একদল বালি মাফিয়া দিনের বেলায় দামোদর থেকে বালি তুলে নিয়ে নৌকায় লোড করে সন্ধ্যার আগে হুগলীতে চলে যাচ্ছে। আবার সন্ধ্যার পর হুগলী জেলার অপর আর একদল বালি মাফিয়া একই কায়দায় কোরা ও শিয়ালী এলাকায় ঢুকছে। সারা রাত ধরে দামোদর থেকে বালি তুলে নিয়ে তারা ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে হুগলী রওনা দিয়ে দিচ্ছে।
গ্রামবাসীদের আরও অভিযোগ, দুর্গোৎসবের মধ্যে দৌরাত্ম্য আরও কয়েক গুন বাড়িয়ে দিয়েছে বালি মাফিয়ারা। তারা শিয়ালী গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খুব কাছে থাকা দামোদর নদ থেকে বালি তুলে নিয়ে চলে যাচ্ছে। জলদস্যুদের কায়দায় হুগলী জেলার খুশিগঞ্জ, চৈতন্যবাটি, নিশ্চিন্তপুর ,ভাঙ্গামোরা, কালিকাপুর ও কুমরুলের দিক থেকে ওই বালি মাফিয়ারা অসছে বলে কোরা ও শিয়ালী গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন। গ্রামের বাসিন্দাদের কথা অনুযায়ী, হুগলী জেলার বালি মাফিদারের এমন দৌরাত্ম্যের বিষয়টি স্থানীয় ফাঁড়ির পুলিশ সহ এলাকার জনপ্রতিনিধিরাও জানেন। কিন্তু কোন এক অজ্ঞাত কারণে সবাই সবকিছু দেখে এবং জেনেও ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে বসে আছে।
শিয়ালী গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা রমনিকান্ত পান এদিন বলেন, ‘আমাদের শিয়ালী গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গায়েই রয়েছে দামোদর নদ। স্কুলের পাশে বসতিও রয়েছে। তা জেনেও হুগলীর বিভিন্ন এলাকার লোকজন প্রতিদিন দামোদরের ওই জায়গায় নৌকা নিয়ে জড়ো হচ্ছে। সেখান থেকে নৌকা ভর্তি করে বালি তুলে নিয়ে তারা হুগলী জেলায় চলে যাচ্ছে। ওইসব বালি কারবারীদের বাধা দেওয়া হলেও তারা কিছুই মানছে না। অথচ এমন ভাবে বালি তোলার জন্য প্রাথমিক স্কুল ও বসতির বিপদ বাড়ছে।’ রমনীকান্ত বাবু এও জানান, প্রশাসনের লোকজনকে আগেই এই ঘটনার কথা জানানো হয়েছিল। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয় নি। তাঁরা চান হুগলী জেলার ওইসব বালি কারবারীদের দৌরাত্ম্য বন্ধে প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নিক। প্রতি বছরের মত এ বছরও প্রশাসনের তরফে জুন মাস থেকো অক্টোবর মাস পর্যন্ত দামোদর থেকে বালি তোলায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তা সত্ত্বেও হুগলী জেলার বালি মাফিয়ায়া কাদের বলে বলিয়ান হয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলায় ঢুকে দামোদর থেকে বালি লুট করা স্পর্ধা দেখাচ্ছে, সেই প্রশ্নই এখন বড় হয়ো দেখা দিয়েছে! এ বিষয়ে জামালপুরের বিধায়ক অলক মাঝিকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “ঘটনার কথা আমারও কানে এসেছে। আমিও এই ঘটনার কথা জেনে স্তম্ভিতই হয়েছি। দামোদর থেকে বালি লুট বন্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়ে রেখেছেন। এই বালি লুট বন্ধের দাবি আমি প্রশাসনের সর্বোচ্চ মহলে জানাব।’ “