সন্দীপ সরকার, ময়নাগুড়িঃ রবিবার বিকেলে আচমকাই ধেয়ে এল টর্নেডো। নিমেষেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়ে গেল ময়নাগুড়ি ব্লকের একের পর এক গ্রাম। ঘরবাড়ি সব হারিয়ে আজ নিঃস্ব গ্রামবাসীরা। খোলা আকাশে দিন কাটছে বার্নিশ, মাধবডাঙ্গা, ধর্মপুরের মতো বেশ কয়েকটি গ্রাম। কী করবেন? কী খাবেন? কীভাবে ঋণ পরিশোধ করবেন তা নিয়েই খোলা আকাশের নীচে দিন কাটাচ্ছেন কয়েক’শ পরিবার। সব হারিয়ে ঝড়ের দু’দিন পরে কেমন আছেন দুর্গতরা?
রবিবার দুপুরের পর থেকেই ময়নাগুড়ির আকাশে ছেয়ে গিয়েছিল কালো মেঘ। এদিন বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ আচমকাই আছড়ে পড়ে টর্নেডো। মাত্র আড়াই মিনিটের ঝড়ের দাপটে লন্ডভন্ড হয়ে যায় ময়নাগুড়ি ব্লকের একের পর এক গ্রাম। টর্নেডো একপ্রকার ধ্বংসলীলা চালায় বার্নিশ, মাধবডাঙ্গা, ধর্মপুর, উত্তর পুঁটিমারি, কয়েরবাড়ি, চকোয়া গ্রামে। ময়নাগুড়ি ও জলপাইগুড়ি মিলিয়ে প্রাণ হারায় মোট ৪ জন। আহতের সংখ্যাও শ’য়ে শ’য়ে। মাথা গোঁজার ছাদ হারিয়ে তাঁদের রাত কাটছে খোলা আকাশের নীচে ত্রিপল টাঙিয়ে। ঝড়ে উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে ঘরের যাবতীয় জিনিশপত্র। নষ্ট হয়ে গিয়েছে বিঘার পর বিঘা জমির ফসল।
প্রবল ঝড়ের বীভৎসতা প্রাণ হাতে নিয়ে প্রত্যক্ষ করেছেন বার্নিশ গ্রামের এক বৃদ্ধা কল্পনা রায়। তাঁর স্বামী গুরুতর জখম অবস্থায় জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনিও গতকালই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। নিজের জীবনকে বিপন্ন করে তিনি কোনওক্রমে প্রাণে বাঁচিয়েছেন বছর দেড়েকের নাতনিকে। তিনি বলেন, ঝড় তাঁদের সব কিছু কেড়ে নিয়েছে। ঋণ নিয়েছিলেন ঘর করার জন্য। ঘর তৈরি সম্পন্ন হওয়ার আগেই ভেঙে দিল ঝড়। বাড়ির সামনে একটা দোকান ছিল, সেটারও আজ অস্তিত্ব নেই। এই পরিস্থিতিতে তাঁদের ঘর সংসার চলবে কী করে সেটা ভেবে কুলকিনারা পাচ্ছেন না তিনি। চাইছেন সরকারি সাহায্য।
এই গ্রামেরই বাসিন্দা লিপি রায়। ঋণ করে তিনি চাষবাস করেছিলেন। ঝড়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছে জমির ফসল। কী করে মহাজনের ঋণ শোধ করবেন, সেই কারণে মাথায় হাত পড়েছে তাঁদের। একই অবস্থা দয়মন্তী বর্মন, অলোকা রায় ও ক্ষীরুবালা রায়দের। তারাও আজ সর্বস্ব হারিয়ে ত্রিপলের নীচে কোনওভাবে দিন অতিবাহিত করছেন। কীভাবে তাঁদের জীবন জীবিকা চলবে তা তাঁদের অজানা। সবাই চেয়ে বসে আছেন সরকারের আর্থিক সাহায্যের দিকে।
যদিও আজ সকালেই ঝড় বিধ্বস্ত গ্রামগুলিতে ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছে প্রশাসন। খাদ্যসামগ্রী থেকে রান্নার বাসনপত্র পৌঁছে গিয়েছে প্রতিটি বাড়িতে। দেওয়া হয়েছে ত্রিপল। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে প্রচুর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। দেওয়া হচ্ছে দুবেলা খাবার। এভাবে কতদিন? এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে দুর্গতদের মাথায়। তাঁরা চাইছেন মাথা গোঁজার ঠাই। আর বেঁচে থাকার জন্য রসদ।