গৌতম দাস, গাজোল: ছিলেন বাম, চলে গেলেন একেবারে দক্ষিণে। সিপিএমে (CPM) থাকতে যে দলকে বলতেন চরম দক্ষিণপন্থী, সেই বিজেপিতে (BJP) আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাঁর প্রতিবেশী যতীন্দ্রনাথ ওরাওঁ অবশ্য একবাক্যে মানেন, ‘খগেন মুর্মু রাজনীতিতে যেখানে হাত দেন, সেখানেই সোনা ফলে।’ বাম ও ডান, দুই শিবিরেই সফল মালদা উত্তরের বর্তমান সাংসদ। যদিও যতীন্দ্রনাথের মতো তাঁর অন্য প্রতিবেশীরাও বলছেন, এবারের লড়াই কঠিন। পাঁচ বছরের কাজের খতিয়ান দিতে হবে যে। সেখানেই গণ্ডগোল।
মালদার (Malda) গাজোল (Gazole) থেকে ৫১২ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে প্রায় ১৪ কিলোমিটার গেলে দেওতলা গ্রাম পঞ্চায়েতের কদমপুর গ্রামে রাস্তার বাঁদিকে খগেন মুর্মুর জন্মভিটে। গ্রামটি আদিবাসী অধ্যুষিত। পুরোনো আমলের মাটির দেওয়াল এবং টিনের চাল দেওয়া বড়সড়ো দুটো বাড়ি খগেন ও তাঁর পরিবারের। দুটির মধ্যে একটি মাটির দোতলা। আগে দোতলায় থাকতেন খগেন। এখন সেখানে থাকেন তাঁর বড় ছেলে রমেশ এবং তাঁর পরিবার। মেজো এবং ছোট ছেলে বাবার সঙ্গে থাকেন মালদায়।
কালেভদ্রে গাজোলের বাড়িতে যান বিজেপি সাংসদ। সেসময় তাঁর সঙ্গে দলের কর্মী-সমর্থকরা ছাড়াও দেখা করেন পুরোনো দিনের ‘কমরেড’রা। ৫ বছর সাংসদ থাকাকালীন নিজের এলাকায় কী কী উন্নয়নমূলক কাজকর্ম করেছেন, তার খতিয়ান খুঁজতে গিয়ে উঠে আসে নানা তত্ত্ব। তার মধ্যে না পাওয়ার যন্ত্রণাটাই বেশি। যতীন্দ্রনাথ সম্পর্কে খগেনের আত্মীয়।
অকপট সারল্যে তিনি বলে চলেন, ‘বাম রাজনীতি করার সময় এলাকার মানুষকে অনেক কিছু দিয়েছেন উনি। প্রচুর ভূমিহীন মানুষকে জমি পাইয়ে দিয়েছেন। এলাকার রাস্তাঘাট, পানীয় জলের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। কিন্তু সাংসদ হয়ে তেমন কোনও কাজ করতে পারেননি। কয়েক জায়গায় সোলার লাইট বসিয়েছেন মাত্র। এছাড়া তাঁর অন্য কোনও কাজ আমাদের চোখে পড়ে না।’
অথচ প্রথম থেকেই খগেনের রাজনৈতিক গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী। একবার শুধু সিপিএম প্রার্থী হিসেবে লোকসভা নির্বাচনে মৌসম নুরের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। এছাড়া জীবনে কোনওদিন হারেননি। জেলা পরিষদে জিতেছেন। হবিবপুরে পরপর তিনবার বিধায়ক হয়েছেন। ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে মৌসমের কাছে হারলেও ২০১৯ সালে পরের ভোটেই গনি খানের সেই ভাগ্নিকে হারিয়ে দেন।
কদমপুরের বাসিন্দাদের মতো একই মত কালাকুড়ি গ্রামের মনসুর রহমানের। তিনি বলেন, ‘সাংসদ হিসেবে উল্লেখযোগ্য তেমন কিছুই করতে পারেননি খগেনবাবু। যা রাস্তাঘাট দেখছেন, সেগুলো বাম এবং তৃণমূল সরকার করেছে। এখনও গ্রামে রাস্তাঘাট এবং পানীয় জলের সংকট রয়েছে।
এলাকায় কাজ নেই বলে ভিনরাজ্যে চলে যাচ্ছেন আমাদের গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ছে, অস্বাভাবিক বেড়েছে জীবনদায়ী ওষুধের দাম। পেট্রোল-ডিজেলের দামও বেশি।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বরিন্দ এলাকার ভোটেই নির্বাচিত হয়েছিলেন খগেন। এবার সেই মাটিতে একদিকে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার হাওয়া, অন্যদিকে গ্রামীণ এলাকায় একের পর এক রাস্তা গড়ে এবং সামাজিক নানা প্রকল্প হাজির করছে তৃণমূল।
গত বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলে পরিষ্কার, তৃণমূলের সেই কাজ অনেকটা সাফল্য পেয়েছে। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ভোট অনেকটা বাড়িয়েছিল তৃণমূল। উলটোদিকে, বিজেপির প্রাপ্ত ভোটের হার কমে গিয়েছিল। আসন্ন ভোটে তাই খগেন মুর্মুর সেই বহুকথিত ‘রাজনৈতিক পরশপাথর’-এর ম্যাজিক চ্যালেঞ্জের মুখে।