মালদাঃ দু’বছরেও উদ্ধার হয়নি ছিনতাই হওয়া গয়না। মা-বাবার স্মৃতিবিজড়িত সোনার গয়না ফেরত পেতে থানা, উকিল আর জনপ্রতিনিধিদের দুয়ারে আজও হত্যে দিয়ে চলেছেন সত্তরোর্ধ্ব শিখাদেবী। বছর দুয়েক আগে মালদা শহরের মনস্কামনা রোডে পুলিশ পরিচয় দিয়ে তাঁর প্রায় সাড়ে ৩ ভরির স্বর্ণলংকার ছিনতাই করে পালায় দুষ্কৃতীরা। সেই গয়না আজও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। গয়না ফেরত পেতে উকিলদের ফি দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন তিনি। জনপ্রতিনিধিরাও এখন আর পাত্তা দেননা শিখাদেবীকে। অভিযোগ, তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে গেলে কুকুর-বিড়ালের মতো তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বৃদ্ধাকে। চোখে জল নিয়ে দু’বছরের লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা সংবাদমাধ্যমকে জানালেন শিখাদেবী।
বছর পাঁচেক ধরে এই শহরে এক নতুন গ্যাংয়ের আবির্ভাব ঘটেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের টার্গেট মহিলারা। প্রাতর্ভ্রমণে বেরোনো একাকী মহিলাদের জনশূন্য রাস্তায় নিজেদের পুলিশ পরিচয় দিয়ে গায়ে থাকা গয়না খুলিয়ে ছিনতাই করে পালাচ্ছে দুষ্কৃতীরা। শহরের বাঁধ রোড, মনস্কামনা রোড, কুট্টিটোলা, অভিরামপুর, মালঞ্চপল্লি সহ একাধিক এলাকায় মহিলারা এই গ্যাংয়ের শিকার হয়েছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই গ্যাংয়ের হদিস করে উঠতে পারেনি পুলিশ।
বার্ধক্যের কারণে পায়ে আর জোর নেই শিখাদেবীর। তাই বাড়ি বাড়ি গিয়ে ইমিটেশনের গয়না আর জামাকাপড় বিক্রির পেশা বাধ্য হয়েই ছাড়তে হয়েছে তাঁকে। সংসারের দায়ভার এখন ছেলে গৌতমের উপর। শুক্রবার শিখাদেবী নিজের আর্জির কথা জানাতে এসেছিলেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্রকে। দু’বছর আগে নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার কথা তিনি খুলে বলেন অম্বরবাবুকে। বৃদ্ধাকে আশ্বস্ত করে অম্বরবাবু জানান, এনিয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি।
শিখাদেবী বলেন, ‘গোটা ঘটনা কাউন্সিলার, পুরপ্রধানকে জানিয়েছি। শুরুর দিকে তাঁরা আমাকে সাহায্য করবেন বলে জানিয়েছিলেন। এখন তাঁদের দরবারে যাওয়া যায় না। তাঁদের সাঙ্গোপাঙ্গরা আমাকে দেখলেই তাড়িয়ে দেয়। তাই আজ সিপিএম পার্টি অফিসে এসেছি। দু’বছর আগে মনস্কামনা মন্দিরে পুজো দিয়ে সকাল ন’টা নাগাদ পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলাম। পুলিশের পরিচয় দিয়ে আমার গয়না খুলে নেয় একদল দুষ্কৃতী। আমি থানায় অভিযোগ জানাই। সেই থেকে থানার চক্কর কেটে চলেছি। পুলিশ আমাকে ঘুরাচ্ছে। উকিলবাবুদের কাছে গেলে তাঁরাও ফি নিচ্ছেন, কিন্তু কোনও উপায় করে দিচ্ছেন না। আমার সেই গয়নার সঙ্গে মা-বাবার স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। গয়না না পেলেও অপরাধীর যাতে কঠোর শাস্তি হয় তা আমি দেখে যেতে চাই। আমি এর শেষ দেখে ছাড়ব।’