প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লিঃ দিল্লি অর্ডিন্যান্স বিলে সমর্থনের ইস্যুতে আপ-কংগ্রেস কলহে ভাঙন ধরেছিল পাটনা সামিটে। বেঙ্গালুরু সামিটে তেমন বড়সড় মতানৈক্যের দৃষ্টান্ত উঠে না এলেও, অবশেষে মুম্বই সামিটের মঞ্চে জাতিগত গণনা নিয়ে উঠে এল ভাঙনের আভাস। একইসঙ্গে আসন সমঝোতায় কংগ্রেস শিবিরের ‘ধীরে চলো’ নীতি মেনে নিতে পারছে না তৃণমূল কংগ্রেস, আপ, জেডিইউ, আরজেডি বা সমাজবাদী পার্টির মতো একাধিক আঞ্চলিক দলগুলি। বলার অপেক্ষা রাখে না এই ইস্যুকে কেন্দ্র করেই বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের সমন্বয়ে দেখা দিয়েছে ভাঙনের ‘কালো মেঘ’।
উল্লেখ্যনীয় জানুয়ারি মাসে জাতির ভিত্তিতে আদমসুমারি শুরু হয় নীতিশ কুমার, লালুপ্রসাদ যাদবের রাজ্য বিহারে৷ বিহারের ৩৮ টি জেলায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরিবার গণনার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। জাতিগত গণনা বিহারের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু৷ মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের জেডিইউ এবং বিহারের মহাগঠবন্ধন সরকারের সব দলগুলি দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে এসেছে, যত দ্রুত সম্ভব রাজ্যে জাতিভিত্তিক গণনা শুরু হোক। ২০২১ সালে জাতিগত জনগণনা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে এফিডেভিট জমা দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। কার্যত এই ধরনের জাতিগত গণনার বিষয়টিকে এড়িয়ে যেতে চায় কেন্দ্র। এই কথা চাউড় হতেই বিহারের রাজনীতিতে ব্যাপক শোরগোল পড়ে। সরব হন লালু প্রসাদও। ‘পাখি, জন্তু, গাছ সব গোনা হবে আর শুধু অন্যান্য পিছিয়ে পড়়া জাতি ও অত্যন্ত পিছিয়ে পড়াদের গুনতে এত আপত্তি! পিছিয়ে পড়াদের নিয়ে বিজেপি আরএসএসের এত অনীহা কেন?’ প্রশ্নও তুলেছিলেন তিনি। সূত্রের দাবি শুক্রবার মুম্বইতে সান্তাক্রুজের কাছে পাঁচতারা হোটেলে আয়োজিত বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের সামিটেও এই জাতিগত গণনা নিয়ে উঠে এল আড়াআড়ি মতভেদ, যার ব্যাটন ধরা রইলো তৃণমূল নেত্রী এবং বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে।
সূত্রের দাবি, এদিনের বৈঠকে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘আমরা জাতিগত জগণগনার বিরুদ্ধে নয়, তবে তাতে যেন ধর্মীয় মেরুকরণের রঙ না লাগানো হয়। কারণ, তাকে বিজেপি এনআরসির কাজে ব্যবহার করবে।’ এ ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ যে বেঙ্গালুরু সামিটে গৃহীত বিরোধী দলীয় প্রস্তাবনা বা ‘রেজলিউশনে’ জাতি গত জনগণনার বিষয়টি সংযুক্ত ছিল। শুক্রবার সে নিয়ে আলোচনা শুরু হলে বেঁকে বসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঠারেঠারে জানিয়ে দেন এ নিয়ে তাঁর আপত্তির কথা। বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন মমতার যুক্তিতে ভুল নেই, কারণ জাতিগত গণনায় অনিবার্য ভাবেই ঢুকে পড়ে ধর্মীয়করণ৷ সে ক্ষেত্রে তা কিন্তু বিরোধী শিবিরে নীতিগত আদর্শের বিরুদ্ধেই প্রশ্ন তুলতে পারে। ২০২৪ এর নির্বাচনের আগে এমন কোনরকম বিতর্ক থেকে দূরে থাকা শ্রেয় বলে মনে করছেন তৃণমূল সভানেত্রী।
জাতিগত গণনায় চূড়ান্ত ‘অনীহা’র পাশাপাশি এদিন সার্বিক বিরোধী দলীয় কর্মকাণ্ডের নিরিখে কংগ্রেসের ‘স্লথতা’ নিয়ে তর্জনি নিক্ষেপ করতে পিছপা হয়নি তৃণমূল। তৃণমূলের বক্তব্য, বিরোধী শিবিরের হাতে সময় বড় কম। যে কোনো মুহূর্তে আগাম নির্বাচনের পথে হাঁটতে পারে এনডিএ-র সরকার, ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জল্পনা উস্কে পাঁচ দিনের বিশেষ সংসদীয় অধিবেশনের ডাক দিয়েছে সরকারপক্ষ। এহেন রূদ্ধশ্বাস আবহে সময় থাকতে আসন সমঝোতার মত অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয় মিটিয়ে ফেলা জরুরি। তাই আসন সমঝোতা নিয়ে আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে দাবি করেছে তৃণমূল। এই প্রস্তাবের সঙ্গে সহমত আরজেডি, জেডিইউ, এসপি, আপ সহ আরও কয়েকটি ছোটবড় রাজনৈতিক দল। তবে ডিএমকে ছিল গোটা বিষয়ে নিরপেক্ষ। প্রত্যাশিতভাবে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে এই কর্মসূচিতে কংগ্রেসের ভূমিকা অগ্রগণ্য হওয়া উচিত। কিন্তু আদতে তা হচ্ছে না। কংগ্রেস আসন সমঝোতায় অতি ধীর গতিতে এগোতে চাইছে, এতে রীতিমতো বিরক্ত তৃণমূল কংগ্রেস। একই কথা প্রযোজ্য সিপিএম এর ক্ষেত্রেও, বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে এমনটাই। গুজব ছড়িয়েছিল, এদিন জাতিগত গণনা তথা আসন সমঝোতা নিয়ে অনাস্থা প্রকাশ করেই বৈঠকের মাঝে চলে যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিরোধীদের সাংবাদিক সম্মেলনেও দেখা যায়নি তাঁকে। তবে এই অভিযোগ নস্যাৎ করেছে ঘাস-ফুল শিবির৷ তাঁদের মতে, তৃণমূল কংগ্রেস বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে যায় নি, বরং বৈঠক শেষ করেই বেরিয়েছে। এও জানা গেছে তৃণমূল কংগ্রেস জাতিগত জনগণনা নিয়ে বিচার বিবেচনা করবে আগামী দু সপ্তাহে। তবে ধর্মীয় মেরুকরণের ক্ষেত্রে কোনও আপোষ করবে না টিম মমতা। তবে তৃণমূল কংগ্রেস জোটের প্রতি দায়বদ্ধ সে কথা স্বীকার করেছেন মুম্বইয়ে উপস্থিত দলের শীর্ষ নেতারা।
এদিন বিশ্বস্ত সূত্রে এও জানা গেছে আগামী ২ অক্টোবর দিল্লির রাজঘাটে সমবেত সভা করবে বিরোধী ইন্ডিয়া শিবির। গান্ধিজয়ন্তীতে উপস্থিত থাকবেন মমতাও। তবে সেক্ষেত্রে তৃণমূলের যে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচী ছিল সেটাই থাকবে। তবে বিরোধীদের পরবর্তী বৈঠক নিয়েও শুরু হয়েছে বিতর্ক। সূত্রের দাবি, ভোটমুখী রাজ্য শিবরাজ চৌহানের মধ্যপ্রদেশের রাজধানী ভোপালে হবে টিম ইন্ডিয়ার চতুর্থ সামিট, যার দিনক্ষণ জানান হবে উচিত সময়ে৷ জানা গেছে ভোপালে বৈঠক করতে আপত্তি সিপিএমের। সে নিয়েও একপ্রস্ত মতানৈক্যের বাতাবরণ গড়ে ওঠে মুম্বই সামিটের মঞ্চে৷ বিরোধী সূত্রে এও জানা গেছে আজ ‘এক দেশ- এক ভোট’ নিয়ে আলোচনা হয়নি বিরোধী বৈঠকে। ১৮-২২ সেপ্টেম্বর সংসদের বিশেষ অধিবেশনে কি ভাবে এগোবে বিরোধী শিবির, তাও স্থির করা হবে পরে।
গৌতম সরকার: অর্ধশতকের আর পাঁচ বছর বাকি। উত্তরবঙ্গ সংবাদের আজ ৪৫-এ পা। দীর্ঘ এই যাত্রায়…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: থাইল্যান্ড ওপেনের (Thailand Open) খেতাব জিতে নিলেন ব্যাডমিন্টন (Badminton) তারকা সাত্ত্বিকসাইরাজ…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ ভোটের মুখে তৃণমূলে যোগ দিলেন ঝাড়গ্রামের বিদায়ী সাংসদ বিজেপির কুনার হেমব্রম।…
শুভজিৎ দত্ত, নাগরাকাটা: পানীয় জলসংকট মোকাবিলায় এবার জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরের নয়া কৌশল পুকুর(Pond) খনন। জলাশয়…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: এবছর ৭৭তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের (Cannes Film Festival) দিন কয়েক আগেই…
বালুরঘাট: আত্রেয়ী নদীতে (Atrayee River) স্নান করতে নেমে তলিয়ে গিয়েছিল দুই বোন। অবশেষে এক টোটোচালকের…
This website uses cookies.