Tuesday, May 21, 2024
HomeBreaking Newsমমতার 'একের বিরুদ্ধে এক'  নীতিকে প্রাধান্য বিরোধী বৈঠকে

মমতার ‘একের বিরুদ্ধে এক’  নীতিকে প্রাধান্য বিরোধী বৈঠকে

নয়াদিল্লি: পুরনো চাল ভাতে বাড়ে। অরণ্যের প্রাচীন এই প্রবাদ সর্বজনবিদিত। তৃণমূল নেত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত ও বহুল-চর্চিত ‘একের বিরুদ্ধে এক’ কৌশল নীতির ক্ষেত্রে আবারও সেই প্রবাদ সত্যি হতে চলেছে। বিশেষ সূত্রের দাবি, আগামী ২৩ জুন,  শুক্রবার পাটনায় জেডিইউ সুপ্রিমো তথা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের আহ্বানে অনুষ্ঠিত হতে চলা ‘হাই প্রোফাইল’ বৈঠকে মমতার এই নীতিকে সামনে রেখেই আলোচনায় শাণ দিতে উদ্যোগী হয়েছেন বিরোধীরা। শুধু তাই নয়, আহ্বায়ক নীতিশ কুমার স্বয়ং জানিয়েছেন, এই নীতি ভিন্ন বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিজেপির বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তোলার অন্য কোনও রাস্তাই খোলা নেই বিরোধী শিবিরের কাছে।

প্রসঙ্গত, বছর চারেক আগে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময়ে বিরোধী শিবিরের রণকৌশল হিসেবে এই ‘একের বিরুদ্ধে এক’ ফর্মুলার কথা প্রথমবার বলেছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ যে দল যেখানে শক্তিশালী সেখানে তাদেরই হাতে বিজেপি বিরোধিতার রাশ তুলে দিতে ঐকমত্য গড়ার চেষ্টা করা হোক, বলেছিলেন তৃণমূল নেত্রী৷ কিন্তু সে সময়ে তাঁর এই মতামতকে মোটেই স্বীকৃতি দেয়নি বিরোধী ফ্রন্ট৷ ফলস্বরূপ প্রবল প্রতাপে দ্বিতীয়বার দিল্লির শাহী মসনদ দখল করে নেয় নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি। এর পরেও একাধিকবার প্রাকারান্তরে এই নীতি নিয়ে সকলকে অবগত করার চেষ্টা চালিয়েছেন তিনি। এবার চার বছর পর ফের প্রধানমন্ত্রী মোদী তথা বিজেপির জয়রথ ঠেকাতে তৃণমূল নেত্রীর ফর্মুলাই বিরোধী শিবিরের ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ হয়ে উঠতে চলেছে৷

সূত্রের দাবি, শুক্রবার পাটনায় নির্ধারিত বিরোধী শিবিরের বৈঠকে তৃণমূল নেত্রীর দেখানো পথে দেশের ৪৫০টি লোকসভা আসনে এই ‘একের বিরুদ্ধে এক প্রার্থী’ দেওয়া নিয়ে আলোচনা করতে পারে বিরোধী সমমনোভাবাপন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি৷ একইসঙ্গে বিরোধী বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে থাকতে পারে অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে কেন্দ্রীয় এজেন্সির অতি সক্রিয়তা, জাতিগত জনগণনা, সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ, সংসদীয় ঐক্য এবং সাংবিধানিক মূল্যবোধ রক্ষার মতো ইস্যুগুলি৷ পাটনার বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে রাখা হোক দিল্লি সরকারের ক্ষমতা খর্ব করে আনা মোদী সরকারের অধ্যাদেশ,  আর্জি জানিয়ে বুধবারই সমস্ত বিরোধী দলকে চিঠি লিখেছেন আপ সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরিওয়াল৷ এই মর্মে সম্মিলিত ভাবে বিরোধী শিবির কী সিদ্ধান্ত নেয়,  সেদিকেও তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল৷

উল্লেখ্য, তৃণমূল সভানেত্রীর প্রস্তাবিত ‘একের বিরুদ্ধে এক’ ফর্মুলা চার বছর আগে গ্রহণযোগ্য মনে না হলেও আজ কেন এই ফর্মুলাকে নিয়েই মাতামাতি করছে বিরোধী শিবিরের একটা বড় অংশ তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক মহলে৷ এই ইস্যুতে তৃণমূল কংগ্রেসের এক বর্ষীয়ান নেতার দাবি, ইউপিএ জমানার শেষে মোদী রাজত্বে ভারতের রাজনৈতিক পরিমন্ডলে এসেছে ব্যাপক বদল৷ আগে শাসক দলের বিরুদ্ধে যেভাবে রণনীতি নির্ধারণ করা হত সেই কৌশল বিজেপির মত আদ্যন্ত রেজিমেন্টেড দলের বিরুদ্ধে কাজে দেবে না, এটা উপলব্ধি করেছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো৷ অতীতে শাসক শিবিরের বিরুদ্ধে বিরোধীদের লড়াইয়ের মূল হাতিয়ার ছিল গোপন এবং প্রকাশ্য জোট৷ এমনকি ‘শত্রুর শত্রু আমার বন্ধু’, এই নীতিতেও আমল দেওয়া হত৷ কিন্তু গত ৯ বছরে বিজেপি এবং মোদী সরকারের আগ্রাসনের মুখে পুরনো যাবতীয় সমীকরণ আমূল পাল্টে গিয়েছে৷ এই পরিবর্তনের প্রথম আঁচ করতে পেরেছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো৷ সেই জন্যই যাবতীয় মতভেদের ঊর্ধ্বে উঠে ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের শুরুতে ‘একের বিরুদ্ধে এক’ কৌশল নীতির পরিকল্পনা নিয়েছিলেন তিনি৷ যে দল যেখানে প্রভাবশালী সেখানে বিরোধী শিবিরের প্রতিনিধিত্ব করতে দেওয়া হবে তাকেই, এটাই চেয়েছিলেন মমতা৷ তাঁর প্রস্তাবিত ‘একের বিরুদ্ধে এক’ ফর্মুলার উত্‍সস্থল এখানেই৷

তাত্‍পর্যপূর্ণ ভাবে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এহেন প্রাচীন ‘একের বিরুদ্ধে এক’ ফর্মুলাই এখন বেশ কিছু বিরোধী দলের কাছে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য বলে মনে হচ্ছে৷ এই প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে জেডিইউ মুখপাত্র এবং বর্ষীয়ান নেতা কে সি ত্যাগী বলেন, ‘একের বিরুদ্ধে এক’ নীতি নিয়ে বিরোধী বৈঠকে সবিস্তারে আলোচনা হোক এমনটাই চাইছেন বৈঠকের আহ্বায়ক তথা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার নিজেও৷ বিরোধী ভোট সংঘবদ্ধ করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে এই ফর্মুলা, বিশ্বাস করেন নীতীশজি৷’ এখানেই প্রশ্ন উঠছে সম্প্রতি তেজস্বী যাদবকে সঙ্গে নিয়ে ‘নবান্নে’ মমতার সঙ্গে দেখা করেছিলেন নীতিশ কুমার। ‘একের বিরুদ্ধে এক’ নীতি নিয়ে কী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখন তাঁকে আশ্বস্ত করতে সক্ষম হয়েছিলেন? তাছাড়া পশ্চিমবঙ্গ, কেরল, পাঞ্জাবের মত রাজ্যে বিজেপির বিরুদ্ধে কী ভাবে লড়াই করা হবে যেখানে কংগ্রেস,  তৃণমূল কংগ্রেস এবং আম আদমি পার্টি একে অন্যের বিরুদ্ধে বড় চ্যালেঞ্জার৷ বর্ষীয়ান নেতা কে সি ত্যাগীর দাবি, আলোচনার টেবিলেই এর সমাধানসূত্র বেরোবে৷

Sabyasachi Bhattacharya
Sabyasachi Bhattacharyahttps://uttarbangasambad.com/
Sabbyasachi Bhattacharjee Reporter based in Darjeeling district of West bengal. He Worked in Various media houses for the last 23 years, presently working in Uttarbanga Sambad as Sr Sub Editor.
RELATED ARTICLES
- Advertisment -
- Advertisment -spot_img

LATEST POSTS

Indian railways | বিনা টিকিটের যাত্রী ধরতে বিশেষ পরিকল্পনা উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের

0
শিলিগুড়ি: বিনা টিকিটের যাত্রী ধরতে বিশেষ পরিকল্পনা নিল উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল। এবার থেকে চলন্ত ট্রেনের সর্বত্র চলবে টিকিট পরীক্ষা। সমস্ত কামরায় চলবে কড়া নজরদারি।...

0
ব্যবসায়ীদের অবস্থান বিক্ষোভ সুভাষ বর্মন,ফালাকাটা,২১ মে:বন্ধ থাকা ফালাকাটা-সলসলাবাড়ি নির্মীয়মাণ মহাসড়কের কাজ ভোটের পরেই শুরু হতে পারে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করলেও রাস্তার ধারে থাকা ব্যবসায়ীরা...

Siliguri | শিলিগুড়িকে পরিচ্ছন্ন রাখতে উদ্যোগ, সপ্তাহে দু’দিন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ‘স্পেশাল ড্রাইভ’

0
রাহুল মজুমদার, শিলিগুড়ি: শিলিগুড়ি (Siliguri) শহরকে আরও বেশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে এবার সপ্তাহে দু’দিন করে ওয়ার্ড ধরে ধরে স্পেশাল ড্রাইভ চালাবে শিলিগুড়ি পুরনিগম (Siliguri Municipal...

0
বালুরঘাট, ২১ মে: বালুরঘাট সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে চিকিৎসায় গাফিলতির কারণে সদ্যোজাত কন্যা শিশু মৃত্যুর অভিযোগ। ঘটনায় মঙ্গলবার সকাল হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখায় মৃত শিশুর পরিবারের...

Uday Shankar Pal | ক্যানসারই কাড়ল প্রাণ, প্রয়াত ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’র আত্মারাম উদয় শংকর পাল

0
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: ক্যানসারের কাছে হার মানলেন ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’র আত্মারাম। প্রয়াত বর্ষীয়ান টলিউড অভিনেতা (Tollywood actor) উদয় শংকর পাল (Uday Shankar Pal)। সোমবার...

Most Popular