বিপ্লব হালদার, গঙ্গারামপুর: যে বয়সে বইখাতা নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা, সেই বয়সেই মেয়েকে বিয়ে দিয়ে শ্বশুরবাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন অভিভাবকরা। ১৩ বছরের সেই বালিকা বধূকে উদ্ধার করল গঙ্গারামপুর(Gangarampur) থানার পুলিশ। ৪৫ বছরের এক ব্যক্তির সঙ্গে মাত্র এক সপ্তাহ আগে ওই নাবালিকার(Minor) বিয়ে দেওয়া হয়েছে সামাজিক মতে। চাইল্ড লাইনের মাধ্যমে এই খবর পাওয়ার পরেই শুক্রবার রাতে পুলিশ প্রশাসন চাইল্ড লাইনের সদস্যদের নিয়ে অভিযান চালিয়ে নাবালিকাকে উদ্ধার করে। তবে পুলিশ আসার আগেই গা ঢাকা দেয় সদ্য বিবাহিত পাত্র। পালিয়ে যায় মেয়ের বাবা-মা সহ আত্মীয় পরিজন। গঙ্গারামপুর থানার পুলিশ জানিয়েছে, নাবালিকা গৃহবধূকে উদ্ধার করে চাইন্ড লাইনে পাঠানো হয়েছে। বাড়ির লোকজন পলাতক। তাদের খোঁজ চলছে।
গঙ্গারামপুর ব্লকের বিডিও অর্পিতা ঘোষাল বলেন, ‘চাইন্ড লাইনের মাধ্যমে খবর পেয়ে নাবালিকা বিয়ে বন্ধ করা হচ্ছে। গতকাল নাবালিকাদের উদ্ধার করে সিডব্লিউসিতে পাঠানো হয়েছে। নাবালিকা বিয়ে বন্ধ করতে প্রতিটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, মোয়াজ্জেমদের নিয়ে সচেতনতা শিবির করা হচ্ছে। এছাড়াও নাবালিকা বিয়ের কুফলগুলি তুলে ধরা হচ্ছে।’
জাহাঙ্গীরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মজিদুর রহমানের বক্তব্য, ‘বর্তমান যুগ তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। দেশ ও জাতি আজ তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে এগিয়ে চলেছে। কিন্তু আমরা যাঁরা গ্রামীণ এলাকায় থাকি, কাজকর্ম করি, সেসব এলাকায় এখনো নাবালিকাদের বিয়ে হয়ে যাওয়া একটি সামাজিক ব্যাধি হিসেবেই থেকে গিয়েছে। গ্রামীণ অনেক বাবা- মা অসচেতনতাবশত মেয়েদেরকে এখনও বোঝা হিসেবে মনে করেন। তাঁরা ভাবেন যে যত তাড়াতাড়ি মেয়েদের পাত্রস্থ করা যায় ততই যেন মুক্ত হতে পারেন। আমরা স্কুল, কলেজে নাবালিকা বিয়ের বিরুদ্ধে নানা সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান করার পরেও এই সমস্যা নির্মূল করা যাচ্ছে না। এর প্রধান কারণ গ্রামীণ মানুষের মেয়েদেরকে বোঝা হিসাবে বিবেচনা করা। শিক্ষিত সমাজ, রাজনৈতিক নেতা, ধর্মীয় নেতা সকলের প্রচেষ্টায় এবং মেয়েদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে না পারলে নাবালিকা নিয়ের মতো সামাজিক ব্যাধিগুলি দূর করা যাবে না।’