নিবেদিতা দাস, মাটিগাড়া: দুর্গাপুজো মানেই শুধু থিমের চমক নয়, এই পুজোয় মিশে আছে বাংলা ও বাঙালির ঐতিহ্য ও আবেগ। তাই শহুরে থিমের পুজোর ভিড়ের বাইরে আজও মাটিগাড়া ব্লকজুড়ে হয়ে আসছে একাধিক বাড়ির পুজো। এর মধ্যে অন্যতম সিংহবাড়ির দুর্গাপুজো। এক কাঠামোতেই দীর্ঘ ২৪ বছর থেকে পুজো করছেন শিবমন্দির সলকাভিটার বঙ্কিম সিংহ।
তাঁর কথায়, ‘প্রায় দুই দশক আগে বর্তমান দিনের মতো এলাকার চেহারা ছিল না। গ্রামবাসীদের পুজোর অঞ্জলি দিতে প্রায় কয়েক কিলোমিটার হেঁটে যেতে হত। তাই ১৯৯৯ সালে বাড়িতেই পুজো শুরু করি। নেপাল থেকে পুরোহিত এনে নয়দিন ধরে পুজো হয়। এই পুজোয় আশেপাশের আত্মীয়দের পাশাপাশি থাইল্যান্ড এবং ইতালি থেকেও আত্মীয়রা আসেন।’ বঙ্কিমবাবুর মেয়ে সুপর্ণা সিংহ বলেন, ‘পুজোর জোগাড় করতেই সময় কেটে যায়, তাই বাড়ির বাইরে অন্যান্য পুজোর প্যান্ডেল দেখার সময় পাইনা।’
অপরদিকে শিবমন্দির বাজার সংসদ এলাকায় ঘোষবাড়ির পুজোর নামডাক কোনও অংশে কম নয়। এদিন বছর ৮৩-এর হীমেন্দ্রনাথ ঘোষ জানান, প্রায় ২১ বছর থেকে বাড়িতেই পুজো করছি। ষষ্ঠীতে বোধন হয় এবং অষ্টমীতে কুমারী পুজোর সঙ্গে সঙ্গেই জ্বালানো হয় ১০৮টি প্রদীপ। এছাড়াও এই দিনে বাড়ির মহিলারা ধুনো পুড়িয়ে দেবীর আরাধনা করেন। তাঁর স্ত্রী বুলবুল ঘোষ বলেন, ‘শ্রাবণ মাস থেকেই পুজোর জোগাড় শুরু হয়ে যায়। আত্মীয়দের আমন্ত্রণ জানানো, মূর্তি তৈরির অর্ডার প্রভৃতি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পুজোর ভোগে রয়েছে চমক। সকাল, সন্ধ্যা, রাত্রি তিন বেলা লুচি, রাবড়ি, ফলমূল ও অন্যান্য মিষ্টি সহযোগে ভোগ নিবেদন করা হয়। সেই ভোগ আবার প্রতিবেশীদের দেওয়া রেওয়াজ আছে। এরপর দশমীতে প্রতিমা নিরঞ্জন হয় বালাসনে।’
অন্যদিকে, মহানন্দায় প্রতিমা নিরঞ্জন করেন বছর ২৫-এর শুভঙ্কর দাস। মাটিগাড়া তুম্বাজোত সংলগ্ন জ্যোতিনগর কলোনির মেজোবাড়িতে ১২ বছর থেকে পুজো করছে শুভঙ্কর। তিনি বলেন, ‘ছোটবেলায় নিজেই মাটির ছোট্ট প্রতিমা বানিয়ে পুজো পুজো করতাম। এরপর আমার এই উদ্যোগ পরিবারের ভালো লাগলে বাড়িতেই বড় করে পুজো শুরু হয়। এখন বাড়ির পাশাপাশি এলাকাবাসীও পুজোয় মেতে ওঠেন।’