দীপেন রায়, মেখলিগঞ্জ: ভারতে দ্বৈত নাগরিকত্ব (Dual Citizenship) স্বীকৃত নয়। ফলে, অভিনেতা অক্ষয়কুমারের মতো বহু সেলেবকে অন্য দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় পাসপোর্ট জমা করতে হয়েছিল। কিন্তু অক্ষয়রা যে সুবিধা চাইলেই পান সেই একই সুবিধা পাচ্ছেন মেখলিগঞ্জ ব্লকের কুচলিবাড়ির তিস্তা চরের বাসিন্দাদের একাংশ। আইনের সাদা চোখে এটা সম্ভব নয়। কিন্তু বাস্তব অন্য কথা বলে। ভারতীয় আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চরবাসীরা দিব্যি ভারত ও বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নিয়ে রেখেছেন। প্রমাণাভাবে কার্যত পুলিশ-বিএসএফ কিছুই করতে পারছে না। জেলা পুলিশের এক আধিকারিকের বক্তব্য, ‘খোঁজ নিয়ে দেখছি। কিন্তু চরের প্রায় সবার কাছে ভারতীয় প্রমাণপত্র আছে। এদের মধ্যে বাংলাদেশি নাগরিক সন্দেহে কাউকে আটক করা যায় না। উপযুক্ত প্রমাণ পেলে তবেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিস্তা বাঁধের তিন-চার কিমি দূরে কুচলিবাড়ির ফকতের চর ও সিংপাড়া চরের অবস্থান। সেখানে কয়েক হাজার বিঘা উর্বর জমিতে বহু চাষি চাষাবাদ করছেন। চরের অর্ধাংশ বাংলাদেশের। বিএসএফ থাকলেও নদীপথে সীমান্ত পেরিয়ে সহজেই বাংলাদেশ যাতায়াত করা যায়। অনেকে ফকতের চরে মেয়ের বিয়ে দিতে অনাগ্রহী। ফলে, ছেলেদের একাংশ বাধ্য হয়ে বাংলাদেশে বিয়ে করেন। বাংলাদেশের সঙ্গে তাঁদের নিবিড় যোগ৷ সেই সুবাদে পাচার, চরের উৎপাদিত ফসল বিক্রির জন্য অনেকে অবৈধভাবে দ্বৈত নাগরিকত্ব নেন। চরবাসীর একাংশের অভিযোগ, চরের বহু মানুষের বাংলাদেশের নানা জায়গায় বাড়িঘর আছে। দ্বৈত নাগরিকত্বের সুবিধা সম্পর্কে চরের ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তি বলেন, ‘চর দিয়ে গোরু সহ নানা সামগ্রী পাচার হয়। দু’দেশের নাগরিকত্ব থাকলে উভয় দেশেই পুলিশ বা সীমান্তরক্ষীরা কাউকে ধরতে পারে না। চরে চাষাবাদের জন্য অনেকে সার নিয়ে যান। সেই সার বাংলাদেশে পাচার হয় বলে অভিযোগ। আবার বাংলাদেশে যে সারের দাম কম সেই সার ভারতে আসে। শুধু তাই নয়, চরের উৎপাদিত ফসলও পাচার হয়।’
আরও অভিযোগ, বহু বাংলাদেশি অবৈধ দ্বৈত নাগরিকত্বের মাধ্যমে ভারতের নাগরিকত্ব পেয়ে যান। একাংশের অভিযোগ, সীমান্তে অবৈধভাবে আধার কার্ড তৈরির চক্র সক্রিয়। কুচলিবাড়ি পুলিশের অভিযানে মাঝেমধ্যে আধার কার্ড তৈরিচক্রের লোকজন ধরা পড়ে। তবুও পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে ভারতের নাগরিকত্ব নিয়ে তাঁরা অন্য রাজ্যে চলে যান।
স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য রঞ্জন রায়, প্রধান নিরোলা ওরাওঁরা দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগের কথা স্বীকার করেছেন। রঞ্জনের বক্তব্য, ‘আমরা সব জানি। কিন্তু কিছু করার নেই। তবে বিএসএফ, পুলিশকে সব জানিয়েছি। যা ব্যবস্থা নেওয়ার ওরাই নেবে।’ প্রাক্তন পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য বাপি চক্রবর্তী বলেন, ‘আমাদের কাছেও অভিযোগ আসে, বেশ কয়েকজন ভারত ও বাংলাদেশের ভোটার কার্ড নিয়ে রেখেছেন। হয়তো অপরাধমূলক কাজ করতেই তাঁরা এসব করেন।’ জলপাইগুড়ি সেক্টরের এক বিএসএফ আধিকারিক জানান, বিষয়টি নিয়ে দ্রুত তদন্ত হবে। তাঁর দাবি, তিস্তা চরের প্রতিকূল সীমান্তে বিএসএফ জওয়ানরা সদা তৎপর।