করণদিঘিঃ উত্তর দিনাজপুরে সরকারিভাবে নথিভুক্ত পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার। সম্প্রতি দুয়ারে সরকার শিবিরে এমনই তথ্য উঠে এসেছে। এই বিপুল সংখ্যক শ্রমিক ভোট দিতে না এলে ভোটবাক্সে তার প্রভাব পড়বে এমনই মত প্রায় দব দলের নেতাদেরই। আর সেই সম্ভাবনাটাই বাড়ছে ক্রমাগত। এর দুটি কারণ। এক, ছুটি। দুই, যাতায়াতের বিপুল খরচ। চাকুলিয়া বিধানসভার ডাইটনের বাসিন্দা ইব্রাহিম দিল্লি থেকে জানান, ‘এবারে লোকসভা ভোটে বাড়িতে যাওয়া হবে না। খরচ কে বহন করবে? তাই নিজের টাকা খরচ করে ভোট দিতে যাওয়ার ইচ্ছে নেই।’
শিল্পবিহীন উত্তর দিনাজপুর জেলার সমস্ত ব্লক থেকেই শ্রমিকরা কেউ মুম্বইয়ে, গুরগাঁও, পঞ্জাব, হরিয়ানা, কেরল, দিল্লিতে কাজ করছেন। অনেকেই পরিবার সহ সেখানে ঘরভাড়া নিয়ে থাকেন। রসাখোয়ার বাসিন্দা তথা এক পরিযায়ী শ্রমিক মরতুজার কথায়, ‘সংসারের আর্থিক অনটন ঘোচাতেই ভিনরাজ্যে কাজ করতে হয়। কেউ বড় অঙ্কের ঋণ নিয়ে বাড়ি করেছেন। কেউবা মেয়ের বিয়ে দিয়ে ঋণের বোঝা কমাতে পারি দিয়েছে কাশ্মীরে। আবার কেউ মেয়ের বিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে টাকা উপার্জন করতে ভিনরাজ্যে গিয়েছেন। কেউবা গিয়েছেন, বাবা-মায়ের চিকিৎসার খরচ জোগাতে। দুই-তিন বছর পর বাড়ি ফেরেন।’ ডালখোলার সুদর্শন মজুমদার মেয়ে বিয়ের টাকা জোগার করতে পারি দিয়েছেন হায়দরাবাদে। ভোটে বাড়ি ফিরছেন না।
হাসানের পরিযায়ী শ্রমিক দিলীপ বিশ্বাস জানান, ‘পুনেতে বিল্ডিং নির্মানের কাজ করছি। প্রতিমাসেই সংসার খরচ পাঠাতে হয়। অনেক ঋণ রয়েছে, দিনরাত কাজ করতে হচ্ছে।’ করণদিঘির পরিযায়ী শ্রমিক মহম্মদ নাসিম আকতার ফোনে বলেন, ‘এলাকায় কাজ না পেয়ে স্ত্রী, সন্তানকে নিয়ে দিল্লিতে চলে এসেছি। বাবার মুখে শুনেছি ২৬ এপ্রিল রায়গঞ্জ লোকসভা আসনে ভোট। যাব কিভাবে? খরচ দেবে কে? ছুটিই বা পাব কিভাবে?’
পরিযায়ী শ্রমিকদের এই দশা নিয়ে রাজ্য সরকারকে তোপ দেগেছেন রায়গঞ্জ লোকসভা আসনের কংগ্রেস প্রার্থী আলি ইমরান রমজ ওরফে ভিক্টর। তাঁর অভিযোগ, ‘কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার কিছুই করেনি পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য।’ জেলা তৃণমূল সভাপতি কানাইয়ালালের দাবি, ‘শ্রমিকদের বাইরে যাওয়া আটকাতে তৃণমূল সরকার স্বল্প সুদে ঋণ দিচ্ছে।’ বিজেপির জেলা সহ সভাপতি সত্যনারায়ণ সিংহের কটাক্ষ, ‘শিল্পবিহীন জেলা উত্তর দিনাজপুর। কেন্দ্রীয় সরকারের মুদ্রা লোন সহ বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা দিচ্ছে, যাতে শ্রমিকরা জেলায় বসেই উপার্জন করতে পারেন।’