মানিকচকঃ কেরালায় গিয়ে মাছের ব্যবসায় ব্যাপক পসার জমিয়েছিলেন মালদার মানিকচক নাজিরপুরের একটি ছোট্ট গ্রাম লস্করপুরের যুবক প্রকাশ। স্বল্প লাভে মাছ বিক্রি করায় অল্প দিনের মধ্যেই রমরমিয়ে জমে উঠেছিল প্রকাশের মাছের ব্যবসা। কিন্তু প্রকাশের রমরমিয়ে চলা মাছের কারবার চক্ষুশূল হয়ে দাঁড়িয়েছিল স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ীদের কাছে। বারবার হুমকির মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁকে। তবে হুমকির ভয়ে নিজের ব্যবসা গুটিয়ে নেয়নি প্রকাশ। আর শেষমেষ এই মাছের ব্যবসাই কাল হল তাঁর। গত শনিবার সন্ধ্যায় নৃশংসভাবে খুন হতে হল প্রকাশকে। জানা গেছে ভাড়াটে খুনি দিয়ে প্রকাশকে খুন করা হয়েছে। মৃত প্রকাশের পরিবারের দাবি, স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ীরাই ভাড়াটে খুনি দিয়ে হত্যা করিয়েছে প্রকাশকে। আরও জানা গেছে, এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই সন্দেহভাজন এক দুষ্কৃতিকে গ্রেপ্তার করেছে কেরালা পুলিশ।শনিবার রাতে প্রকাশের মৃত্যুর খবর পৌঁছতেই গ্রামের বাড়িতে কান্নার রোল পরে যায়। পরিবারের অভিযোগ মাছের ব্যবসা সংক্রান্ত কারণেই খুন করা হয়েছে প্রকাশকে।
মানিকচকের নাজিরপুর অঞ্চলের লস্করপুর এলাকার বাসিন্দা প্রকাশ মহালদার। পরিবারের বৃদ্ধ বাবা মা ছাড়াও স্ত্রী এবং নাবালক সন্তান রয়েছে। বিগত দুই মাস আগে পরিবারের আর্থিক অনটন মেটাতে কেরালার দানাপুরে শ্রমিক হিসাবে পাড়ি দেয় সে। সেখানে শ্রমিকের পাশাপাশি মাছ বিক্রির ব্যবসাও শুরু করেন তিনি। বিগত দুই মাসে মাছের ব্যবসা ভালই জমিয়ে ফেলেছিলেন সেখানে। আর এই মাছ ব্যবসায় যে তার কাল হবে তা জানা ছিল না প্রকাশের। জানা গিয়েছে, অন্যান্য ব্যবসায়ীদের থেকে কম লাভে মাছ বিক্রি করতো প্রকাশ যার ফলে ক্ষতির মুখে পড়েছিল স্থানীয় বেশ কিছু মাছ ব্যবসায়ী। তাই স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী তাঁকে হুমকি দিয়েছিল সে যেন আর মাছ বিক্রি না করে। তবে সেই হুমকিকে আমল দেয়নি প্রকাশ। শনিবার রাতে বাড়ি ফেরার পথে চাকু মেরে খুন করা হয়ে তাঁকে।
মৃতের বাবা হাবলু মহালদার বলেন, “তার উপার্জনের উপর নির্ভর করত গোটা পরিবার। শনিবার বিকেলেই ছেলের সঙ্গে শেষ কথা হয়েছে। রাতে খবর আসে ছেলেকে চাকু মেরে খুন করা হয়েছে। স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ীরাই আক্রোশ বসত ছেলেকে খুন করেছে বলে জানতে পেরেছি। এই ঘটনায় স্থানীয় পুলিশ এক দুষ্কৃতিকেও গ্রেপ্তার করেছে বলে জেনেছি। তবে ছেলের মৃতদেহ ফিরিয়ে আনতে আমরা মানিকচক থানার সঙ্গে যোগাযোগ করি। কিন্তু মানিকচক থানা কেরালা পুলিশের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ করতে বলেছে। আমি চাই আমার ছেলের মৃতদেহ বাড়ি ফিরে আসুক এবং যারা এই ঘটনায় যুক্ত তাদের উপযুক্ত শাস্তি হোক।”
তবে ভিন রাজ্যে এভাবে পরিযায়ী শ্রমিককে খুন করার ঘটনায় ভীত স্থানীয় শ্রমিকরা। অমল রবিদাস নামে মানিকচকের এক শ্রমিক বলেন, “যদি ভিন্ন রাজ্যে কাজে গিয়ে শ্রমিকদের এভাবে খুন হতে হয় তবে কাজে যাব কি যাব না তা ভাবতে হবে বা অন্য রাজ্য থেকে আমাদের রাজ্যে শ্রমিক আসতে ও ভয় পাবে। তাই প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখুক।”