রায়গঞ্জঃ নিজেকে ইঞ্জিনিয়ার পরিচয় দিয়ে ছবি বদলে ফেসবুকে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খুলে প্রতারণার জাল পেতেছিলেন এক নির্মাণ শ্রমিক। তার পাতা জালেই ফেঁসে যায় এক কিশোরী। সেই কিশোরীকে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে টানা চারদিন আটকে রেখে পাশবিক অত্যাচার চালানোর অভিযোগ উঠল সেই নির্মাণ শ্রমিকের বিরুদ্ধে। মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে কিশোরীকে উদ্ধার করে পুলিশ। বেপাত্তা মূল অভিযুক্ত যুবক ও তাঁর পরিবার।
এমনই চাঞ্চলকর ঘটনা ঘটেছে বাড়ি কালিয়াগঞ্জ থানার রাধিকাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের চক ভবানীপুর গ্রামে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই এলাকার যুবক সিমন বাস্কে নিজের ছবি ও পরিচয় বদলে ফেসবুকে একটি ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খুলে প্রতারণার জাল বিছিয়ে ছিলেন। এই অ্যাকাউন্টে নিজের ছবির বদলে অন্য এক সুদর্শন যুবকের ছবি লাগিয়ে বিভিন্ন মহিলার সঙ্গে প্রেমের ফাঁদ পেতেছিল কেরালার এই পরিযায়ী শ্রমিক সিমন। পরিযায়ী শ্রমিক হয়েও ফেসবুকে নিজেকে এক বড় নির্মাণ সংস্থার অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে পরিচয় দিতেন বলে অভিযোগ। এভাবেই তার ফাঁদে পা দেয় রায়গঞ্জের এক কিশোরী। ফেসবুকে সিমনের ভুয়ো ছবি ও পরিচয়ে মোহিত হয়ে যায় সে। ধীরেধীরে দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সম্প্রতি সিমন কিশোরীকে জানায় কয়েকদিনের ছুটিতে নিজের বাড়ি কালিয়াগঞ্জে আসছে। সেই মতো যুবক কেরালা থেকে কালিয়াগঞ্জে ফিরলে কিশোরীকে দেখা করার প্রস্তাব দেয়। সেই প্রস্তাবে রাজি হয়ে গত ১২ মে দুজনে দেখা করে। এবং ঘুরতে যাওয়ার নাম করে যুবক বাইকে চাপিয়ে নিয়ে যায় তাঁর নিজের বাড়ি চক ভবানীপুর গ্রামে। সেখানে নিয়ে গিয়েই কিশোরীকে গৃহবন্দি করে ফেলে সিমন বাস্কে। এই কাজে মদত দেয় যুবকের স্ত্রী, মা ও পরিবারের অন্যারা। তারপর থেকেই শুরু হয় পাশবিক অত্যাচার। গত চারদিন ধরে কিশোরীকে ধর্ষণ ও মারধোর করে বলে অভিযোগ। যাতে কোনওভাবেই মেয়েটি বাড়ি থেকে বেরোতে না পারে সেকারণে তার ওপর নজরদারি চালাতেন অভিযুক্ত যুবকের স্ত্রী ও পরিবারের অন্যরা।
এদিকে কিশোরী নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পর রায়গঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন কিশোরীর পরিবারের লোকেরা। সেই অভিযোগ পাওয়ার পর নড়েচড়ে বসে পুলিশ। কিশোরীর মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে পুলিশ জানতে পারে অভিযুক্তের বাড়ির ঠিকানা। সেই মোতাবেক মঙ্গলবার গভীর রাতে কালিয়াগঞ্জ থানার সহযোগিতায় রায়গঞ্জ পুলিশের একটি দল হানা দেয় রাধিকাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের চক ভবানীপুর গ্রামে। গ্রামে পুলিশের আসার খবর কানে আসতেই কিশোরীকে বাড়িতে ফেলে রেখে চম্পট দেয় অভিযুক্ত যুবক ও তার পরিবারের লোকেরা। এরপরই কিশোরীকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে পুলিশ।
এদিকে কিশোরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিমন বাস্কে সহ চার অভিযুক্তের নাম জানতে পারে পুলিশ। চারজনের বিরুদ্ধে পকসো আইন, অপহরণ সহ বেশ কয়েকটি জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ।
নির্যাতিতা কিশোরী পুলিশকে জানিয়েছে, সে উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্রী। মূল অভিযুক্ত সিমন বাস্কের ভুয়ো ফেসবুক প্রোফাইলে মোহিত হয়েই প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন। সিমন সে বিবাহিত সেটা তিনি জানতেন না। তাকে গৃহবন্দি করে পরিবারের লোকের মদতে চারদিন ধরে যৌন নির্যাতন চালিয়েছে অভিযুক্ত যুবক। কিশোরীর মা মংলী হাঁসদা অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।