উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখাতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে গেল ৫ যাত্রী সহ একটি সাবমেরিন। গত রবিবার যাত্রা শুরুর ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট পর আটলান্টিক মহাসাগরে নিখোঁজ হয় সেটি। সাবমেরিনটির সন্ধানে জোর তৎপরতা চলছে।
আটলান্টিক মহাসাগরে হারিয়ে যাওয়া সাবমেরিনটির নাম টাইটান। এই সাবমেরিনের মালিক মার্কিন প্রতিষ্ঠান ওশানগেট। সমুদ্রের তলদেশে গবেষণা, অনুসন্ধান, এমনকি ভ্রমণ করতে ইচ্ছুক—এমন লোকজনকে সাবমেরিনের মাধ্যমে সমুদ্রের নিচে নিয়ে যায় প্রতিষ্ঠানটি। ট্রাকের আকৃতির এই সাবমেরিনটিতে চালক ও একজন ক্রুসহ মোট পাঁচজন আরোহী থাকতে পারেন। সেটি জলের নিচে সর্বাধিক চারদিন অক্সিজেন সরবরাহের ক্ষমতা আছে। ওশানগেটের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হারিয়ে যাওয়া সাবমেরিনের আরোহীদের ফিরিয়ে আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে তারা।
জানা গিয়েছে, কানাডার নিউফাউন্ডল্যান্ড প্রদেশের সেন্ট জন শহর থেকে টাইটানের যাত্রা শুরু হয়। সেন্ট জন থেকে টাইটানকে পোলার প্রিন্স নামের একটি জাহাজে করে ৬০০ কিলোমিটার দূরে যেখানে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে সাগরের তলদেশে যাত্রীদের নিয়ে যায় সাবমেরিনটি। টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ ঘুরিয়ে আনতে এটির সময় লাগার কথা প্রায় আট ঘণ্টা। সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, যাত্রার ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের মাথায় ছোট সাবমেরিনটির সঙ্গে ভূপৃষ্ঠের নিয়ন্ত্রণকক্ষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। সাবমেরিনটিতে যে পরিমাণ অক্সিজেন মজুত থাকে, তা দিয়ে ৯৬ ঘণ্টা জলের নিচে টিকে থাকা যায়। তবে ইতিমধ্যে তার অনেকখানিই ফুরিয়ে এসেছে।
এদিকে নিখোঁজ হওয়া সাবমেরিনটির খোঁজে আটলান্টিক মহাসাগরের প্রায় ২০ হাজার বর্গকিলোমিটার জায়গাজুড়ে অভিযান চলছে। উদ্ধারকার্যে শামিল হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ড, কানাডার নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী ও কোস্টগার্ড এবং নিউইয়র্কের এয়ার ন্যাশনাল গার্ডের উদ্ধারকারী দল এ অভিযানে সহযোগিতা করছে। এছাড়াও রয়েছে ফ্রান্সের একটি জরিপকারী জাহাজও। তবে সময় যত গড়াচ্ছে, নিখোঁজ সাবমেরিনটিতে মজুত থাকা অক্সিজেন ততই ফুরিয়ে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ড বলছে, টাইটান নামের সাবমেরিনটিতে এখন যে পরিমাণ অক্সিজেন আছে, তা দিয়ে পর্যটকেরা ৩০ ঘণ্টারও কম সময় টিকে থাকতে পারবেন।
এদিকে নিখোঁজ টাইটানের আরোহীদের মধ্যে যুক্তরাজ্যের একজন ধনকুবের ছিলেন বলে জানা গেছে। তাঁর নাম হামিশ হার্ডিং। দিন কয়েক আগে ৫৮ বছর বয়সী এই ধনকুবের সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছিলেন, তিনি টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে যাচ্ছেন। তিনিও রয়েছেন নিখোঁজ হয়ে যাওয়া সাবমেরিন টাইটানে।
উল্লেখ্য, ১৯১২ সালে যুক্তরাজ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের উদ্দেশে প্রথম যাত্রা শুরু করে টাইটানিক। সেবারই এক হিমশৈলির সঙ্গে ধাক্কা লেগে ডুবে যায় সে সময়ের সবচেয়ে বড় এ জাহাজটি। এতে জাহাজটিতে থাকা ২ হাজার ২০০ যাত্রীর ১ হাজার ৫০০ জনের বেশি মারা যান। ১৯৮৫ সালে আটলান্টিকের তলদেশে ১২ হাজার ৫০০ ফুট গভীরে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের সন্ধান পাওয়া যায়।