নয়াদিল্লি: এনসিপি সুপ্রিমো শরদ পাওয়ারকে নিয়ে প্রবল অস্বস্তিতে পড়েছে বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোট। সূত্রের দাবি, আগামী ১ আগস্ট মহারাষ্ট্রে একমঞ্চে মুখোমুখি হতে পারেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং এনসিপি সুপ্রিমো শরদ পাওয়ার। সেই অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন দলত্যাগি এনসিপি নেতা এবং মহারাষ্ট্রের উপ মুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ার সহ মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিণ্ডে, তথা রাজ্য বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফড়নবিসও। ওই দিন পুণের লোকমান্য তিলক স্মারক মন্দির ট্রাস্ট আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর হাতে তিলক সম্মান তুলে দেবেন পাওয়ার। সাম্প্রতিক বিরোধী রাজনৈতিক অবস্থান এবং প্রেক্ষাপটে এনসিপি প্রধানের উচিত এই অনুষ্ঠান বয়কট করা, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এক মঞ্চে উপস্থিত না হওয়া, এমনটাই অভিমত বিরোধী জোটের প্রতিনিধিদের একটা বড় অংশের। এই প্রসঙ্গে মধ্যস্থতা দাবি করে সরাসরি কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের দ্বারস্থ হয়েছে বিরোধী দলীয় নেতৃত্ব। ওইদিন পুণেতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পাওয়ার যেন কোনও ভাবেই মঞ্চ ভাগ না করেন, সে বিষয়ে খাড়গের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন বিরোধীরা।
বিরোধী শিবির সূত্রে জানা গিয়েছে, গত শুক্রবার সংসদে হাজির হয়েছিলেন বর্ষীয়ান নেতা শরদ পাওয়ার। সংসদে উপস্থিত হওয়া সত্ত্বেও, বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়গের সংসদীয় কক্ষে অনুষ্ঠিত বিরোধী দলীয় বৈঠকেও অংশ নেননি এনসিপি সুপ্রিমো। বিরোধীদের কানাঘুষোয় এও জানা গিয়েছে, আগামী ১ অগাস্ট সংসদে বিতর্কিত দিল্লি অধ্যাদেশ বিল নিয়ে উচ্চকক্ষে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হওয়ার সময়েও পুণের অনুষ্ঠানের জেরে গড়হাজির থাকতে পারেন পাওয়ার। এই প্রসঙ্গে শুক্রবার বিরোধী বৈঠকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিরোধী দলীয় সাংসদদের একাংশ। এ নিয়ে সরাসরি বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা খাড়গেই পাওয়ারের সঙ্গে কথা বলে পুণের অনুষ্ঠান থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিন, চাইবেন বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র অধিকাংশ সদস্যই। তাঁরা মনে করছেন, মণিপুর হিংসা এবং দিল্লি অর্ডিন্যান্স বিল ইস্যুতে যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে তথাকথিত ‘ধর্মযুদ্ধে’ নেমেছে বিরোধী ইন্ডিয়া জোট; সে মুহূর্তে মোদির সঙ্গে পাওয়ারের একই মঞ্চ ভাগ করে নেওয়ার ঘটনা নিতান্তই বিরূপ বার্তা বহনকারী এবং তার জেরে ক্ষতি হতে পারে বিরোধী সমন্বয়ের।
এই মর্মে এক শীর্ষ বিরোধী নেতার মন্তব্য, ‘যে ঘুমিয়ে থাকে তার থেকেও বেশি ভয়ানক হল যে ঘুমের ভান করে।’ এনসিপি সুপ্রিমো পাওয়ারের প্রতি এহেন কটাক্ষের কারণও ব্যাখা করেছেন ওই বিরোধী নেতা৷ তাঁর মতে, যেখানে ২০২৪ লোকসভার কাউন্ট ডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে, সেখানে দাঁড়িয়ে মোদি সরকারের বিরোধিতায় একজোট থাকার পরিস্থিতিতে পাওয়ার-মোদির মঞ্চভাগ যে আমজনতার কাছে বিরোধীদের ভাবমূর্তিকে নষ্ট করতে বাধ্য, এমনকি বিরোধী ঐক্যের জন্য তা সুখকর হবে না। তা-ই যেভাবে হোক শরদ পাওয়ারকে নিরস্ত্র করা উচিত বলে মনে করছেন তিনি। এই প্রসঙ্গে কংগ্রেসের মণিকম টেগোর বলেন, ‘শরদ পাওয়ার বর্ষীয়ান নেতা এবং সর্বজনশ্রদ্ধেয়। তিনি বিরোধী দলীয় জোটে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। উনি খুব ভালো মতো জানেন, বর্তমান সময়ে দেশ এবং বিরোধী ঐক্য কোন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। সেখানে একটা ভুল পদক্ষেপে কিন্তু বড়সড় মূল্য চোকাতে বাধ্য হবে বিরোধীরা। আমরা আশাবাদী উনি সব দিক বিচার-বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন।’ পাওয়ার-মোদি একমঞ্চ ভাগ করে নেওয়ার ক্ষেত্রে তৃণমূল সাংসদ নাদিমুল হক বলেন, ‘উনি (শরদ) প্রবীণ নেতা। বিরোধী রাজনীতি যথেষ্ট ভালো বোঝেন। বিজেপিই তাঁর দলে অন্তর্ঘাত ঘটিয়েছে, যার ফলে দলত্যাগী হয়েছে অজিত পাওয়ার, প্রফুল্ল প্যাটেলের মতো নেতারা। সেইসময় কংগ্রেস, তৃণমূল সকলেই তাঁর বিপদের দিনে পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে। এরপরেও যদি বিরোধী স্বার্থবিরুদ্ধ কোনও পদক্ষেপ নেন পাওয়ার, তাহলে বুঝতে হবে আগাগোড়া সবটা তলে তলে জানতেন শরদ! ভাইপোর এনডিএ-তে যোগদানের বিষয়টিতে সম্মতিও ছিল তাঁর।’ দেখার বিষয় শেষপর্যন্ত পুণের অনুষ্ঠানে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করে নেন কি না পাওয়ার, সেদিকেই নজর রাখছে ওয়াকিবহাল মহল।