উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ একা রুশ ‘বান্ধবীর’ কাছে নয়, রাজ্যের ‘প্রভাবশালী’র দুর্নীতির কালো টাকা পাচার হয়েছে আরও অন্তত জনা পনেরো বিদেশিনির অ্যাকাউন্টে। যাঁদের মধ্যে বেশ কয়েক জন ফিলিপিন্সের বাসিন্দা। এমনই দাবি করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। তদন্তকারীদের দাবি, এই একই ধাঁচে টাকা রেখেছেন রাজ্যের একাধিক ‘প্রভাবশালী’ও।
জানা গিয়েছে, দুবাই, ফিলিপিন্স সহ, দক্ষিণ-পূর্ব, পশ্চিম এশিয়ার দেশ গুলিতে কমিশনের বিনিময়ে ধনীদের কালো টাকা রাখতে ‘ভাড়া দেন’ নিজেদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। মূলত পাঁচতারা হোটেলে নাচ-গানের আসরে সেখানে আসা ধনীদের অনেকের সঙ্গে এঁদের পরিচয়। সেই মহিলারাই অল্প সময়ে মোটা রোজগারের আশায় ধনীদের কালো টাকা রাখার জন্য নিজেদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ভাড়া দেন। তদন্তে নেমে ইডির কাছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে আসে। ইডি-র অভিযোগ, যে ‘প্রভাবশালী’র রুশ বান্ধবী-যোগের কথা ইতিমধ্যেই তারা জানিয়েছে, তাঁর টাকার একটি মোটা অংশ জমা পড়েছে হংকং, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্স-সহ বেশ কয়েকটি দেশের অ্যাকাউন্টে। যাঁদের অ্যাকাউন্টে এই টাকা জমা পড়েছে পেশাগত পরিচয়ে তাঁরা অনেকেই মডেল। বেশির ভাগেরই জন্ম ফিলিপিন্স এবং সোভিয়েট ইউনিয়ন ভেঙে তৈরি হওয়া বিভিন্ন দেশে। ওই রুশ বান্ধবীই তাঁদের সঙ্গে ‘প্রভাবশালী’র যোগসূত্র বলে তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে দাবি। ইডি-র আরও দাবি, ওই সমস্ত বিদেশিনির অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত বেশ কিছু নথি ইতিমধ্যেই হাতে এসেছে তাদের।
তদন্তকারীদের দাবি, রাজ্যের এক প্রভাবশালীর দুর্নীতির কালো টাকা বিদেশে টাকা পাচারের বিষয়টি নজরে আসে। নজরদারি চালানো শুরু হয়। দেখা যায়, প্রথমে রুশ ‘বান্ধবী’র অ্যাকাউন্টে ধাপে ধাপে কয়েকশো কোটি টাকা জমা হয়েছে। তার পরে সেখান থেকেও সেই টাকার অংশ ছড়িয়ে গিয়েছে পেশায় মডেল একাধিক বিদেশিনিদের অ্যাকাউন্টে। ইডি সূত্রে দাবি, যে পরিমান টাকা জমা পড়েছে সেই সব ব্যাংক অ্যাকাউন্টে তার ২-৩ শতাংশ টাকা ওই সব অ্যাকাউন্ট থেকে তোলা হয়েছে। ২০১৭ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ থেকে দুর্নীতির কয়েকশো কোটি টাকা ধাপে ধাপে জমা পড়েছে এই বিদেশিনিদের অ্যাকাউন্টে। ইডির দাবি, প্রথমে হাওয়ালা মারফত টাকা পশ্চিম এশিয়ায় পাঠানো হয়েছে। সেখানে ভুয়ো সংস্থা খুলে, বিদেশিনিদের অ্যাকাউন্ট মারফত কালো টাকা সাদা করার চেষ্টা হয়েছে। পরে আবার তার একাংশ ‘ফিরে এসে’ ঢুকেছে রাজ্যেরই কয়েকটি সংস্থায়। এই প্রসঙ্গে উঠছে ‘প্রভাবশালী’র এক ‘ঘনিষ্ঠের’ নামও।
কীভাবে চলে ভাড়া করা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কালো টাকা রাখার কারবার? ইডির তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, সম্পূর্ণ মৌখিক চুক্তিতে কমিশনের ভিত্তিতে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ভাড়া দেন মহিলারা। মূলত পারস্পরিক বিশ্বাসে ভর করে চলা। হাওয়ালায় যেমনটা হয়। তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে যিনি টাকা রাখেন তার হাতে। যাতে টাকা নিয়ে চম্পট দিতে না পারে ব্যাঙ্কের সেই গ্রাহক। ডেবিট কার্ড, চেকবই, ব্যাংকের যাবতীয় নথি রাখেন নিজের হেপাজতে। এমনকি নেট-ব্যাঙ্কিংয়েও ওই অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড থেকে শুরু করে সব কিছু যিনি টাকা রেখেছেন, তাঁর নিয়ন্ত্রণে। ইডি সূত্রে দাবি, শুধু এ রাজ্যের এক-দু’জন ‘প্রভাবশালী’ নন, এই পন্থায় টাকা বিদেশে পাঠানোর উদাহরণ রয়েছে ভূরি-ভূরি। দুর্নীতির কয়েকশো কোটি টাকা তো সামান্য, কোটি কোটি ডলারের বিশ্ব জুড়ে মাদক পাচারের কারবার চলে, তার একটি অংশ এ ভাবেই লেনদেন করা হয় বিভিন্ন দেশের অ্যাকাউন্ট ভাড়া নিয়ে।”