নদিয়া: মনে ইচ্ছা থাকলে যে কোনওকিছুই অসম্ভব নয়, তা আরও একবার প্রমাণ করে দিলেন শান্তিপুরের গৃহবধূ লতিকা মণ্ডল। ছেলের সঙ্গে এবার উচ্চমাধ্যমিক দিয়েছেন তিনি। পরীক্ষায় তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৩২৪। ছেলে সৌরভ পেয়েছে ২৮৪। ৪০ নম্বর বেশি পেয়ে মায়ের আক্ষেপ, ছেলে যদি তাঁর থেকে বেশি নম্বর পেত তাহলে ভালো হত।
নদিয়ার শান্তিপুর থানার নৃসিংহপুর নতুন সর্দারপাড়া এলাকার বাসিন্দা লতিকা মণ্ডল। তাঁর তিন সন্তান, দুই মেয়ে ও এক ছেলে। মেয়েরা কলেজ পড়ুয়া। লতিকাদেবীর বয়স ৪০-এর কাছাকাছি। ছোট থেকেই পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল তাঁর। পরিস্থিতির চাপে বেশিদিন তা সম্ভব হয়নি। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ করেই একরকম বাধ্য হয়ে পড়াশোনা ছাড়তে হয়েছিল তাঁকে। প্রায় ১৯ বছর আগে বিয়ে হয়েছে লতিকাদেবীর। এরপর থেকে সংসার, সন্তানদের নিয়েই তাঁর জীবন।
বড় মেয়ে কলেজে ওঠার পর, নতুন করে পড়াশোনার ইচ্ছা হয় লতিকাদেবীর। এক প্রতিবেশীর সাহায্যে রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক স্তরে ভর্তি হন তিনি। এরপর মাধ্যমিকে গণ্ডি পার হয়ে ভর্তি হন নৃসিংহপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে। ছেলে সৌরভ কালনা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। একই শ্রেণির পড়ুয়া মা ও ছেলে বাড়িতে একসঙ্গেই পড়াশোনা করতেন। এদিকে মা ও ছেলে একই শ্রেণিতে পড়ায়, কিংবা ছেলের সঙ্গে মা এত বয়সে লেখাপড়া করায় কটুক্তিও শুনতে হয়েছে তাঁকে। তবুও সেসব যেন থামিয়ে রাখতে পারেনি লতিকাদেবীকে। সংসার সামলে উচ্চমাধ্যমিক দিয়েছেন তিনি। বুধবার উচ্চমাধ্যমিকের ফলপ্রকাশ হয়। লতিকাদেবী অনলাইনে ফলাফল জানতে পারেন। তিনি বলেন, ‘আমরা দুজনেই পাশ করেছি। আমি পেয়েছি ৩২৪ আর ছেলে ২৮৪। ছেলে আমার থেকে বেশি পেলেই হয়তো ভালো হত। আমি খুশি হতাম।’ আগামীতে আরও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চান বলে জানিয়েছেন লতিকাদেবী। নিজে মায়ের চাইতে কম নম্বর পেলেও মায়ের সাফল্যে খুশি সৌরভও।