চাঁদকুমার বড়াল, কোচবিহার: উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষক ছাত্রের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে (Researcher Death)। তুফানগঞ্জের (Tufanganj) ওই ছাত্রের দেহ পাওয়া গিয়েছে বর্ধমান রেলস্টেশন (Burdwan Railway Station) এলাকায়। বেনারসে (Banaras) একটি শংসাপত্র আনতে যাচ্ছেন বলে মঙ্গলবার বাড়ি থেকে বের হন প্রসেনজিৎ বর্মন (৩০) নামে ওই গবেষক। তার চারদিন পর শুক্রবার দুপুরে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। তদন্তের দাবি জানিয়েছে প্রসেনজিতের পরিবার। ঘটনাস্থল থেকে তাঁর মোবাইল ফোন ও ব্যাগ না পাওয়ায় রহস্য ঘনীভূত হচ্ছে।
উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রদ্যুৎ পাল শনিবার বলেন, ‘খুবই দুঃখজনক ঘটনা। ওঁর পরিবারের পাশে রয়েছি। সমবেদনা জানাই।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএমসিপির ইউনিট সভাপতি হিমাদ্রীশেখর মল্লিক বলেন, ‘শুক্রবার ঘটনাটি শুনি। খুবই ভালো ছেলে ছিল। তার পরিবারকে ঈশ্বর শক্তি দিক। ঘটনার ভালোভাবে তদন্ত হোক।’
তুফানগঞ্জের অন্দরান ফুলবাড়ি-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের পশ্চিম অন্দরান ফুলবাড়ি গ্রামে বাড়ি প্রসেনজিতের। বাড়িতে বাবা ও মা রয়েছেন। একেবারে সাধারণ পরিবারের ছেলে প্রসেনজিৎ। তাঁর বাবা তুফানগঞ্জ এনএনএম হাইস্কুলের সামনে পেয়ারা বিক্রি করেন। এক দিদির বিয়ে হয়েছে। বেনারস থেকে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন করার পর তিনি পুণ্ডিবাড়িতে উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি সম্প্রসারণ নিয়ে পিএইচডি করছিলেন। দ্বিতীয় বর্ষ চলছিল সেই গবেষণার।
শনিবার প্রসেনজিতের বাবা প্রভাতচন্দ্র বর্মন জানান, তাঁর ছেলে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলেই থাকতেন। গত সপ্তাহে বাড়িতে আসেন। মঙ্গলবার বেনারসে একটি শংসাপত্র আনতে যাবেন বলে জানিয়ে রওনা দেন। এরপর বৃহস্পতিবার বেনারস থেকে জানান তাঁর টাকা ফুরিয়ে গিয়েছে। এরপর প্রভাতবাবু ৫০০ টাকা পাঠান। সেদিন রাত ১১টা নাগাদ শেষবার কথা হয় ছেলের সঙ্গে। তখন প্রসেনজিৎ বলেছিলেন, তিনি ট্রেনে রয়েছেন এবং বিহারে তাঁর ট্রেন আছে। এরপর শুক্রবার সকাল থেকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন তোলেননি। সন্ধে ৬টার সময় তুফানগঞ্জ থানা থেকে ফোন করা হয় এবং মোবাইলে ছেলের মৃতদেহ দেখানো হয়।
প্রভাতবাবু বলেন, ‘খুবই কষ্ট করে ছেলেকে মানুষ করেছি। ছেলে মেধাবী হওয়ায় অভাব-অনটনের মধ্যেও অনেক আশা নিয়ে বেঁচেছিলাম। এরপর কীভাবে বাঁচব?’
প্রসেনজিতের কাছ থেকে একটি শিয়ালদা-বর্ধমান লোকাল ট্রেনের টিকিট পাওয়া গিয়েছে। তিনি কোচবিহারের ট্রেনে না চেপে লোকাল ট্রেনে বর্ধমান কেন এসেছিলেন, সেই প্রশ্ন উঠছে। বর্ধমান স্টেশন থেকে কিছুটা দূরে কারশেডে তাঁর দেহ লাইনের পাশে পড়েছিল। সারা শরীরে সেভাবে ক্ষতচিহ্ন না থাকলেও পেটের কাছে ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। তাঁর মোবাইল ফোন এবং ব্যাগ পাওয়া যায়নি। মানিব্যাগে পরিচয়পত্র ছিল। যা থেকে বর্ধমান জিআরপি তুফানগঞ্জ থানায় যোগাযোগ করেছে।
শুক্রবার রাত ১০টা নাগাদ প্রসেনজিতের বাবা, মামা ও আরেক পরিচিত মিলে একটি অ্যাম্বুল্যান্সে করে বর্ধমান রওনা দেন। শনিবার সকালে তাঁরা সেখানে পৌঁছান। বর্ধমান মেডিকেল কলেজে ময়নাতদন্ত হয়েছে। এদিন সন্ধ্যায় তাঁরা দেহ নিয়ে কোচবিহারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। এদিকে, প্রসেনজিতের বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাঁর মা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। দিদির অবস্থাও একই। প্রতিবেশীরা তাঁদের বাড়িতে ভিড় করেছেন।