অনুপ সাহা, পেডং: আর বেশিদিনের অপেক্ষা নয়, শাটারবাগদের পছন্দের অন্যতম গন্তব্য হতে চলেছে বাগ্রাকোট (Bagrakote) থেকে সিকিমগামী (Sikkim) নতুন জাতীয় সড়ক। যে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পাহাড়ি পাকদণ্ডি বেয়ে দু-লেনের সড়কটি তৈরি হচ্ছে, তা এককথায় অনবদ্য। বাগ্রাকোট থেকে শুরু করে প্রথম ১৩ কিলোমিটার এগোতেই আকর্ষণীয় কয়েকটি লুপ ও ভায়াডাক্ট যে আগামীদিনে ছবি তুলতে আগ্রহীদের পাশাপাশি পর্যটকদের মুগ্ধ করবেই তা নিশ্চিত।
বাগ্রাকোট থেকে ইন্দো-চিন সীমান্তের নাথু লা (Nathu La) পর্যন্ত বিকল্প জাতীয় সড়কের নির্মাণকাজ চলছে দ্রুতগতিতে। সব ঠিক থাকলে চলতি বছরেই সড়কটি চালু হয়ে যেতে পারে বলে দাবি করছেন ন্যাশনাল হাইওয়ে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড (এনএইচআইডিসিএল)-এর এই কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রোজেক্ট ম্যানেজার প্রতাপ শর্মা। তিনি বলছেন, ‘এ বছরের মধ্যে বাগ্রাকোট থেকে ঋষি পর্যন্ত সড়ক আমরা চালু করব। সেই লক্ষ্যে কাজ এগোচ্ছে।’
কেন্দ্রীয় ভূতল পরিবহণমন্ত্রকের উদ্যোগে ভারতমালা পরিযোজনায় ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই সড়ক তৈরির কাজ শুরু হয় ২০২০ সালে। পাহাড়ের গা বেয়ে তৈরি হচ্ছে দু-লেনের (১০ মিটার চওড়া) ৭১৭ এ এবং ৭১৭ বি জাতীয় সড়ক। বাগ্রাকোট থেকে পেডং পর্যন্ত রাস্তার কাজ এগিয়েছে অনেকটাই। তবে, চুইখিমের পর বরবট পাহাড়ি গ্রামে প্রায় ৫০০ মিটার এলাকায় জমি সংক্রান্ত সমস্যার জেরে কোনও কাজ হয়নি। প্রতাপ শর্মা জানিয়েছেন, যে ৫০০ মিটার এলাকায় কাজ হয়নি, তার ডিপিআর তৈরি হয়েছে। এক মাসের মধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করে কাজ শুরু করা হবে।
সিকিমের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগে বিকল্প পথ হিসেবে ব্যবহারের পাশাপাশি নতুন এই সড়কটি এ রাজ্যের দুই জেলা বিশেষ করে কালিম্পং ও জলপাইগুড়ির পর্যটন প্রসারেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে চলেছে বলে আশাবাদী পর্যটন ব্যবসায়ী রাজ বসু। বাগ্রাকোট, চুইখিম, বরবট, নিমবঙ, কাফেরগাঁও, লাভা, পেডং হয়ে সিকিম সীমান্তের ঋষি পর্যন্ত বিস্তীর্ণ পাহাড়ি এলাকাগুলোর সাধারণ মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতিতেও সহায়ক হবে বলে আশায় বুক বাঁধছেন স্থানীয়রা।
বাগ্রাকোট থেকে নতুন জাতীয় সড়ক ধরে পাহাড়ি পথে কিছুটা এগোতেই নজরে পড়বে বিশাল কর্মযজ্ঞ। তৈরি হচ্ছে ৭টি ভায়াডাক্ট ও একাধিক লুপ। লুপ ও ভায়াডাক্টগুলো এমনভাবে তৈরি করা হচ্ছে যে, ১৩ কিলোমিটার পাহাড়ি পথ ওঠার পর ১ কিলোমিটার দূরত্বে কোনও গাড়ি আছে কি না তা স্পষ্ট দেখা যাবে।
বাগ্রাকোট থেকে শুরু হয়ে ৭১৭-এ জাতীয় সড়ক পেডং পেরিয়ে পূর্ব সিকিমের ঋষি সীমান্ত পর্যন্ত যাবে। তারপর রেনক-রোরেথাঙ, পাকিয়ং, রানিপুল হয়ে উত্তর সিকিমের মেনলা পর্যন্ত এগিয়ে যাবে ৭১৭ বি জাতীয় সড়ক। মেনলা থেকে ৩১০ নম্বর জাতীয় সড়কের সঙ্গে জুড়ে নাথু লা পৌঁছাবে সড়কটি। বর্তমানে এনএইচ-১০ ধরেও রানিপুল হয়ে নাথু লা যাওয়া যায়। কিন্তু প্রতিবছর বর্ষায় ধস ও দুর্যোগের কারণে মাঝে মাঝেই ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ হয়ে থাকার ফলে একদিকে যেমন সিকিমবাসীকেও ভুগতে হয়, তেমনই জরুরি প্রয়োজনে সেনাবাহিনীকেও অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। এই জাতীয় সড়ক চালু হলে সেই সমস্যা মিটবে।