শিলিগুড়ি: চারিদিকে শুধুই পাহাড়। অপরূপ দৃশ্য। মায়াভরা দার্জিলিং। পাথুরে পথঘাট। মাঝেমধ্যে ভেসে ওঠে সুর। তাতে জুড়ে যায় কথামালা। হয়ে ওঠে গান। নেপালি গান। সেই গান এবার পৌঁছে যাবে সুদূর আমেরিকায়। সেদেশে অনুষ্ঠিত হতে চলছে নেপালি রক কনসার্ট। দার্জিলিংয়ের জনপ্রিয় রক ব্যান্ড ‘মন্ত্র’-র হাত ধরে আমেরিকার দশটি শহর মেতে উঠবে ‘রেশম ফিরিরির’ সুরে। বুধবার দিল্লি থেকে আমেরিকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন ওই ব্যান্ডের ছয়জন সদস্য। আগামী ২৫ মে থেকে ২৯ জুন পর্যন্ত আমেরিকার বিভিন্ন শহরে এই কনসার্ট হবে।
প্রত্যেকবছর দেশ-বিদেশ থেকে প্রচুর পর্যটক দার্জিলিং ঘুরতে আসেন। খাদ্যরসিক পর্যটকদের জনপ্রিয় জায়গা ম্যাল রোডের গ্লেনারিজ। সেখান থেকেই গানের দুনিয়ায় পথ চলা শুরু ওই ব্যান্ডের সদস্যদের। গ্লেনারিজে গান গেয়ে তাঁরা মুগ্ধ করেছেন দেশ-বিদেশের পর্যটকদের। এরপর বাড়ে জনপ্রিয়তা। ২০০০ সালে রক ব্যান্ড হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে মন্ত্র’র। তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁদের। একের পর এক হিট গানে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছে এই ব্যান্ড।
এরপর দেশের গণ্ডি পেরিয়ে হংকং, ইজরায়েল, দুবাই, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়ায় মতো দেশে গিয়ে শ্রোতাদের নেপালি রক গানে মুগ্ধ করেছে ব্যান্ডটি। এবার তাঁদের সফর মার্কিন মুলুকে। মন্ত্রের গিটারবাদক প্রজ্ঞা লামা বলছেন, ‘প্রথমদিকে গ্লেনারিজের সুবাদে আমরা প্রচুর শ্রোতাকে গান শোনানোর সুযোগ পেয়েছিলাম। অনেক প্রশংসা পেয়ে নিজেদের ব্যান্ড চালু করার সাহস জন্মায়। প্রথমে আমরা অন্য ব্যান্ডের গান গাইতাম। ২০০৩ সালে প্রথম নিজেদের অ্যালবাম প্রকাশ করি।’
এই অ্যালবাম সেসময় খুব জনপ্রিয়তা পায়। এরপর তাঁরা আরও তিনটি অ্যালবাম প্রকাশ করেন। ‘সেই থেকেই আমাদের আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি’, বলছেন প্রজ্ঞা। প্রথমবার বস্টন, সান ফ্রান্সিসকো, নিউ ইয়র্কের মতো শহরে কনসার্টে যাচ্ছে মন্ত্র। প্রস্তুতি কেমন? ব্যান্ডের স্যাক্সোফোন ও বাঁশিবাদক বিধান থাপা বলছেন, ‘এ যেন আমাদের স্বপ্নপূরণ। ব্যান্ডের সবাই দার্জিলিংয়ের বাসিন্দা হওয়ার সুবাদে প্রতিদিন সাত থেকে আট ঘণ্টা অনুশীলন করেছি। এছাড়াও কাজের ফাঁকে যখনই সময় পেয়েছি একা রেওয়াজ চালিয়েছি।’ আমেরিকায় ‘নিজেদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব’ বলে জানিয়েছেন কীবোর্ডবাদক মণীশ থাপা।
ব্যান্ডের সদস্যরা উপার্জনের টাকা থেকে বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজ করেছেন। দার্জিলিংয়ের টার্নবুল হাইস্কুলের শিক্ষক তথা এই ব্যান্ডের কণ্ঠশিল্পী ভাস্কর দেবান চান পাহাড়ের সংস্কৃতি গোটা বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে। সেনায় কর্মরত ব্যান্ডের ড্রামার ব্রিজ চৌধুরী এই সাফল্যের কৃতিত্ব দিয়েছেন শ্রোতাদের। ‘শ্রোতারা আমাদের গানগুলো পছন্দ করার জন্যই আমেরিকা থেকে এই সুযোগ পেয়েছি।’ দার্জিলিংয়ের মন্ত্র-য় আমেরিকাবাসী কতটা মন্ত্রমুগ্ধ হন, তা কনসার্টের পরেই বোঝা যাবে।