সুভাষ বর্মন, ফালাকাটা: আলু ও ভুট্টাখেতের চারদিকে আলোর রোশনাই। জ্বলছে ২০০, ১০০ ওয়াটের হ্যালোজেন। ঝুলছে বিদ্যুৎবাহী তার। এরকম আলো দেখলে নাকি হাতি আসে না। হাতির হানা রুখতে এবার তাই জলদাপাড়া বনাঞ্চল সংলগ্ন ফালাকাটার বংশীধরপুরের কৃষকদের এই পদক্ষেপ। কিন্তু এতে হাতি কিংবা অন্য বন্যপ্রাণীর প্রাণহানির আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। বিষয়টি দেখার পাশাপাশি কৃষকদের সচেতন করার আশ্বাস মিলেছে বন দপ্তরের (Forest Department) তরফে। জলদাপাড়ার এডিএফও নবজিৎ দে’র কথায়, ‘এরকম প্রতিরোধ ব্যবস্থা করা একেবারেই ঠিক নয়। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে খতিয়ে দেখছি।’
গ্রামের প্রায় ৫০০ মিটার দূর থেকে বিদ্যুৎবাহী তার টেনে আনা হয়েছে আলুখেতে। বাঁশের খুঁটি লাগিয়ে টানা হয়েছে বিদ্যুৎবাহী তার (Electric Wire)। আর সেই বাঁশের খুঁটির ওপরেই লাগানো রয়েছে হ্যালোজেন বাতিগুলো। কোথাও কোথাও আবার লাগানো আছে বালব। স্থানীয় কৃষকরা জানাচ্ছেন, গত এক সপ্তাহ ধরে প্রায় প্রত্যেক রাতেই জলদাপাড়া বনাঞ্চল থেকে হাতি খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে চলে আসছে৷ শনিবার রাতে বংশীধরপুরের হুরকুর হাটের কাছে হাতির হানা রুখতে আয়োজিত হয় ‘মহাকাল ঠাকুরের’ পুজোর। সেই রাতেই এলাকায় হানা দেয় পাঁচটি হাতি। প্রায় ৫০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়। রবিবার রাতেও বংশীধরপুর হয়ে যোগেন্দ্রনগর, মেজবিলে হাতির তাণ্ডব চলে। তার আগে বংশীধরপুরের তিন-চারজন আলুচাষির খেতে হানা দিয়েছিল হাতি। জানা গিয়েছে, তখনই ওই চাষিরা বাকি আলুখেত রক্ষার জন্য রাতে বাতি লাগানোর ব্যবস্থা করেন।
এক কৃষকের কথায়, ‘দিনকয়েক আগে আমার আলুখেতে হাতি তাণ্ডব চালিয়েছিল। কিন্তু হ্যালোজেন বাতি লাগানোয় এখন আর হাতি ঢুকছে না। আমাদের কষ্ট করে উৎপাদন করা ফসল নষ্ট হচ্ছে না।’ কিন্তু এরকম ব্যবস্থা তো বেআইনি (Illegal)। এতে তো বন্যপ্রাণীর ক্ষতি হতে পারে। জিজ্ঞাসা করায় এক কৃষকের সাফাই, ‘বাতি দেখে তো হাতি এলাকাতেই ঢুকছে না। তাই কোনও বিপজ্জনক ঘটনাও ঘটবে না।’
ফালাকাটা পঞ্চায়েত সমিতির বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ দীপক সরকার জানান, প্রায় প্রত্যেক রাতে লোকালয়ে হাতি আসায় ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। চাষিদের কাছে এটা বড় সমস্যা। এদিকে, দপ্তরে পর্যাপ্ত বনকর্মী নেই। তাই হাতির হানা রুখতে হিমসিম অবস্থা বন দপ্তরের। তাঁর কথায়, ‘এই পরিস্থিতিতে বন দপ্তর ও বন লাগোয়া চাষিদের মধ্যে সমন্বয় সাধনের জন্য বংশীধরপুরে আলোচনা সভা করা হবে৷ এভাবে চাষের জমিতে বিদ্যুৎবাহী তার লাগালে যে কোনও সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। স্থানীয়দের সচেতন হতে হবে।’